টানা চার ম্যাচ হারের পরেও ইস্টবেঙ্গল (East Bengal) কোচের চাকরি যায়নি কার্লেস কুয়াদ্রাতের (Carles Cuadrat)। লাল-হলুদের ইতিহাসে যা বিরল। ডুরান্ড কাপের (Durand Cup) ব্যর্থতার পর আইএসএল-এও টানা দুই ম্যাচ হার। মাঝে এএফসি কাপে আল্টিন আসারের বিরুদ্ধে পরাজয়। সব মিলিয়ে 'প্রফেসর' কুয়াদ্রাত যে বিরাট চাপে তা আর বোলার অপেক্ষা রাখে না। তবে শুধু তাই নয়, তাঁর দল গঠন, রণকৌশল নিয়েও প্রশ্ন উঠে এসেছে। কোন কোন জায়গায় কার্লেস কুয়াদ্রাতের কোচিং নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে?
ফিটনেস সমস্যা
আইএসএল শুরুর প্রায় ৭২ দিন আগে থেকে অনুশীলন শুরু করে দিয়েছে ইস্টবেঙ্গল। তবে ফিটনেস সমস্যা পিছু ছাড়ছে না। কেন? কার্লোস জিমেনেজ কী করছেন? স্ট্রেংথ অ্যান্ড কন্ডিশনিং কোচ হিসাবে এই স্প্যানিশ এবারই লাল-হলুদ শিবিরে এসেছেন। অ্যালবার্ট মার্টিনেজের বদলি হিসাবে তাঁকে এনেছেন কুয়াদ্রাতই। আর মরসুমের শুরু থেকেই একের পর এক চোটে বিপর্যস্ত দল। পাশাপাশি ভাল মানের ফুটবলারও এসেছে লাল-হলুদে। তা হলে কেন চোট সমস্যা?প্রতি ম্যাচেই ৬৫ মিনিটের পরে গোটা মাঝমাঠ উধাও হয়ে যাচ্ছে। হাঁটতে দেখা যাচ্ছে সউল ক্রেসপোদের। যথেষ্ট চিন্তার কারণ। মাদিহ তালাল গত মরসুমের সবচেয়ে বেশি অ্যাসিস্ট করা ফুটবলার। তিনিও হাঁপিয়ে যাচ্ছেন ম্যাচের মাঝেই। গত মরসুমের সঙ্গে এই মরসুমে এত ফারাক কী করে হয়?
নন্দাকুমার কেন দলে?
দলে পিভি বিষ্ণু রয়েছেন। গোলও পাচ্ছেন কলকাতা লিগে। তা হলে কেন বারবার 'আনফিট' নন্দাকুমারকে খেলাচ্ছেন কার্লেস? তা হলে ইয়ুথ সিস্টেমের দরকার কী? নতুন ফুটবলারঠে এলেও তিনি যদি সুযোগ না পান তা হলে সেই প্রতিভা নষ্ট হবে। ম্যাচ হারতে থাকলে এবারেও প্লে অফের আশা পূরন হবে না। তবুও নন্দার উপরেই আস্থা রাখছেন কুয়াদ্রাত। শুধুই কি আস্থাভাজন বলে?
গিল গোল্ডেন গ্লাভস জিতেছেন ২ মরসুম আগে
গোলকিপিং বিভাগেও কুয়াদ্রাতের হাতে বিকল্প রয়েছে। অভিজ্ঞ দেবজিত মজুমদার বসে রয়েছেন ডাগ আউটে। তা হলে কী কারণে বারবার ব্যর্থ হওয়া প্রভসুকান গিলকে কেন সুযোগ দেওয়া হচ্ছে? সেই প্রশ্নের উত্তরও অজানা। প্রভসুকান কেরল ব্লাস্টার্স ম্যাচে যে দু'টো গোল খেয়েছেন দুটোই প্রথম পোস্টে। একজন গোলকিপার প্রাথমিক দায়িত্ব প্রথম পোস্টের বল ক্লিয়ার করা। শুধু তাই নয়, আধুনিক ফুটবলে যেখানে গোলকিপারদের দিয়েই আক্রমণ শুরু হয়, সেখানে প্রায় প্রতিটি বলই তিনি তুলে দিচ্ছেন বিপক্ষের পায়ে। ফলে আক্রমণে ওঠার বদলে আবার ডিফেন্সে মন দিতে হচ্ছে গোটা দলকে।
সাইডব্যাক সমস্যা মেটাতে কেন নেই হীরা?
হীরা মণ্ডল ইস্টবেঙ্গলের সম্পদ হয়ে উঠেছিলেন ২০২১-২২ মরসুমে। ফের লাল-হলুদে ফিরে কলকাতা লিগে দারুণ খেলছেন। তা হলে, কী কারণে তাঁকে রেজস্ট্রেশন করাল না লাল-হলুদ ম্যানেজমেন্ট? দায় কিন্তু গিয়ে পড়ে কার্লেস কুয়াদ্রাতের উপরেই। কারণ, তিনি যে সময় যে ধরণের ফুটবলার চেয়েছেন তা দিয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট। এবারে অন্তত দল নিয়ে অজুহাতের কোনও জায়গা নেই। স্প্যানিশ কোচ নিজেও এটা স্বীকার করে নিয়েছেন। তবুও জয় অধরাই থেকে যাচ্ছে লাল-হলুদের।
কেন রাখা হল ক্লেইটনকে?
৩৭ বছর বয়সী ক্লেইটন সিলভা আজও ইস্টবেঙ্গল দলে। কুয়াদ্রাতের জন্যই তাঁকে রাখতে হয়েছে টিম ম্যানেজমেন্টকে। তাঁর জায়গায় আরও একজন ভাল মানের স্ট্রাইকার সই করাতে পারলে আখেরে দলের লাভ হত। ক্লেইটন দুর্দান্ত সাফল্য এনেছেন দলের জন্য তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে এই মরসুমে দুই ম্যাচে এখনও তাঁর থেকে গোল পাওয়া যায়নি।
কুয়াদ্রাত এই সমস্ত সমস্যা থেকে দলকে উদ্ধার করতে না পারলে যে সমর্থকরা তাঁকে 'প্রফেসর' বানিয়েছেন তাঁরাও ভিলেন বানাতে সময় নেবেন না। যাকে আদর্শ করে কোচিং করাতে চাইছেন কুয়াদ্রাত সেই ট্রেভর জেমস মরগ্যানকেও শুনতে হয়েছে গো ব্যাক ধ্বনি। আর ময়দানি গালাগাল তো আছেই। ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান খুব কঠিন দুই ক্লাব। সাফল্য না পেলে বিরাট বিপদ। সেটা কি বুঝতে পারছেন স্প্যানিশ কোচ? লাল-হলুদ সমর্থকরা তাই বলছেন, 'আর কবে, আর কবে জয় পাবে ইস্টবেঙ্গল...'