Lepchakha: আলিপুরদুয়ার থেকে ৩২ কিমি দূরের সান্তালাবাড়ি। দু’পাশে সেগুন আর মেহগনি গাছের জঙ্গল। রেলকর্মী হওয়ার সুবাদে এই পথের কথা আগেই জানতাম। ডান দিকে ঘন জঙ্গলের ভিতর হাতির করিডোর। এখানকার ছোট চেকপোস্টে প্রবেশপত্র দেখিয়ে হাঁটা শুরু করতে হবে বক্সার উদ্দেশে। ৩ কিলোমিটার পর্যন্ত গাড়ি ঢুকতে পারে। তারপর ২ কিলোমিটার হেঁটে যেতে হয়। দু’পাশে শাল, সেগুনের জঙ্গল। মাঝ বরাবর ঢালাই চওড়া রাস্তা।
সদরবাজার পেরিয়ে বক্সাদুয়ার আসতেই নজরে পড়বে বক্সা দুর্গ। এখান থেকে আরও দুই কিলোমিটার লেপচাখা গ্রাম। অনেতে যাঁরা উত্তরবঙ্গের পাহাড়-জঙ্গল দাপিয়ে বেড়ান, তাঁরা মূলত পপুলার ডেস্টিনেশনে ঘুরে বেড়ান। নইলে অফবিট বলতে বোঝেন দার্জিলিং-কালিম্পংয়ের বিভিন্ন গন্তব্য। আলিপুরদুয়ার জেলার এই পাহাড়ি গ্রামে যদি না গেলেন, তাহলে একটা অন্য দিক দেখলেনই না, মিস করলেন। এখানকার সৌন্দর্য দার্জিলিং-কার্শিয়াং-কালিম্পং থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।
সুন্দর বনানীর মধ্য দিয়ে চওড়া পথ। যে কোনও বয়সের মানুষ এ পথে আরামে হাঁটতে পারবেন। পথের মাঝে দু’ধারে নানা রঙের ফুলের গাছ। পথের দু’পাশের দৃশ্য চলার কষ্ট ভুলিয়ে দেয়। ক্লান্তির অনুভবই আসে না। এভাবেই হাঁটতে হাঁটতে কখন পৌঁছে যাবেন লেপচাখা বুঝতেই পারবেন না। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় তিন হাজার ফুট উচ্চতায় বাংলা ও ভুটান সীমান্তের রূপসী গ্রাম, লেপচাখা।
গ্রামটি খাতায় কলমে পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরদুয়ারে অবস্থিত হলেও এটি আদতে একটি ভুটানি গ্রাম। এখানকার সকল অধিবাসীই ডুকপা সম্প্রদায়ের। প্রায় সত্তর-আশি ঘর লোক। আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বাস করেন। এই গ্রামের মানুষের প্রধান জীবিকা হল চাষাবাদ। ভুট্টা, আদা, আলু, বাঁধাকপি, স্কোয়াশ, লেবু ইত্যাদি চাষ হয়। গ্রামের মাঝে তিব্বতি গুম্ফা। চারধারে প্রার্থনা পতাকা। ভুটান পাহাড় দিয়ে ঘেরা ডুয়ার্সের উচ্চ তরাই অঞ্চল। পাহাড়ের ও পাশেই ভুটান। ব্রিটিশরা চলে যাওয়ার পরে চিনা ও তিব্বতিরাও এ সব অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে।
কীভাবে যাবেন?
আলিপুরদুয়ার থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার গিয়ে পৌঁছাবেন সানতালা বাড়ি। আপনাকে এর জন্য রাজাভাতখাওয়া দিয়ে পৌঁছাতে হবে। সেখানে চেকপোষ্টে একটি অনুমতি পত্র নিতে হবে। সবসময় সঙ্গে রাখতে হবে, হারিয়ে ফেললে চলবে না। এবার সানতালা বাড়ি পৌঁছে আরও ১৫ কিলোমিটার গেলে আপনি ভিউ পয়েন্ট পাবেন। সেখানে একটি ছোট পার্ক রয়েছে যেখান থেকে পুরো আলিপুরদুয়ার শহর দেখতে পাবেন।
খরচ কত?
এখানে থাকার জন্য কিছু হোমস্টে ব্যবস্থা করে রেখেছেন এলাকার বাসিন্দারা। এখানের ভাড়া প্রত্যেকদিন ৫০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকার মধ্যে। এখানের বাসিন্দারা খুব তাড়াতাড়ি রাতের খাবার সেরে নেন। তাই এবার ঘুরতে যেতে চাইলে একবার এখন থেকে ঘুরে আসতে পারেন।