Manmohan Singh: মনমোহনের সমর্থনকে গুরুত্বই দেননি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, ফল ভুগেছিল বামেরা

প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ডঃ মনমোহন সিং-কে এক কথায় বললে: 'একজন নিপাট ভদ্রলোক।' ১৯৯৩ সাল, অমৃতবাজার পত্রিকায় আমি তাঁকে প্রথম দেখেছিলাম। খবরের কাগজের মালিকরা কংগ্রেসী ঘরানার ছিলেন। আমি সেখানে ট্রেনি রিপোর্টার ছিলাম। এখনও মনে আছে, ডঃ সিং হাত ভাঁজ করে নিউজরুমের মধ্যে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন।

Advertisement
মনমোহনের সমর্থনকে গুরুত্বই দেননি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, ফল ভুগেছিল বামেরাপি ভি নরসিমা রাও চিনের দেং শাও পিং-এর থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েছিলেন। আর মনমোহন সিং সেটাকে বাস্তবায়িত করেছিলেন। 

প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ডঃ মনমোহন সিং-কে এক কথায় বললে: 'একজন নিপাট ভদ্রলোক।' ১৯৯৩ সালে অমৃতবাজার পত্রিকায় তাঁকে প্রথম দেখি। খবরের কাগজের মালিকরা কংগ্রেসী ঘরানার ছিলেন। আমি তখন ট্রেনি রিপোর্টার। এখনও মনে আছে, ডঃ সিং বুকে হাত ভাঁজ করে নমস্কারের ভঙ্গিতে নিউজরুমের মধ্যে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন।

অনেকে ডঃ সিংকে 'অর্থনৈতিক সংস্কারের জনক' বলেন। এটা ভুল। রাজনৈতিক সিদ্ধান্তগুলি প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী পি ভি নরসিমা রাও নিয়েছিলেন। পি ভি নরসিমা রাও চিনের দেং শাও পিং-এর থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েছিলেন। আর মনমোহন সিং সেটাকে বাস্তবায়িত করেছিলেন। ডঃ সিং কিন্তু কখনই এই সংস্কারের কৃতিত্ব দাবি করেননি। তিনি পার্টি লাইন উপেক্ষা করেই পি ভি নরসিমা রাও-এর প্রশংসা করেছিলেন। এটাই ছিল ডঃ সিং-এর মহত্ত্ব।

তিনি কখনই লাইমলাইট দখলের চেষ্টা করেননি। কেউ জানতই না যে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন, তাঁর এক বোন কলকাতায় থাকতেন। একদিকে, ২০০৪-২০০৯-এর অর্থনৈতিক বুমের জন্য তাঁর প্রশংসা প্রাপ্য। আবার অন্যদিকে পাকিস্তানের মদতে মুম্বইতে ২৬/১১-র জঙ্গি হামলার পর নীরবতার জন্য তাঁর সমালোচনাও প্রাপ্য। ইউপিএ সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে দেশের অর্থনীতি প্রায় তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিল। দেশ থেকে বিনিয়োগ(FDI) বেরিয়ে যাওয়ায় অর্থনীতি চরমভাবে প্রভাবিত হয়েছিল। 
 
ডঃ সিং নিজে সততার প্রতীক ছিলেন। কিন্তু তাঁর সরকারের আমলেই একের পর এক কেলেঙ্কারি দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছে। কড়া হাতে শাসন করায় ছিল তাঁর দুর্বলতা। আর সেই কারণেই তাঁর সরকারের সুনাম নষ্ট হয়েছিল। উত্তর-পূর্ব থেকে তিনি রাজ্যসভায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। ত্রিপুরাকে তিনি ৭৩৬ মেগাওয়াটের ওএনজিসি ত্রিপুরা পাওয়ার কোম্পানি উপহার দেন। এই অঞ্চলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো প্রকল্পের বাস্তবায়নে তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের ব্যাপার হল, তাঁরই দলের স্থানীয় বিরোধিতার জন্য সেগুলির রূপায়ন বাধাপ্রাপ্ত হয়।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ডক্টর সিং-এর আর পশ্চিমবঙ্গের বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সরকারের মেয়াদকাল প্রায় একই ছিল। সেই সময় রাজ্যে সরকারি ও বেসরকারি খাতে একের পর এক বড় বিনিয়োগ কেন্দ্রের আশীর্বাদ ছাড়া সম্ভবই ছিল না। যদিও রাজ্য এই বিনিয়োগের প্রতি সুবিচার করতে পারেনি।

Advertisement

স্থানীয় রাজনৈতিক বিরোধিতার কারণে পেট্রোলিয়াম, কেমিক্যালস অ্যান্ড পেট্রোকেমিক্যাল ইনভেস্টমেন্ট রিজিয়ন (PCPIR) বা পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়নি। তবে অন্ডালে দেশের প্রথম গ্রিনফিল্ড বেসরকারি বিমানবন্দর তৈরি হয়। এছাড়াও, স্টিল অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (SAIL) বার্নপুর এবং দুর্গাপুরে প্রচুর বিনিয়োগ করে।

তবে পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট সরকার কেন্দ্রের এই সমর্থনকে গুরুত্বই দেয়নি। বরং তারা ধরে নিয়েছিল, এটা তাদের প্রাপ্য। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এক জনসভায় বলেছিলেন, 'কেন্দ্রকে উঠতে বললে উঠবে, বসতে বললে বসবে।' এই অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের চরম ফল পেয়েছিল বামেরা। ২০০৮ সালে বাম রাজনীতির অন্তঃসারশূন্যতা প্রকাশ্যে তুলে ধরেন ডঃ সিং। বামেরা এখনও সেই ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারেনি।

POST A COMMENT
Advertisement