West Bengal Election 2026: হুগলি নদীর 'গুগলি', কেন পশ্চিমবঙ্গে একটি দেওয়ালে ধাক্কা খাচ্ছে BJP?

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তো ঘোষণাই করে দিলেন, যে ভাবে বিহার হয়ে বাংলায় বয়ে চলেছে গঙ্গা, তেমনই বিজেপি-র জয় পবিত্র গঙ্গা ধরেই এগোচ্ছে ও দিদিকে সাফ করে দেবে। খুব ভাল রূপক, কিন্তু বাস্তবটা কঠিন। রাজনৈতিক বাস্তবটা তো আরও কঠিন। 

Advertisement
হুগলি নদীর 'গুগলি', কেন পশ্চিমবঙ্গে একটি দেওয়ালে ধাক্কা খাচ্ছে BJP?পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন ২০২৬ বিশ্লেষণ
হাইলাইটস
  • নির্বাচন লড়তে বিজেপি খুবই পাকা
  • বাংলায় ভোটারের প্রায় ৩০ শতাংশই মুসলিম
  • বাকি পড়ে থাকা ১৯৪টির মধ্যে প্রায় ১৫০টি আসন জিততে হবে

কিছু মাস পরেই পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন। ২০২৬ দরজায় টোকা দিচ্ছে। নীতীশ কুমারকে সামনে রেখে বিহারে সম্প্রতি জেতার পর বিজেপি একেবারে 'হৃদয় আমার নাচে রে আজিকে, ময়ূরের মতো নাচে রে...'। বিজেপি সত্যিই এখন বিশ্বাস করতে শুরু করেছে, অবশেষে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরানো যাবে ও তৃণমূল কংগ্রেস নামক দুর্গ ভেঙে যাবে। 

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তো ঘোষণাই করে দিলেন, যে ভাবে বিহার হয়ে বাংলায় বয়ে চলেছে গঙ্গা, তেমনই বিজেপি-র জয় পবিত্র গঙ্গা ধরেই এগোচ্ছে ও দিদিকে সাফ করে দেবে। খুব ভাল রূপক, কিন্তু বাস্তবটা কঠিন। রাজনৈতিক বাস্তবটা তো আরও কঠিন। 

ঠিক আছে, মানছি, নির্বাচন লড়তে বিজেপি খুবই পাকা। ক্ষমতা, টাকা, সংগঠন, সব মিলিয়ে যেন স্টেরয়েড খাওয়া ফৌজ। কিন্তু এতটাই কি সোজা ব্যাপার? গঙ্গা যত এগিয়ে চলে, তত গভীর হয়, আর তার নীচের স্রোত উপরের জলের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী হয়।

প্রথমে চলুন, শুরুটা ভূগোল দিয়ে করা যাক। তার সঙ্গে একটু রাজনীতির ট্যুইস্টও। গঙ্গা যখন বিহার ছেড়ে বাংলায় ঢোকে, তার আগে ছোঁয় ঝাড়খণ্ডকে, সেই রাজ্য, যেখানে বিজেপি সবটুকু শক্তি, সবটুকু টাকা, সব রকম কৌশল, যা ছিল সব ঢেলে দিয়েও হেমন্ত সরেনের ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার কাছ থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে আনতে পারেনি। এটাকেই বলে নরম থাপ্পড়। আর গঙ্গা বাংলায় ঢুকলেই কিন্তু বদলে যায়। সে আর গঙ্গা থাকে না। হয়ে যায় পদ্মা, হেসেখেলে ঢুকে পড়ে বাংলাদেশে। ফরাক্কার ফিডার তখন সেই দুর্বল পদ্মার স্রোতকে নিয়ে বানায় হুগলি। এখানেই লুকিয়ে আছে সেই ‘গুগলি’। যেটা বিজেপির কাছে বারবার ধাঁধা হয়ে দাঁড়ায়।

২০২১-এর বিধানসভা, লোকসভা ২০২৪, এমনকী সাম্প্রতিক উপনির্বাচন, সব জায়গাতেই বিজেপি বারবার ‘আউট’ হয়েছে। কারণটা সহজ, বাংলার রাজনৈতিক পিচ একেবারে আলাদা। আঠালো উইকেট, যেখানে বল হঠাৎ দিক বদলে ঘুরে যায়, আর খেলোয়াড় বুঝে ওঠার আগেই স্টাম্প উড়ে যায়।

