scorecardresearch
 

Best Paan Shops In Kolkata: এসেছিলেন স্বয়ং উত্তম কুমার, মহম্মদ রফি, এগুলোই কলকাতার সেরা পান দোকান

এখন আর আদ্দিকালের চুন, সুপুরি, খয়ের, মৌরির মধ্যে সীমাবন্ধ নেই। এখন বাজারে পাওয়া যায় নানা ধরনের পান। চকোলেট পান, আইসক্রিম পান ইত্যাদি। কোনও কোনও জায়গায় আবার ফায়ার পানও বিক্রি হয়।

Advertisement
কলকাতার সেরা পান দোকান কলকাতার সেরা পান দোকান
হাইলাইটস
  • পানও আজকাল নিজের ভোল বদলে ফেলেছে
  • এখন বাজারে পাওয়া যায় নানা ধরনের পান

একসময় একান্নবর্তী বাঙালি বাড়িতে দুপুরের খাওয়া মিটলে বাড়ির মহিলারা এক জায়গায় গোল হয়ে বসতেন পান (Paan) সাজতে। বিরাট পানের ডিব্বা (Paan Dibba), তার মধ্যে ছোট ছোট কৌটতে ভরা চুন, সুপুরি, খয়ের, মৌরি। নাম ধরে ধরে চলত পান বানানো। কারও পানে থাকবে বেশি সুপারি (Supari), কারও পানে একটু খয়ের ও চুন কম। সব একেবারে হিসেব করে। নানা মশলা সহযোগে তৈরি হত পানের খিলি। তারপর টুক করে মুখে চালান করে দেওয়া হত। অন্য অনেক জিনিসের মতো পানও বাঙালির নস্টালজিয়া। পান এসেছে সংস্কৃত শব্দ ‘পর্ণ’ থেকে, যার অর্থ পাতাবাঙালির পানে ভক্তি নিয়ে নানা মুনির নানা মত। কেউ কেউ বলেন, ব্রহ্মা তুষ্ট সুপারিতে, বিষ্ণু পানে এবং মহাবেদ চুনে। আর পানের খিলিতেই বাস করেন মহাদেব।

আসলে প্রতিটি গর্বিত বাঙালির খাবার খাওয়ার পর পান ছিল প্রিয়। তবে একান্নবর্তী পরিবারের সংখ্যা এখন হাজারে একটা মেলে। তাই পানের মেলা আর বসে না বাড়ির বারান্দায়। তবে, পান মুছে যায়নি বাঙালির প্রেমের তালিকা থেকে। পানও আজকাল নিজের ভোল বদলে ফেলেছে। এখন আর আদ্দিকালের চুন, সুপুরি, খয়ের, মৌরির মধ্যে সীমাবন্ধ নেই। এখন বাজারে পাওয়া যায় নানা ধরনের পান। চকোলেট পান, আইসক্রিম পান ইত্যাদি। কোনও কোনও জায়গায় আবার ফায়ার পানও বিক্রি হয়। পান হয়ত তার রাজকীয় মনোযোগ ধরে রাখতে পারেনি, কিন্তু এটি বাঙালিদের মধ্যে অন্যভাবে আবারও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আজ আমরা কলকাতার কয়েকটি পানের দোকানের খোঁজ (Best Paan Shops In Kolkata) দেব। সেগুলির কয়েকটিতে আজও ঐতিহ্যগত পান পরিবেশন করা হয়। মুখকে সুন্দর করে তুলতে সমস্ত ধরণের উপাদান মোড়ানো এই পান আপনাকে একবার খেতেই হবে। আবার কয়েকটি দোকানে নতুন আঙ্গিকে পান পরিবেশন করা হয়।

Advertisement

আরও পড়ুন: Best Fish Fry In Kolkata: এক কামড়েই বুঝবেন ভেটকি! কলকাতার সেরা ফিশ ফ্রাইটা কোথায় মেলে? রইল

কল্পতরু ভান্ডার (Kalpataru Bhandar): আজ কলকাতা শহরের প্রতিটি পাড়া এবং প্রতিটি কোণে পানের দোকান রয়েছে। তাদের মধ্যে সবচেয়ে নামকরা হল ৯২ বছরের পুরনো কল্পতরু ভান্ডার। এই দোকানটি কলেজ স্ট্রিটে অবস্থিত। খিলি পানের জন্য জনপ্রিয় এই দোকানটি। একটি পান এতই সূক্ষ্ম যে এটি প্রায় মুখের মধ্যে গলে যায় এবং দীর্ঘস্থায়ী সুবাস ছড়িয়ে দেয়। ৫ টাকা থেকে ১০০০ টাকার পান পাওয়া যায় এখানে। পানের মশলা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসে, আরিকা বাদাম আসে অসম এবং চেন্নাই থেকে। ভুবনেশ্বর থেকে পান আনা হয়। বাংলাদেশ থেকে চলে আসার পর রাধা বিনোদ দত্ত দোকানটি স্থাপন করেছিলেন। ভিন্ন ভিন্ন সময়ে এই দোকানে পান খেতে এসেছিলেন মহানায়ক উত্তম কুমার, দিলীপ কুমার, প্রয়াত সংগীত শিল্পী মান্না দে এবং প্রয়াত অভিনেতা ভানু বন্দোপাধ্যায়ের মতো ব্যক্তিত্ব।

