ছোটবেলার হাওয়াই মিঠাই হারিয়ে গিয়েছে চিপস কুরকুরে ও ক্যাডবেরিতে। তাই যে হাওয়াই মিঠাই এর নাম শুনলেই একসময় অনেকের শিশুবেলার কথা মনে পড়ে যেত। এখন সাইকেল নিয়ে শহর ও গ্রামের অলি গলিতে ঘুরে ঘুরে হাঁক ছাড়লেও আসে না শিশুরা। হাওয়াই মিঠাই মেশিন ঘুরিয়ে নরম তুলোর মত গোলাপি, সাদা রঙের হালকা মিঠাই তৈরি করে দেন। এখন শিশুরা মায়ের কাছে তা কেনার জন্য বায়না ধরে না। কারণ এই হাওয়াই মিঠাই এখন তাদের কাছে প্রায় ব্রাত্য বললেই চলে। তাই এখন হাওয়াই মিঠাই বলে ডাক ছাড়লো গ্রাম-শহরের শিশুরা তা কিনতে আসে না। ফলের সংসার চালানো মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে নজরুল মোমিনের।
নজরুল মোমিন। বাড়ি মালদা জেলার ইংরেজবাজার থানা সাতট্টারি এলাকায়। এক সময়ে এই হাওয়াই মিঠাইয়ের কদর ছিল যথেষ্ট। আর যার ফলে গ্রাম থেকে শহর এবং পাড়াগাঁয়ে হাওয়াই মিঠাই বলে হাঁক ছাড়ল এই শিশুরা দৌড়ে আসতো তা কিনতে। বর্তমানে দিন পাল্টেছে। পাল্টেছে শিশুদের মন। আর যার ফলে এখন এই হাওয়াই মিঠাই বিভিন্ন মেলাতেও বিক্রি করতে দেখা যায় না।
ফলে সেই সময় হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করে সংসার চালাতে শুরু করে নজরুল। ধীরে ধীরে এটাই তার প্রধান পেশা হয়ে দাঁড়ায়। গ্রাম থেকে শহরে সাইকেলে ঘুরে হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করে কিছুটা হলেও রোজগারের মুখ দেখছেন। কিন্তু দিন দিন সেই চাহিদা কমতে থাকায় বিক্রিয় কমে গিয়েছে তার। ফলে তিনি হাওয়াই মিঠাই বিক্রি ছেড়ে দিয়ে ভিন রাজ্যের শ্রমিকের কাজের জন্য পাড়ি দেন।
কিন্তু করোনা পরিস্থিতি তার সেই স্বপ্ন বাদ সাধে। করোনা ও বিধি নিষেধের কারণে বছর খানেকের বেশ সময় বাড়িতেই বসে আছেন। রোজগারের জমানো টাকা ও প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছে। বাধ্য হয়ে আবার সাইকেলে হাওয়াই মিঠাই তৈরি সরঞ্জাম নিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন নজরুল। ইংরেজবাজারের শহর ও গ্রামের অলিগলি ঘুরে হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করছেন।
হাওয়াই মিঠাইয়ের কোনটার দাম ৫ টাকা আবার কোনোটা ১০ টাকায় বিক্রি করছেন। আর তা বিক্রি করে দিনে ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা আসে। তবে আগের মত আর সেই হাওয়াই মিঠাই বিক্রি হয় না। অভাবের সংসার চালাতে বাধ্য হয়ে এই কাজ করতে হচ্ছে তাকে। এদিকে আধুনিক যুগের রংবেরঙের রেপারে মুরা চকলেট,কুরকুরে,চিপস মন কেড়েছে শিশুদের। ফলে শিশুদের আর হাওয়াই মিঠাই কেনার জন্য ভিড় করছে না। শহরের এক বাসিন্দা মামনি ঝা জানান, এক সময় আমরা ছোটবেলায় এই হাওয়াই মিঠাই খাওয়ার জন্য বড়দের কাছ থেকে বায়না ধরতাম। বর্তমানে ছোট শিশুরা বিভিন্ন রকমের চকলেট চিপস মন সন্তুষ্ট করে। ফলে সেই ভাবে হাওয়াই মিঠাই এর দিকে তাদের নজর যায় না। তবে বিভিন্ন মেলায় হাওয়াই মিঠাই পাওয়া যায় তবে তা এখন শিশুরা আর খেতে চায় না।
নজরুল জানান, এক সময় এই হাওয়াই মিঠাই তার প্রধান পেশা ছিল। এরপর এই হাওয়াই মিঠাইয়ের বিক্রি কমে যাওয়ার কারণে ভিন রাজ্যের শ্রমিকের কাজ যেতে হয়েছিল। করোনাকালে তাকে বাড়িতে ফিরে আসতে হয়। জমানো টাকা শেষ হওয়ায় সংসার চালাতে আবার এই হাওয়াই মিঠাই বিক্রির কাজ করতে হচ্ছে। তবে এর চাহিদা যথেষ্টই কমেছে। কিন্তু কোন উপায় নেই সংসার চালাতে পেট চালাতে তো হবেই। সেই কারণে এখন গ্রাম শহরের অলিগলিতে এই হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করতে হচ্ছে।