মানুষের সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু হয়ে উঠতে পারে পোষ্যরাই। তালিকায় সবচেয়ে এগিয়ে থাকবে কুকুরই। চারপেয়ী এই জীব খুব সহজেই মানুষের সঙ্গে বন্ডিং তৈরি করে ফেলতে পারে। কিন্তু পথকুকুরদের কাছে কামড় খেয়ে খারাপ অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছেন, এমন সংখ্যাও নেহাত কম নয়। এবার পথকুকুরদের নিয়ে বড় পদক্ষেপ সুপ্রিম কোর্টের।
রাত-বিরেতে পাড়ার কুকুরের ঘেউ ঘেউ চিৎকার অথবা বাইকের পিছু দৌড় লাগানোর মতো সমস্যার সম্মুখীন হয়নি, এমন মানুষ হয়তো হাতে গোনা। বহু তল্লাটেই এমন অনেক ঘটনার কথা শোনা যায়। সেই পথকুকুর নিয়ে সমস্যা গুরুতর হিসেবে চিহ্নিত করেছে দেশের শীর্ষ আদালত।
রাস্তায় বেরিয়ে যদি কখনও কুকুরের তাড়া খান সেক্ষেত্রে সরাসরি কুকরের চোখের দিকে তাকাবেন না। রাস্তার কুকুর যদি আপনাকে দেখে চেঁচাতে শুরু করে সেক্ষেত্র আপনি চোখে চোখ রেখে সরাসরি কুকুরের দিকে তাকানো এড়িয়ে চলুন। না হলে তারা হুমকি ভেবে আরও বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠতে পারে। আপনি শান্ত থাকুন এবং অবশ্যই পালানোর চেষ্টা করবেন না। তাতে বিপদ বেশি বই কম হবে না।
দূরত্ব বজায় রাখুন। কারণ রাস্তার কুকুর শুধু চেঁচায় না, কামড়ও দিতে পারে। তাই এসব কুকুর দেখলে দূরত্ব বজায় রেখে চলুন। এতে সহজে আপনাকে আক্রমণ করতে পারবে না।
দৌড়াবেন না। অনেকেই কুকুর চেঁচাতে শুরু করলেই দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। এটি একদম ভুল! এ সময় ভুলেও দৌড়ানো উচিত না। আপনি যদি দৌড়াতে শুরু করেন, তাহলে ক্ষিপ্ত হয়ে কুকুরও আপনার দিকে ছুটে আসবে।
সুরক্ষার জন্য হাতে কিছু রাখুন। কুকুর থেকে সুরক্ষিত থাকার জন্য চেষ্টা করুন হাতে লাঠি রাখতে। কুকুর খুব ক্ষিপ্ত হয়ে আপনার দিকে আসতে চাইলে লাঠি দিয়ে আঘাতের ভঙ্গি করতে পারেন। এতে কুকুর দাঁড়িয়ে পড়বে।
স্বতঃপ্রণোদিত মামলায় রাজধানী দিল্লির পথঘাট সারমেয়শূন্য করার নজিরবিহীন নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। সোমবার বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা ও বিচারপতি আর মহাদেবনের বেঞ্চের নির্দেশ, দিল্লি NCR এলাকায় কোনও পথকুকুর আর থাকতে পারবে না। এদেরকে ধরে শহরের বাইরে শেল্টারে পাঠাতে হবে। এর জন্যে আট সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছে দিল্লি NCR এবং দিল্লি নগর নিগম কর্তৃপক্ষকে।
এই নির্দেশ কার্যকরী করার পথে কোনও ব্যক্তি বা সংগঠন বাধা দিলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপেরও বেনজির হুঁশিয়ারি দিয়েছে শীর্ষ আদালত। কুকুরদের কামড়ের আশঙ্কা থেকে নাগরিকদের রক্ষা করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
এদিন সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্ন, ‘তথাকথিত পশুপ্রেমীরা কি কুকুরের কামড়ে মৃত শিশুদের ফিরিয়ে দিতে পারবেন? বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করেই পদক্ষেপ করতে হবে। বৃহত্তর জনস্বার্থে সক্রিয় হতে হবে।’ আদালত প্রশ্ন তোলে, শহরের যেখান থেকে কুকুরদের তোলা হচ্ছে, নির্বীজকরণের পরে আবার তাদের সেই সব এলাকায় ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে কেন? শুধু পথকুকুরদের টিকা দেওয়া বা নির্বীজকরণ নয়, আদালতের মুল্য লক্ষ্য, কুকুরের কামড়ের ভীতি দূর করে শিশু, কিশোর–কিশোরীদের রাস্তায় বেরোনো নিশ্চিত করা। এই পদক্ষেপে বাধা পড়তে পারে, এমন কোনও রকম আবেগকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
২০২৪ সালে দেশে ৩৭ লক্ষেরও বেশি কুকুরের কামড়ের ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে প্রায় ৫ লক্ষ শিশু। শুধুমাত্র দিল্লিতে প্রতিদিন গড়ে ২,০০০ কুকুরের কামড়ের ঘটনা ঘটছে। এক সপ্তাহের মধ্যে কুকুরের কামড় সংক্রান্ত অভিযোগের জন্য হেল্পলাইন চালুর নির্দেশ দিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত। সুপ্রিম কোর্টের এই পদক্ষেপে সমাজে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সারমেয়প্রেমীরা উদ্বেগ প্রকাশ করলেও অনেকে মনে করছেন, মানুষের নিরাপত্তা ও জনস্বাস্থ্য রক্ষায় এই ব্যবস্থা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।