ভারত অফিসিয়ালি স্বাধীনতা পেয়েছিল ১৯৪৭ সালের ১৫ অগাস্ট। দেশজুড়ে গর্বের সঙ্গে পালন হয় এই ঐতিহাসিক দিনটি। কিন্তু জানেন কি, পশ্চিমবঙ্গের দুটি জেলা ওই দিন স্বাধীনতা পায়নি। ওই দুই জেলা স্বাধীন হয়েছিল ১৯৪৭ সালের ১৮ অগাস্ট।
আসলে এর মূলে ছিল দেশভাগ। ভারতের ইতিহাসে অন্যতম জটিল ও রক্তক্ষয়ী চ্যাপ্টার বলা যায়।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারতের বিভাজনের সময় সীমান্ত কমিশনের মানচিত্রগত ভুল ও র্যাডক্লিফ লাইন চূড়ান্ত করতে বিলম্বের কারণে নদিয়া জেলার কিছু এলাকা প্রথমে ভুলবশত পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমানে বাংলাদেশ) অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। পরে সংশোধন করে সেগুলি ভারতের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
বাংলার এই দুই জেলা নদিয়া ও মালদার কিছুটা অংশ। ১৯৯১ সাল থেকে এই দুই জেলার মানুষ ১৮ অগাস্টকেও স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করেন।
অর্থাত্ ১৫ অগাস্টে মালদা ও নদিয়ায় গোটা দেশের সঙ্গে স্বাধীনতা দিবস পালিত হলেও ১৮ অগাস্টও এই দুই জেলায় স্বাধীনতা দিবস পৃথক ভাবে পালন করা হয়।
দেশভাগের সময় র্যাডক্লিফ লাইন মেনে ভারত ও পাকিস্তানের বিভাজন করা হয়েছিল। এই সীমান্তরেখার ভুলের ফলে নদিয়া জেলার কয়েকটি এলাকা, যেখানে মূলত হিন্দু জনসংখ্যা বেশি ছিল, ভুলবশত পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।
এই ভুল স্থানীয় মানুষের মধ্যে সঙ্গে সঙ্গে অশান্তি ও আতঙ্ক সৃষ্টি করে, কারণ তাঁরা নিজেদের ভবিষ্যৎ ও নিরাপত্তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছিলেন।
নদিয়া জেলার বড় অংশের মানুষ, বিশেষ করে প্রভাবশালী পরিবার ও রাজনৈতিক নেতারা পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্তির তীব্র বিরোধিতা শুরু করেন। এই বিরোধিতার খবর পৌঁছয় ব্রিটিশ ভাইসরয় লর্ড মাউন্টব্যাটেনের কানে।
তিনি নির্দেশ দেন, র্যাডক্লিফ লাইনের ভুল সংশোধন করার জন্য। ১৯৪৭ সালের ১৭ অগাস্ট রাতে ওই ভুল শুধরে দেওয়া হয়েছে বলে ঘোষণা করা হয়। ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয় নদিয়া ও মালদার একটি অংশ।
সীমান্ত সংশোধনের পর নদিয়ার ওইসব এলাকায় তোলা পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে দেওয়া হয়, আর ১৯৪৭ সালের ১৮ আগস্ট সেখানে উত্তোলন করা হয় ভারতের জাতীয় পতাকা। সেই থেকেই ওই সব এলাকার স্থানীয়রা ১৮ অগাস্টকেই তাঁদের স্বাধীনতা দিবস হিসেবে মানেন।
আজও ১৮ অগাস্টের স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপন স্থানীয় মানুষের ইতিহাস ও পরিচয়ের গভীর বন্ধনকে প্রতিফলিত করে। এই দিনটি দেশভাগ ও স্বাধীনতার জটিল এবং বেদনাদায়ক ইতিহাসের এক স্মারক হিসেবেও রয়ে গিয়েছে।