Advertisement

পশ্চিমবঙ্গে গঙ্গার গতিপথ
পশ্চিমবঙ্গে গঙ্গার গতিপথ

দু নম্বর, জনবিন্যাস। যেটা বিজেপির জন্য যেন ভাগ্যের মোক্ষম টুইস্ট। বাংলায় ভোটারের প্রায় ৩০ শতাংশই মুসলিম। অন্তত ১০০টি আসনে মুসলিম ভোট ঠিক করে দেয় পাল্লা কোনদিকে ঝুঁকবে। আর এবার তাঁরা অতীতের যেকোনও সময়ের তুলনায় অনেক বেশি করে তৃণমূলের দিকে একজোট হয়েছেন। কারণ খুব স্পষ্ট, মুসলিমদের চোখে বিজেপি কোনও ‘বন্ধু’ পার্টি নয়। এছাড়া যেসব নেতার লাগামহীন মন্তব্য, তা পরিস্থিতিকে আরও বিষিয়ে তুলেছে। মুসলিম-বিরোধী মন্তব্যের বাড়বাড়ন্ত, সঙ্গে CAA, NRC, ওয়াকফ বিল, Uniform Civil Code, এই সব আইন বা প্রস্তাব সংখ্যাগরিষ্ঠদের কাছে যতই জনপ্রিয় হোক না কেন, মুসলিম সমাজ এগুলিকে দেখে সরাসরি ‘অ্যান্টি-মুসলিম’ হিসেবে। তার ওপর, ভোটার তালিকার SIR, বিশেষত সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে, মানুষকে একেবারে আতঙ্কিত করে তুলেছে।

মমতা নিজের ইমেজ এমন বানাচ্ছেন, যেন তিনি মা দুর্গার রূপ,  যিনি দিল্লির দৈত্যদের হাত থেকে সন্তানদের রক্ষা করছেন। এ ক্ষেত্রে যদি ধর্মীয় মেরুকরণ সর্বোচ্চ পর্যায়েও পৌঁছয়, বিজেপির কপালে এখানে জোটে শুধুই ছেঁড়া নোট। কারণ বাংলার ভদ্রলোক হিন্দুরা, মানে সেই বুদ্ধিজীবী, একদা বামপন্থী, একটু ‘আমরা তোমাদের চেয়ে বেশি জানি’ টাইপ বুদ্ধিজীবীরা, তাঁরা বিজেপিকে এমনই অপছন্দ করেন যে, কলকাতার ট্যাফিক জ্যামও তাঁদের কাছে তুলনায় সহনীয়। অনেকে তো বহু আগেই দিল্লি, বেঙ্গালুরুতে গিয়ে উঠেছেন, কিন্তু ভোটটা দেন হোয়াটসঅ্যাপে, সেখান থেকেই তাঁরা বাংলার রাজনীতি চালান।

তাহলে বিজেপির হাতে থাকল কারা? নিম্নবর্গ, দলিত, আদিবাসী। এই ‘অদৃশ্য’ ভোটব্যাঙ্ক যাদের নিয়ে প্রতি ভোটে বিজেপি প্রতিশ্রুতির পাহাড় দাঁড় করায়, কিন্তু বাস্তবে তাদের একত্র করা কখনওই ঠিকমতো হয় না। আর কোথাও যদি একটু জমিও পায়, তা-ও বেশিদিন ধরে রাখতে পারে না। ফলে খাঁটি অঙ্ক বলছে, সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে হলে বাকি পড়ে থাকা ১৯৪টির মধ্যে প্রায় ১৫০টি আসন জিততে হবে। এই অবাস্তব স্ট্রাইক রেটের সামনে আছে আরেক দুর্গ, তৃণমূলের বুথ-স্তরের দাদারা। ওই দেওয়ালের পাশ কাটিয়ে এগোনো? সত্যি বলতে, ওটা স্বপ্ন দেখারই সমান। শুভেচ্ছা রইল।

তারপর রয়েছেন খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৪ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকার পরেও মমতা শাসকের আসনে বসাননি। এখনও তিনি বিরোধীর ভূমিকাতেই রয়েছেন। চিরকালীন বিরোধী। বাংলায় তিনি শাসন করলেও, যে ভাবে প্রতিদিন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে লড়াই করেন, তাতে মনে হয় তিনিই একমাত্র বিরোধী। সত্যিকারের বিরোধী। এমনকী রাজ্যেও তাঁর রাগী ভাষা আর আক্রমণাত্মক ভঙ্গি বিরোধী নেত্রীরই আবহ দেয়। MGNREGA, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা, যে প্রকল্পেরই টাকা আটকে যায়, তার দায় দেওয়া হয় ‘প্রতিশোধপরায়ণ মোদী-শাহ’-এর ওপর। ফলে ভোটাররা মাঝে মাঝে দোটানায় পড়ে, আসলে ক্ষমতা কার হাতে? দিল্লির, না দিদির? এই আবেগী বিভ্রান্তিই মমতার সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক ম্যাজিক।