তাজমহল পান শপ (Taj Mahal Paan Shop): আপনি যদি কখনও বিরিয়ানি খাওয়ার জন্য আমিনিয়া হোটেলে যান, তবে এই ছোট আউটলেট থেকে সুস্বাদু পান খেতে ভুলবেন না। মহম্মদ রফির গানের সুরের সঙ্গে একটা মিঠাপাতা পান মুখে চালান করতে আপনার বেশ লাগবেই। তাজমহল পান শপ প্রায় ৮০ বছরের পুরনো। এই দোকানের পানের প্রেমে আজও মজে বাঙালি। একসময় এই দোকানে পান খেতে এসেছিলেন মহম্মদ রফি ও লতা মঙ্গেশকর। সেই থেকেই এই দোকানে সব সময় বাজে রফির গান।

শিবুজি (Shibuji Pann Shop): শেক্সপিয়ার সরণির এই দোকানটি কলকাতার মানুষের কাছে একটি সাধারণ শব্দবন্ধ হয়ে উঠেছে। চেরি-টপড বিশেষ গুন্ডি পান পরিবেশন করে, শিবুজির নিখুঁত ফ্যান বেস রয়েছে, যা কলকাতার অন্য কোনও পানওয়ালার নেই। বৃদ্ধ বাঙালি অভিজাতদের মনে শিবুজির পানের প্রতি আলাদা একটা মোহ রয়েছে। কারণ এর বিশেষ মশলা পান মুখে লেগে থাকে। পান না খেলেও এই দোকানটিকে একবার অবশ্যই ঘুরে যাবেন।

লক্ষ্মণের পান (Laxman Pan Stall): যদি কোনও কিছু তার সৌন্দর্য এবং স্বাদের জন্য একইভাবে বিখ্যাত হয়, তবে তা হল লক্ষ্মণ পানের দোকান। শৈল্পিক প্রকৃতির জন্য এই দোকানটি বেশ বিখ্যাত। মধ্যরাতে বাঙালির প্রিয় মাউথ-ফ্রেশনার অফার করতে পরিচিত এই দোকান। চূর্ণ বরফের টুকরো এবং গোপন মশলা এবং পুদিনা দিয়ে ভরা বিখ্যাত বরফের পানের স্বাদ নিতে এখানে ভিড় করে আট থেকে আশি। শরৎ বোস রোডের এই পান দোকানটি চার দশকেরও বেশি পুরনো। নানা রকমের, নানা স্বাদের পান পাবেন এখানে। আইস পান ছাড়াও এখানকার চকলেট পানও অবশ্যই মুখে দিয়ে দেখবেন।

শ্রী পান ধাবা (Shree Paan Dhaba): ভবানীপুরের হরিশ মুখার্জী রোডের এই আউটলেটটি পান প্রেমীদের জন্য একটি ফাঁদ - আপনি আপনার ইচ্ছায় এখানে আসতে পারেন কিন্তু পান আপনাকে কিছুতেই যেতে দেবে না। পানের এত সম্ভার যে কোনটা ছেড়ে কোনটা খাবেন, তা ঠিক করতেই সময় চলে যাবে। আবার পান না খেয়ে বাড়ি ফিরতেও মন চাইবে না। তবে আমরা বলছি এখানে গেলে অবশ্যই চকোলেট পান ট্রাই করুন।

Advertisement

পরশুরাম শাহ (Parshuram Sah): গড়িয়াহাট রোডের ধারে অনেক পানের দোকানের মধ্যে পরশুরাম শাহর পানের দোকান খুবই জনপ্রিয়। ১৯৭৪ সাল থেকে এই দোকানটি পথচলা শুরু করে।

শিবশঙ্কর বেনারসি পান ভান্ডার (Shivsankar Banarasi Paan Bhandar): বিবেকানন্দ রাডের এই দোকানটি ১৯৬০ সাল থেকে সুগন্ধি পান পরিবেশন করে আসছে। এখানে আপনি বেনারসি পান পাবেন। যা আপনার মুখে চিরকাল লেগে থাকবে। এদের বেনারসি পান চিবিয়ে আপনি খেতেই পারবেন না। মুখে দিলেই গলে যাবে।

চৌরাসিয়া পান শপ (Chaurasia Paan Shop): সল্টলেক সেক্টর ওয়ানের এই দোকানটি ইদানিং এক ধরনের ল্যান্ডমার্ক হয়ে উঠেছে যে এলাকার আশপাশের প্রায় সবাই একনামে চেনেন। ১৫ বছরের পুরনো পানের দোকানটি সল্টলেকের BF এবং CF ব্লকের মধ্যে সুইমিং পুলের কাছে অবস্থিত। এই দোকানটি বেশিরভাগই মিঠা পান বিক্রি করে, তবে সিঙাড়া পান, আইস পান, চকোলেট পান এবং গুন্ডি পানও সমানে জনপ্রিয়। এখানে প্রায় সমস্ত পান তৈরিতে একটি বিশেষ বেনারসি কাথা এবং হীরা মতি মশলা ব্যবহার করা হয়।

Advertisement