Kiriteshwari Village, Offbeat Weekend Destination: কেন্দ্রের পর্যটন মন্ত্রকের বিচারে ভারতের সেরা পর্যটন গ্রাম হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে মুর্শিদাবাদের কিরীটেশ্বরী। বাংলার মানুষের কাছে এই খবরটি অত্যন্ত গর্বের। বিষয়টি টুইট করে জানিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ৩১টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল থেকে আসা ৭৯৫টি আবেদনের মধ্যে থেকে সেরা পর্যটন গ্রাম হিসাবে নির্বাচিত হয়েছে কিরীটেশ্বরী।
কিরীটেশ্বরী মন্দিরের অবস্থান ও ইতিহাস:
মুর্শিদাবাদের দহপাড়া রেল স্টেশন থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কিরীটেশ্বরী মন্দির হল একটি অন্যতম শক্তিপীঠ। ভাগীরথী নদীর তীরে এই দেবস্থানে এখানে সতীর মুকুট বা কিরীট পড়েছিল। সেই কারণে এলাকার মানুষ দেবীকে ‘মুকুটেশ্বরী’ বলেও ডাকেন। কিরীটেশ্বরীর প্রাচীন মন্দিরটি ১৪০৫ সালে ভেঙে পড়ে। তার পর ওই পুরনো মন্দিরের সামনেই ১৯ শতকে লালগোলার রাজা দর্পনারায়ণ রায় নতুন মন্দিরটি তৈরি করেন।
শোনা যায়, মুঘল সম্রাট আকবরের থেকে এই মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পান লালগোলার রাজা ভগবান রায়। এই ভগবান রায়ের বংশধর ছিলেন দর্পনারায়ণ। দুর্গা পুজো, কালী পুজো ছাড়াও এখানে মাঘ মাসের রটন্তী অমাবস্যায় দেবী কিরীটেশ্বরীর বিশেষ পুজো হয়। রাজা দর্পনারায়ণের সময় থেকে পৌষ মাসের প্রতি মঙ্গলবার এখানে একটি বিশেষ মেলা বসে যার টানে এখানে ভীড় করেন শ’য়ে শ’য়ে পর্যটক।
কিরীটেশ্বরীতে হিন্দু-মুসলিম ঐক্য:
শেষ বয়সে কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হন মিরজাফর। সে সময় তাঁর বিশ্বাস জন্মায়, দেবী কিরীটেশ্বরীর চরণামৃত খেলে তিনি সেরে উঠবেন। শোনা যায়, কিরীটেশ্বরী মন্দির থেকে আনা চরণামৃত মুখে দেওয়ার পরই মৃত্যু হয় মিরজাফরের। এই মন্দিরে এখনও হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে ভক্তদের ভীড় জমা হয়, দেবী কিরীটেশ্বরীর পুজো হয় মনবাঞ্ছা পূরণের আশায়।
কিরীটেশ্বরী মন্দিরের কাছে থাকার ব্যবস্থা:
কিরীটেশ্বরী মন্দিরের কাছে থাকার তেমন ব্যবস্থা নেই। বহরমপুর বা হাজারদুয়ারি থেকে হোটেল নিয়ে থাকলে সেখান থেকে এখানে সহজেই আসা যায়। বহরমপুর বা হাজারদুয়ারি কাছে প্রচুর হটেল রয়েছে যেখানে ভাড়া মোটামুটি ৫০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে।
কিরীটেশ্বরী মন্দিরে কীভাবে যাবেন?
বহরমপুর বা হাজারদুয়ারি থেকে প্রথমে ভাগীরথী নদীর তীরে ফেরি ঘাটে আসতে হবে। সেখান থেকে নদী পার করে টোটো ভাড়া করে ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই পৌঁছে যাওয়া যাবে কিরীটেশ্বরী মন্দিরে। টোটো ভাড়া মোটামুটি ৮০০-১০০০ টাকা। এই ভাড়ায় একসঙ্গে চারজন যেতে পারেন। তবে একা গেলেও টোটো ভাড়া (রিজার্ভ করে যাওয়ার খরচ) একই পড়বে।
কিরীটেশ্বরী মন্দির ছাড়াও এখানে যা যা দেখার জায়গা আছে:
কিরীটেশ্বরী মন্দির ছাড়াও এখানে এলে কাছেপিঠের মধ্যেই ঘুরে আসতে পারেন বাংলার নবাবদের খোসবাগ, রোশনিবাগ। এছাড়াও, ডাহাপাড়া ধাম ঘুরে আসতে পারেন।
খরচ কত?
কিরীটেশ্বরী মন্দিরে ঘুরতে এসে থাকা-খাওয়া, ট্রেন-টোটোর ভাড়া, নদী পারাপারের খরচ মিলিয়ে মাথাপিছু খরচ (যদি একসঙ্গে চারজন থাকেন) ১,০০০-১,২০০ টাকা।
তাহলে, আর দেরি কেন? সপ্তাহান্তেই ঘুড়ে আসুন সেরা পর্যটন গ্রাম কিরীটেশ্বরী থেকে। মন্দির দর্শণে পূরণ হতে পারে আপনার মনোবাঞ্ছাও।