তিনি বাংলার বাঘিনী, বীরাঙ্গনা, দিল্লির হিন্দুত্ববাদী বহিরাগতদের বিরুদ্ধে একা দাঁড়িয়ে রয়েছেন। বাঙালি অস্মিতা আসলে স্টেরয়েড খাওয়া সাব ন্যাশনালিজম। গর্গ চট্টোপাধ্যায়ের কথায় সবাই সায় না-ও দিতে পারেন, কিন্তু ‘বহিরাগত’ এসে হিন্দি–হিন্দু–হিন্দুস্তান চাপিয়ে দিচ্ছে, এই ধারণাটা ভদ্রলোক সমাজে খুব সূক্ষ্মভাবে বাড়িয়ে তোলে। ভদ্রলোক মানে সেই ব্রাহ্মণ–কায়স্থ উচ্চবর্ণ বাঙালি, যাদের আপনি প্রতিদিনই দেখেন, শোনেন। 

বিজেপিকে এখানে দেখানো হয় যেন উত্তর ভারতের আমদানি, না হলে গুজরাতি আমদানি। আর দিদি? তিনি কখনও মন্দিরে মন্ত্র জপেন, নরম হিন্দুত্ব কার্ড খেলেন, আবার মুহূর্তে শাড়ি কানের পেছনে গুঁজে হিজাবের মতো ভঙ্গিতে নামাজের অঙ্গভঙ্গিও করে ফেলেন। মূল অভিনেতাদের থেকেও বেশি নিপুণভাবে। এই গোটা খেলাই চলতে থাকে এমন এক রাজ্যে, যেখানে ৩৪ বছর পরে বামফ্রন্টকে উড়িয়ে দিলেও মনে মনে এখনও বিদ্রোহকেই সবচেয়ে বেশি পুজো কার হয়।

এবার আসা যাক লাল পাড় শাড়ি, ইচ্ছে হলে বড় টিপও বলতে পারেন। সংগঠনগত দিক থেকে তৃণমূল আসলে সেই কমিউনিস্ট ভূত, যে কখনও ঘর ছাড়েনি। সিপিএম যে পাড়া–আড্ডা–দাদা মডেলটা দশকের পর দশক ধরে নিখুঁত ভাবে করেছিল, লোকাল কমিটির দাপট, ছোট এলাকা দখল, পেশিশক্তি, তৃণমূল শুধু পতাকা বদলেছে। ভাঙছে কেন? কাজ তো দারুণই করে। বিজেপির অবস্থা এমন যে, গ্রামাঞ্চলে নিরাপত্তা ছাড়া প্রচারেই নামতে পারে না। শহরে গেলে আবার গঙ্গার পাড়ে ওঠা মাছের মতো অবস্থা।

Advertisement

তৃণমূলের হাতে রয়েছে বুথ এজেন্টদের একটি সেনা। বিজেপি, যে দল পন্না প্রমুখ আর 'মেরা বুথ সব সে মজবুত' বলে সারা দেশ কাঁপায়, বঙ্গে এসে যেন জলছাড়া মাছ। কোথাও লোক কম, কোথাও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, আবার কোথাও সদস্যভর্তি অভিযান নিয়ে ঢিলেমি। শেষমেশ ভরসা রাখল তৃণমূল আমদানির ওপর, কিন্তু ওই আমদানির সঙ্গেই এল বিশাল বড় বড় ইগো, আর দিদি দু’কানে মোচড় দিতেই অর্ধেকেরই তৃণমূলেই ‘ঘর ওয়াপসি’। চূড়ান্ত অপটিক্স-দুর্যোগ! এখন বিজেপি নেমেছে গ্রামীণ স্তরে দল ভাঙানোর খেলায়। কিন্তু রাজ্যের সংগঠনটা একেবারে ‘খিচুড়ি’। কেউ কারও ওপর ভরসা করে না। পুরনো বিজেপি নেতারা সন্দেহ করেন নতুনদের, আর কর্মীরা সন্দেহ করেন দিল্লিই বোধহয় বঙ্গে পুরো মন দিয়ে লড়ছে না। আর সব মিলিয়ে সবচেয়ে বড় সমস্যা, দিদির স্ট্রিট-ফাইটার ক্যারিশমা। তাঁর মতো করে রাস্তায় নাচা, জনসভায় কাঁদা, আর 'বাংলার জন্য লড়ছি' বলে সাধারণ ঘরে বসবাস, এসব কেউ নকল করতে পারে না।

