পিতা প্রজাপতি দক্ষর মুখে স্বামীর অপমান শুনে দেহত্যাগ করেছিলেন দেবী সতী। আর সেই সতীর দেহ কাঁধে নিয়ে প্রলয়নৃত্য শুরু করেছিলেন ভগবান শিব। মহাদেবের প্রলয় নৃত্যে যখন জগৎ সংসার ধ্বংস হওয়ার উপক্রম, তখন নিজের সুদর্শন চক্র দিয়ে সতীর দেহ খণ্ড-বিখণ্ড করেছিলেন ভগবান বিষ্ণু। পরবর্তী সময়ে সেই সতীই পার্বতী রূপে গিরিরাজ হিমালয়ের ঘরে অবির্ভূতা হন। সেই দিক থেকে দেখতে গেলে যিনি সতী, পরজন্মে তিনিই পার্বতী।
সতীর দেহাংশ যে সমস্ত জায়গায় পড়েছিল, সেই সব স্থানগুলি সতীপীঠ হিসেবে পরিচিত। এই বাংলাতেও রয়েছে বেশকিছু সতীপীঠ (Sati Pith)। তারমধ্যে এমন কয়েকটি সতীপীঠ রয়েছে যেগুলিতে অত্যন্ত জাঁকজমকের সঙ্গে আয়োজিত হয় দুর্গাপুজো। সমাগম হয় হাজার হাজার ভক্তের। তাই আসন্ন দুর্গাপুজোয় দর্শন করে আসতে পারেন আপনিও।
বক্রেশ্বর - বাংলার সতীপীঠ গুলির মধ্যে অনেকগুলিই রয়েছে বীরভূম জেলায়। আর সেগুলির মধ্যে অন্যতম বক্রেশ্বর (Bakreswar Temple)। সতীর ভ্রু যুগলের মধ্যস্থল অর্থাৎ মন পড়েছিল এখানে। দেবী এখানে মা মহিষমর্দিনী দুর্গা। খুবই ধুমধামের সঙ্গে এখানে দেবীর আরাধনা করা হয়। সঙ্গে চলে প্রসাদ বিতরণ। বক্রেশ্বর মন্দিরের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে অষ্টাবক্র মুনির কাহিনী। এছাড়াও বক্রেশ্বরে রয়েছে মোট ৮টি কুণ্ড, যেগুলি আসলে উষ্ণ প্রস্রবণ। সেই কুণ্ডগুলিতে স্নান করলে নানা রোগের থেকে মুক্তি মেলে বলেই বিশ্বাস ভক্তদের।
বহুলা - পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামে অবস্থিত বহুলা মন্দির (Bahula Temple)। এখানে সতীর বাম বাহু পড়েছিল বলে শোনা যায়। দেবী এখানে চতুর্ভুজা ও পদ্মের ওপর বিরাজমান। দেবীর এক পাশে পতি ও অন্যপাশে পুত্র গণেশ। আর সেই গণেশ এখানে অষ্টভুজ। বহুলা মন্দিরে সারাবছর বিভিন্ন পুজো পার্বন লেগে থাকলেও এখানকার সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপুজো। তাই দুর্গাপুজো উপলক্ষে বহু ভক্তের সমাগম ঘটে মন্দিরে।
বর্গভীমা - পূর্ব মেদিনীপরে তমলুক শহরে অবস্থিত বর্গভীমা মন্দির (Bargabhima Temple)। শোনা যায় এখানে সতীর বাম পায়ের গোড়ালি পড়েছিল। এখানেও মহাসমারোহে দুর্গাপুজোর আয়োজন করা হয়। দুর্গোৎসবের আজও সময় রীতি মেনে প্রথম পুজো আসে রাজবাড়ি থেকেই। তমলুকবাসীর বিশ্বাস শহরের যেখানেই শক্তির আরাধনা হোক না কেন, আগে পুজো দিতে হবে মা বর্গভীমাকে। আর সেই বিশ্বাস নিয়েই আজও পূজিতা হয়ে চলেছেন মা বর্গভীমা।
আরও পড়ুন - একমাসের অপেক্ষা, বুধের গোচরে ৫ রাশির বিপুল অর্থলাভের সম্ভাবনা