পারমাদন ফরেস্টসোম থেকে শুক্র অফিস করে ক্লান্ত। হাঁপিয়ে যাওয়া মন সপ্তাহান্তে দু'দিনের ছুটি চাইছে ঠিকই, কিন্তু এক্ষেত্রে বাধ সাধতে পারে সোমবারের অফিস। এমন কোনও জায়গা চাই, যেখানে শনিবার গিয়ে রবিবারে ফিরে আসা চাই। তবেই জমবে উইকেন্ড। নতুন করে ফুল এনার্জি নিয়ে কাজে যেতে পারবেন আপনিও। কিন্তু কলকাতার ধারে কাছে এমন গন্তব্য কোথায় আছে? যেখানে রহস্য রোমাঞ্চ থেকে শুরু করে আরাম, আবার নৌকাবিহার থেকে শুরু করে জঙ্গল ভ্রমণ সবকিছুই করা যাবে। উত্তর হল হ্যাঁ। কলকাতা থেকে মাত্র ৩ ঘণ্টা দূরে রয়েছে এমন একটি জায়গা। যেখানে গিয়ে প্রাণভরে নেওয়া যাবে বিশুদ্ধ অক্সিজেন।
কোন জায়গার কথা বলা হচ্ছে?
এখানে যে জায়গাটির নাম বলা হচ্ছে সেটি হল পারমাদন ফরেস্ট বা বিভূতিভূষণ অভয়ারণ্য। এর সঙ্গে কম্বো হিসেবে থাকবে নীলকুঠি। উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁয় এই জায়গাটি অবস্থিত। থাকার জায়গা থেকে শুরু করে নির্ভেজাল ছুটি কাটানো- কোনও কিছুরই অভাব হবে না এই সপ্তাহান্তের ভ্রমণে। এটি উত্তর ২৪ পরগনা জেলার একমাত্র অভয়ারণ্য।
কী ভাবে পারমাদন ফরেস্ট/ নীলকুঠি যাবেন?
বনগাঁ থেকে এই জায়গাটির দূরত্ব প্রায় ২৫ কিমি। কলকাতা থেকে মোট দূরত্ব প্রায় ৮০ কিমি। ট্রেনে করে গেলে শিয়ালদা স্টেশন থেকে আপনাকে বনগাঁ লোকাল ধরে পৌঁছতে হবে বনগাঁ স্টেশনে। এরপর টোটো বা অটো করে পৌঁছতে হবে মতিগঞ্জ বাগদা বাসস্ট্যান্ডে ৷ সেখান থেকে দত্তফুলিয়াগামী যেকোনও বাসে চড়ে পৌঁছতে পারমাদন ফরেস্ট৷
এই অভয়ারণ্যে ঢুকতে গেলে বর্তমানে ১২০ টাকার টিকিটের প্রয়োজন রয়েছে। গেটের বাইরেই কাউন্টার থেকে এই টিকিট কাটতে হবে। এরপর শুরু হবে জঙ্গল ভ্রমণ। পায়ে হেঁটেই গভীর জঙ্গলের মধ্যে হবে ঘোরাঘুরি। তবে খুব বেশি প্রাণীর কিন্তু দেখা পাবেন না। বনে রয়েছে কিছু বাঁদর, সামান্য সংখ্যক ময়ূর এবং প্রায় শতাধিক চিত্রা হরিণ। ফটো তোলার আগ্রহ থাকলে বেশ কিছু পাখির ফটোও তুলতে পারেন। জঙ্গলে ঘুরতে ৩-৪ ঘণ্টা সময় লাগবে। এখানে আপনি স্পর্শ পেতে পারেন আদিম অরণ্যের।
নদীর ওপারেই মঙ্গলগঞ্জ- এখানে হবে ভৌতিক অভিজ্ঞতা
পারমাদন ফরেস্ট রয়েছে ইছামতী নদীর তীরে। আর নদীর ওপারেই রয়েছে মঙ্গলগঞ্জ। এই মঙ্গলগঞ্জই হবে আপনার এদিনের রাত্রিবাস। নদীতে থাকা নৌকো করেই ওপারে পৌঁছনো যাবে। সেখানে রয়েছে নীল চাষীদের ওপর ব্রিটিশদের অবর্ণনীয় অত্যাচারের চিহ্ন ধারণ করে-রাখা একটি ভৌতিক ধ্বংসপ্রায় নীলকুঠি। গ্রামবাসীরা অনেকে বলেন, এই নালকুঠি নাকি ভৌতিক। বেশ কয়েকবছর আগে রাতে নাকি আগে অদ্ভূত সব আওয়াজ শোনা যেত নীলকুঠি থেকে।
তবে বর্তমানে নীলকুঠি ঘিরে রয়েছে বেশ কিছু পর্যটক আবাস। টেন্ট থেকে শুরু করে কটেজ -সব কিছুই মেলে সেখানে। এখানে ১০০০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে সহজেই আশ্রয় মিলবে এই জায়গাগুলিতে। রাতে খাবারের ব্যবস্থাও হয়ে যাবে এই টেন্টগুলিতে। রাতে ক্যাম্প ফায়ারের পাশাপাশি থাকবে গাইডের ব্যবস্থাও। সামান্য কিছু পারিশ্রমিকের বিনিময়েই গভীর রাতের অন্ধকারে হ্যারিকেনের আলোয় তিনি নিয়ে যান নীলকুঠির ভিতরে। সেখানে ইংরেজদের নানা অত্যাচারের কাহিনীর পাশাপাশি, কিছু ভৌতিক অভিজ্ঞতার গল্পও শোনাবেন তিনি। ফলে রাতের অন্ধকারে মিলবে ভৌতিক অভিজ্ঞতাও। এরপরে কটেজ ফিরে ঘুমিয়ে পড়তে হবে প্রকৃতির কোলে।
ফেরার পালা
পরের দিন সকালের ব্রেকফাস্টের ব্যবস্থা সাধারণত কটেজগুলি ফ্রি-ই করে দেয়। সেগুলি গলাধঃকরণ করে আবার ফিরে আসতে হবে বনগাঁ। মঙ্গলগঞ্জ থেকে সরাসরি বনগাঁ আসার রাস্তা রয়েছে। এরপর বনগাঁ থেকে ট্রেনে করে ফিরতে হবে কলকাতা। ফলে দুপুর-বিকেলের মধ্যেই ফিরে আসা যাবে কলকাতা।
এই সফরটি একদিকে যেমন ছোট। তেমনই খরচও হবে মাথাপিছু যৎসামান্য। ফলে সপ্তাহান্তে এক রাতের জন্য কোথাও ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান থাকলে আদর্শ হতে পারে বনগাঁর এই বিভূতিভূষণ অভয়ারণ্য বা পারমাদন ফরেস্ট। সঙ্গে উপরিপাওনা হিসেবে থাকবে নীলকুঠিও। যা আগামী বেশ কিছুদিনের জন্য আপনার মন চাঙ্গা করবে।