২০১০ সালের এলাহাবাদ হাইকোর্টের এবং ২০১৯ সালের সুপ্রিম কোর্টের রায় সন্দেহাতীতভাবে সাব্যস্ত করেছে, যে জমিতে তথাকথিত বাবরি মসজিদ ছিল সেটি এক বা একাধিক হিন্দু মন্দিরের উপর প্রতিষ্ঠিত। এবং সেই জমিতেই রাম জন্মভূমি ট্রাস্ট মন্দির নির্মাণ করতে পারে। এর ফলে দীর্ঘকাল ধরে এই সৌধটি নিয়ে যে বিতর্ক চলছিল তার সমাধান হয়েছে। এখন রাম লাল্লার মন্দির নির্মিত হয়েছে। যার উদ্বোধন করবেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী, ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের ২২শে। কিন্তু মূল বিতর্কের সমাধান হলেও কিছু আনুষঙ্গিক বিতর্ক থামেনি। এবং তার মধ্যে প্রধান একটি অভিযোগ, ইতিহাস মুছে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে।
ইতিহাস মুছে ফেলা নিশ্চয়ই অনুচিত। কিন্তু, ভারতে এই ধরণের প্রচেষ্টা নতুন নয়। যেমন, পূর্ববাংলা থেকে হিন্দুদের উৎখাত করার ইতিহাস মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু, সেই সঙ্গে মনে রাখতে হবে, ইতিহাসকে বিদ্যমান রাখলেও দেশের মাটিতে বিদেশী শক্তির বিজয়ের চিহ্ন টিকিয়ে রাখার কোনও যুক্তি নেই। বাবর এবং তাঁর সেনাপতি মীর বাঁকি, যাঁরা এই মন্দিরের জমির উপর মসজিদ তৈরি করেছিলেন বলে কথিত, তিনি কোনও অর্থেই ভারতীয় ছিলেন না। উজবেকিস্তানের ফারগানা থেকে এসেছিলেন। এই ধরণের বিজয়ের চিহ্ন কোনও আত্মসম্মানসম্পন্ন দেশ রাখে না।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ইউরোপে পোল্যান্ড ও বাল্টিক সাগর তীরবর্তী যে সব অঞ্চল একদা জার্মানির অংশ ছিল, বা নাৎসি জার্মানি দ্বারা বিজিত হয়েছিল সেই সব অঞ্চলে জার্মান অবস্থানের কোনও চিহ্ন সেই সব দেশ রাখেনি। নামগুলোও বদলে দিয়েছে। বিশ্ববিখ্যাত জার্মান দার্শনিক ইমানুয়েল কান্ট-এর জন্মভূমি ক্যোনিগসবার্গ শহরের নাম এখন কালিনিনগ্রাদ, সেটা রাশিয়ার অংশ। সেখানে কান্টের স্মৃতিতে একটি ফলক ছাড়া কিছু অবশিষ্ট নেই। যদিও কান্ট সেখানকারই মানুষ ছিলেন। কোনও অর্থেই বিদেশী ছিলেন না।
(লেখক দুধকুমার মণ্ডল। এই বক্তব্য একান্তই তাঁর। bangla.aajtak.in-এর দায়িত্ব নেবে না।)