Durga Puja 2025: মিথের সঙ্গে মিশে ইতিহাসও, বাংলার সতীপীঠগুলিতে কেমন হয় দুর্গাপুজো?

Sati Pith Durga Puja: বাংলার বুকে ছড়িয়ে রয়েছে এমন বহু সতীপীঠ, যেগুলিতে দুর্গাপুজো ঘিরে জমে ওঠে ভক্তির মহোৎসব। দেবী এখানে কেবলমাত্র শক্তির প্রতীক নন, তিনি পরিণত হন জননীতে, সংসারের দেবী রূপে।

Advertisement
মিথের সঙ্গে মিশে ইতিহাসও, বাংলার সতীপীঠগুলিতে কেমন হয় দুর্গাপুজো?মিথের সঙ্গে মিশে ইতিহাসও, বাংলার সতীপীঠগুলিতে কেমন হয় দুর্গাপুজো?

দুর্গাপুজো শুধু পুজো নয়, এটা উৎসব। তার চেয়েও বড় এটা বাংলার সংস্কৃতি। দেবী দুর্গার আর এক রূপ সতী। যিনি সতীরূপে তপস্যা করেছিলেন, তিনিই পরজন্মে গিরিপুত্রী পার্বতী হয়ে পুনর্জন্ম নেন মহাদেবের স্ত্রীরূপে। তাই দুর্গাপুজোর সঙ্গে সতীপীঠের সম্পর্কও আত্মিক।

বাংলার বুকে ছড়িয়ে রয়েছে এমন বহু সতীপীঠ, যেগুলিতে দুর্গাপুজো ঘিরে জমে ওঠে ভক্তির মহোৎসব। দেবী এখানে কেবলমাত্র শক্তির প্রতীক নন, তিনি পরিণত হন জননীতে, সংসারের দেবী রূপে।

বক্রেশ্বর
বীরভূম জেলার প্রাচীনতম সতীপীঠগুলির মধ্যে অন্যতম বক্রেশ্বর। এখানে সতীর ভ্রু-এর মধ্যস্থল, অর্থাৎ "মন" পতিত হয়েছিল। দেবী পূজিতা হন মহিষমর্দিনী রূপে। ইতিহাস ও পুরাণ মিলিয়ে বক্রেশ্বর হয়ে উঠেছে তীর্থযাত্রীদের গন্তব্য। অষ্টাবক্র মুনির আশ্রম ও দর্শনীয় উষ্ণ প্রস্রবণগুলি বক্রেশ্বরের আকর্ষণ আরও বাড়িয়েছে।

সকালে পুজো, সন্ধ্যায় আরতিতে মেতে ওঠেন স্থানীয় বাসিন্দা থেকে শুরু করে দূরদূরান্তের দর্শনার্থীরা। বিশেষ ভোগ ও প্রসাদ বিতরণ চলে একাধিক দিনে।

বহুলা

পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামে অবস্থিত বহুলা সতীপীঠ। কথিত আছে, এখানে সতীর বাম বাহু পতিত হয়েছিল। দেবী এখানে চতুর্ভুজা, পদ্মাসনে আসীন। এক পাশে স্বামী মহাদেব, অন্য পাশে পুত্র গণেশ। যিনি এখানে অষ্টভুজা রূপে পূজিত। দুর্গাপুজোর সময় বহুলা মন্দির হয়ে ওঠে আঞ্চলিক ভক্তদের মিলনক্ষেত্র।দশমীর আগে প্রতিদিন সন্ধ্যা আরতিতে মন্দির প্রাঙ্গণ মুখর হয়ে ওঠে ঢাকের বাদ্য আর শঙ্খধ্বনিতে। বহু পরিবার এখানে বংশানুক্রমে আসেন পুজো দিতে।

বর্গভীমা
তমলুক শহরের একদম কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত শক্তিপীঠ বর্গভীমা মন্দির, যেখানে সতীর বাম পায়ের গোড়ালি পড়েছিল বলে শাস্ত্রে উল্লেখ। এখানকার দুর্গাপুজো ঘিরে আজও অটুট রয়েছে রাজবাড়ির প্রথা— প্রথম পুজো আসে রাজপরিবারের পক্ষ থেকেই।

তমলুকবাসীর বিশ্বাস, যত মণ্ডপেই পুজো হোক না কেন, আগে পুজো দিতে হবে মা বর্গভীমাকে। সেই বিশ্বাস নিয়েই পুজিত হয়ে চলেছেন মা ভীমা, বছরের পর বছর ধরে। পুজোর দিনগুলোয় ভোরবেলা থেকেই মন্দির প্রাঙ্গণে শুরু হয় ভক্তদের ভিড়। বিসর্জনের আগের রাত পর্যন্ত চলে আলোকসজ্জা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ও বিশেষ ভোগ বিতরণ।

Advertisement

ধর্মের সঙ্গে মিশে আছে ইতিহাসও
এই সতীপীঠগুলির পুজো একাধারে শাস্ত্রাচার ও লোকাচারের সমন্বয়। দেবী এখানে শুধুমাত্র শক্তির প্রতীক নন, তিনিই মা, সংসারের আশ্রয়, এবং আধ্যাত্মিক শক্তির উৎস। দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে তাই বাংলার সতীপীঠগুলি হয়ে ওঠে আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক মিলনমঞ্চ।

আপনি যদি এবারের পুজোয় ভিন্ন স্বাদের কোনও গন্তব্য খুঁজে থাকেন, তাহলে একবার ঘুরে আসতে পারেন এই সতীপীঠগুলির কোনও একটিতে। দর্শন যেমন হবে, তেমনই মনের মধ্যে জেগে উঠবে প্রাচীন আস্থা, ইতিহাস আর ভক্তির গভীর ছোঁয়া।

 

POST A COMMENT
Advertisement