এবার আসা যাক সাম্প্রতিক নির্বাচনের চূড়ান্ত অস্ত্রে, ‘ভাতার রাজনীতি’। যেটাকে প্রধানমন্ত্রী একসময় খুব সিরিয়াস মুখ করে খোঁচা দিয়েছিলেন। কিন্তু সবাই জানে, বিহারে এনডিএ-র ভয়ানক জয়ে জীবিকা দিদি স্কিমের কী ভূমিকা ছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও নিজেদের মতো এক ‘লাডলি বহেনা’ তৈরি করেছেন। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, মাসে হাজার, বারোশো টাকা মহিলাদের অ্যাকাউন্টে ঢুকছে টুকটুক করে। এই টাকা এমন এক ফিল্টার, যা দিয়ে সব কিছুকে ছাপিয়ে যায়, দুর্নীতি, পঞ্চায়েত-পরবর্তী হিংসা। সবই পানসে হয়ে যায়। বিজেপি যতই উন্নয়ন, উন্নয়ন করে গলা ফাটাক, বঙ্গে এসে গলা শুকিয়ে যায়, কারণ কেন্দ্রের টাকা নাকি 'বন্ধ' (পড়ুন: অপব্যবহারের জন্য আটকে রাখা)। আর তৃণমূল তখনই শুরু করে কান্নাকাটি, বলে, দরিদ্র বাংলাকে নাকি ধনী দিল্লি বুলিং করছে!


এখানেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জাদু। তিনি যেন চিরকালই দিল্লির দাদাগিরি আর মোদী-অমিত শাহ জুটির অত্যাচারের ‘চিরশিকার’। বাংলার অসহায় গৌরবকে বিশাল হিন্দুত্বের রথের আঘাত থেকে একাই বাঁচান, এমনই ইমেজ। বিহারে জেতার পর মোদীজি যখন বললেন, এবার বাংলা, তখনই তৃণমূলের স্লোগান, বহিরাগত! একদম ঠিক জায়গায় আঘাত।

তারপর ধরুন, দল থেকে কেউ টেগোর নিয়ে ভুলভাল মন্তব্য করে, কেউ পুজোয় নন-ভেজ স্টল নিয়ে আপত্তি তোলে, তো কেউ একাদশীতে মাছ খাওয়া নিয়ে ধর্মীয় বক্তৃতা শুরু করে। এই ছোটখাটো ভুলগুলিই এতটা বাড়িয়ে দেখানো হবে যে মনে হবে বিজেপি এলেই বাঙালির থালা থেকে মাছ-মাংস ছিনিয়ে নেবে!

মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার মতো পুরনো ভিডিওর কোনও অভাব নেই। যেগুলি দেখে মনে হয় বিজেপি বাঙালির 'খাদ্য-সংস্কৃতি' বুঝতেই পারে না। ভোট এলেই সেগুলি আবার ভাইরাল হবে, এতে কোনও সন্দেহ নেই। এদিকে তৃণমূলের সব নেতা, শীর্ষস্থানীয় নেতা থেকে পাড়ার দাদা, সবাই বক্তৃতা দেবেন খাঁটি স্ট্রিট বাংলায়। আর বিজেপির তারকা প্রচারকরা যখন মাইকে উঠবেন, তখন শোনা যাবে সেই শাখা-গ্রেড হিন্দি। এটাই তাদের সবচেয়ে বড় অসুবিধা। ভাষার ফারাক এতটাই চোখে পড়বে, তৃণমূল সেটাকে চিপে রস বের করে খাবে।

গঙ্গা হয়তো বইছে, কিন্তু বাংলায় ঢুকলে ফরাক্কা ব্যারেজে গতিপথ নিয়ন্ত্রণ করছেন দিদি। বিজেপি উর্বর জমির মাঝখানে পুকুরে পদ্ম ফোটানোর স্বপ্ন দেখতেই পারে, কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস RJD নয়। কংগ্রেস ওখানেও ছিল না, এখানেও নেই।  অমিত শাহ যদি টুপি থেকে হঠাৎ খরগোশ বের করতে না পারেন, তা হলে বাংলা এখনও অধরাই। মোটের ওপর, সবটাই মাছের ঝোল!

Advertisement

বিঃ দ্রঃ - এই প্রতিবেদন লেখকের সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত মতামত। 

POST A COMMENT
Advertisement