আজ এখানে ভোট। ভোট বলতেই আমরা ভারতীয়রা যে ছবি দেখতে সাধারণত অভ্যস্ত, সেই ছবি কিন্তু আমেরিকায় নেই। আর চার-পাঁচটা কাজের দিনের মতোই আজেকরও দিনটা। অফিস খোলা। সকলেই নিজের কাজে ব্যস্ত। ভোট বলে যে ছুটির মেজাজ, তা কিন্তু নয়। অফিসের ফাঁকে সকলেই এখানে ব্রেক নিয়ে ভোট দিয়ে আসেন। ভারতে ভোটে যেমন নিরাপত্তার ছবি দেখতে আমরা অভ্যস্ত, এখানে কিন্তু সেই অর্থে তেমন নিরাপত্তার বালাই নেই। সবটাই শান্তিুপূর্ণ ভাবে চলে। তবে যেসব প্রদেশে বেশি টক্কর, সেখানে নিরাপত্তাবলয় একটু থাকে হয়তো। আমাদের নিউ জার্সিতে তেমন ছবি নেই। আর পাঁচটা দিনের মতোই স্বাভাবিক।
এবার ভোটে কমলা হ্যারিসের ডেমোক্র্যাট ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের রিপাবলিক দলের মধ্যে বেশ কিছু অ্যাজেন্ডা রয়েছে। যে অ্যাজেন্ডাগুলি এবার নির্বাচনে ফ্যাক্টর হতে পারে। কমলা হ্যারিসের অ্যাজেন্ডার মধ্যে রয়েছে হেল্থ কেয়ার। ডেমোক্র্যাটরা সাধারণত সাধ্যের মধ্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়ার পক্ষে। ২০৫০ সালের মধ্যে ওরা দূষণ মুক্ত করতে চায়। সেই সঙ্গে গ্রিন এনার্জি টেকনোলজির পক্ষে। ওদের আর একটা প্রধান অ্যাজেন্ডা হল, ইকোনমিক ইক্যুয়েলিটি আনা। মহিলাদের অধিকারের বিষয়টিও একটা ফ্যাক্টর। কারণ কমলা হ্যারিস নিজে একজন মহিলা। সেইসঙ্গে উনি ভারতীয় বংশোদ্ভূত। বিশেষত, অনেক মহিলা ভোটার ওঁর পক্ষে। আর একটা বড় বিষয় হল, গান কন্ট্রোল। ওরা চায়, বেশি করে গান কন্ট্রোল করা হোক। ইমিগ্রেশন রিফর্ম করতে চায় ওরা।
ট্রাম্পের অ্যাজেন্ডাগুলির মধ্যে অন্যতম হল আমেরিকা ফার্স্ট ইকনোমি পলিসি। মেক ইন আমেরিকা গড়ার লক্ষ্য রিপাবলিকানদের। রিপাবলিকানরা সীমান্ত সুরক্ষা সুনিশ্চিত করতে চান। সীমান্তে ইমিগ্রেশন কন্ট্রোল করাও লক্ষ্য। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে ফ্রি মার্কেট চায় ওরা। এবার নির্বাচনে বড় বিষয় হল গর্ভপাত আইন। রিপাবলিকানরা চান, গর্ভপাত বন্ধ করা হোক। কিন্তু ডেমোক্র্যাটদের দাবি হচ্ছে, ওভাবে বন্ধ করা যায় না। এখন দেখার ভোটাররা কী চান।
এখানে সবাই সরকারি স্কুলে যায়। ভারতের মতো প্রাইভেট স্কুলের কনসেপ্ট নেই এখানে। সরকারি স্কুলই ভাল। ট্রাম্প চাইছেন, স্কুলে ফ্রি চয়েস করা হোক।
এবার বলা যাক প্রবাসী ভারতীয়দের কথা। যাঁরা প্রবাসী ভারতীয়, তাঁরা ট্রাডিশনালি ডেমোক্র্যাটিক। তবে গত দু'বার নির্বাচনের ধারা দেখলে সেই প্রথা ভেঙেছে। প্রবাসী ভারতীয়দের মধ্যে রিপাবলিক ও ডেমোক্র্যাটিকদের সমর্থনের ব্যবধান কমেছে। এবার ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী জিতলে হেলথ কেয়ারে ভাল হবে। যদিও ভারতীয়দের ক্ষেত্রে তার কোনও প্রভাব পড়ে না। কারণ অধিকাংশ ভারতীয়ই চাকরিরত। তাঁরা সংস্থা থেকে সুবিধা পান। ভারতীয়দের বেশি মাথাব্যথা ইমিগ্রেশন পলিসি নিয়ে। এখানে যেসব ভারতীয়রা ভোট দেন, আর যাঁরা ভোট দিতে পারেন না, এই দুইয়ের মধ্যে ফারাক রয়েছে। যাঁরা ভিসাতে রয়েছেন, তাঁরা ইমিগ্রেশন নিয়ে যতটা ভাবছেন, যাঁরা নাগরিকত্ব পেয়েছেন, তাঁরা আর সেটা নিতে অতটা ভাবছেন না। ফলে এক্ষেত্রে প্রার্থীকে সমর্থনের দিকটি পাল্টে যেতে পারে। ফলে অ্যাজেন্ডা অনুযায়ীই প্রবাসীরা প্রার্থীকে বেছে নেবেন।
এখানে একটা বড় ফ্যাক্টর হল হাউসিং। ট্রাম্প জিতলে রিপাবলিকানরা লেস রেগুলেশন ফলো করেন। আর ডেমোক্রেটিকরা রেগুলেশনের পক্ষে। সেক্ষেত্রে বিটকয়েন, ব্যাঙ্কিং স্টক ডেমোক্রেটিকদের অধীনে ভাল হয় না। ফলে আর্থিক বিষয় নিয়ে যাঁদের বেশি মাথাব্যথা, তাঁরা ট্রাম্পের পক্ষে।
আসলে যেসব ভারতীয়রা আমেরিকায় আসেন, এখানকার রাজনীতি নিয়ে তাঁদের খুব একটা ধারণা থাকে না। যখন কেউ নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেন, তখনই তাঁরা আমেরিকান রাজনীতি নিয়ে সচেতন হন। তার আগে নয়। আমার মনে হয়, যেসব ভারতীয় নতুন এসেছেন আমেরিকায়, তাঁরা ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে। তবে ভোটে তার কোনও প্রভাব পড়ে না। কারণ, তাঁদের ভোট দেওয়ার অধিকার নেই। যাঁরা ভিসাতে রয়েছেন, তাঁরা সবসময় ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে। ডেমোক্র্যাট পলিসি অনেকটাই ইমিগ্রেশন ফ্রেন্ডলি। তবে ট্রাম্পকে নিয়ে হয়তো অনেকের মনে আশঙ্কা রয়েছে। কারণ গতবার অনেক ভিসা বাতিল হয়েছিল। আমি ১৮ বছর ধরে আমেরিকায় রয়েছি। আমার মনে হয়, প্রবাসী ভারতীয়রা ডেমোক্র্যাটদের পক্ষেই। এবার দেখা যাক, ভোটের ফল কী হয়, সারা দুনিয়ার মতো সেদিকে তো চোখ রাখছিই আমরা।