বহু অবিবাহিত যুগল একটু নিজেদের মতো করে একাকিত্বে কাটাতে বেড়াতে যান। কিন্তু নানা সময়ে তাঁদের বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। হেনস্থাও করা হয়। বস্তুত, ভারতে অবিবাহিত যুগলদের হোটেল রুম পেতে বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়। কিন্তু প্রশ্ন হল, স্বাধীন দেশে দুই প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের একসঙ্গে হোটেল রুমে থাকায় কেন নানা ঝক্কি? আসলে কিছু নিয়ম মানলে, অশান্তির সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়।
সোশ্যাল মিডিয়ার দাপটে এখন আর ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বলে কিছুই প্রায় অবশিষ্ট নেই। আপনি কোথাও বেড়াতে গেলেন, কোনও হোটেলে উঠলেন—এই খবরও ভাইরাল হয়ে যেতে পারে নিমেষে। বিশেষ করে যদি আপনি ও আপনার সঙ্গী বিবাহিত না হন, তাহলে অনেক ক্ষেত্রেই হোটেল কর্তৃপক্ষ কিংবা স্থানীয় পুলিশ কর্তৃক হেনস্থার মুখে পড়তে হয়।
কলকাতা, মুম্বই, দিল্লি, ব্যাঙ্গালোরের মতো বড় শহরে এখন আর অবিবাহিত যুগলদের হোটেল বুকিংয়ে বেশি সমস্যা হয় না। সেখানে অনলাইন বুকিং অ্যাপ বা ওয়েবসাইটে সহজেই রুম পাওয়া যায়। কিন্তু ছোট শহর বা মফস্সল এলাকায় এখনও অবিবাহিত দম্পতিকে রুম না দেওয়ার প্রবণতা রয়ে গিয়েছে।
ভারতের সংবিধান অনুসারে, ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে থাকা দুটি প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি যদি সম্মতিতে একসঙ্গে সময় কাটাতে চান, তাহলে তাতে আইনগতভাবে কোনও বাধা নেই। কোনও হোটেল মালিক যদি এই কারণে অবিবাহিত যুগলকে রুম না দেন, তাহলে তা আইনত যুক্তিসঙ্গত নয়। হোটেল রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট বা স্থানীয় পুলিশ আইনে এরকম কোনও স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা নেই।
হোটেলে রুম বুক করার জন্য কিছু জরুরি জিনিস আপনার কাছে থাকা বাধ্যতামূলক— দু’জনের প্রমাণপত্র (যেমন ভোটার আইডি, আধার কার্ড, পাসপোর্ট ইত্যাদি)। বয়স ১৮ বছরের বেশি হতে হবে। প্রমাণপত্রে ফটো ও ঠিকানা স্পষ্টভাবে থাকতে হবে
বহু সময় দেখা যায়, যুগলরা হোটেলে রুম চাইতে গিয়ে পরিচয়পত্র জমা দিতে চান না। আবার কখনও কখনও একটি ভুয়ো বা স্পষ্ট নয় এমন আইডি কার্ড দেওয়া হয়। এই ক্ষেত্রে হোটেল কর্তৃপক্ষ রুম দিতে অস্বীকার করতে পারে। কারণ, কোনও অপরাধমূলক কার্যকলাপ হলে পুলিশ তদন্তে প্রমাণ চাইবে, তখন হোটেল কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহি করতে হয়।
তবে যদি আপনি সব শর্ত মেনে রুম চাইলেন, তাও হোটেল মালিক আপনাকে শুধু "অবিবাহিত" বলে রুম না দেন—তাহলে সেটা আপনার নাগরিক অধিকারের লঙ্ঘন। এমন ক্ষেত্রে আপনি কনজিউমার ফোরাম বা স্থানীয় থানায় অভিযোগ জানাতে পারেন।
এটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। অনেক সময় দেখা যায়, পুলিশ হোটেলে গিয়ে অবিবাহিত যুগলদের হয়রানি করছে, তাঁদের পরিবারের ফোন নম্বর চাইছে কিংবা ভয় দেখাচ্ছে। কিন্তু আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে এক্ষেত্রে পুলিশের হস্তক্ষেপের কোনও ভিত্তি নেই।
ভারতের সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্টভাবে জানিয়েছে—প্রাপ্তবয়স্ক দুই ব্যক্তি সম্মতিতে কোথায় যাবেন, কী করবেন—তা তাঁদের মৌলিক অধিকার। হোটেলে উঠলে যদি কোনও বেআইনি কাজ না হয়, তাহলে পুলিশ তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে না, আটকাতেও পারে না।
আপনি শুধু নিজের পরিচয়পত্র দেখিয়ে জানিয়ে দিতে পারেন যে আপনি ১৮ বছরের বেশি এবং হোটেলে বৈধভাবে উঠেছেন। পুলিশের কাছে নিজের ব্যক্তিগত সম্পর্ক বা পরিবারের নম্বর জানানোর কোনও বাধ্যবাধকতা নেই।
বিভিন্ন অনলাইন অ্যাপ যেমন OYO, MakeMyTrip, Agoda ইত্যাদিতে এখন আলাদা করে "couple friendly" হোটেল চিহ্নিত করা থাকে। এই হোটেলগুলো বিশেষভাবে নিশ্চিত করে যে তারা অবিবাহিত দম্পতিদের রুম বুকিংয়ে বাধা দেবে না।
আজকের দিনে দাঁড়িয়ে প্রেম বা সম্পর্ক কোনও অপরাধ নয়। হোটেলে রুম বুকিং করাও নয়। তবে তার জন্য প্রাপ্তবয়স্কতা, সঠিক পরিচয়পত্র, এবং নিয়ম মেনে চলাটা জরুরি। কোনও হোটেল কর্তৃপক্ষ যদি অযৌক্তিকভাবে রুম না দেয়, তাহলে তা আপনি আইনি পথে মোকাবিলা করতেই পারেন।