Host-Directed Antiviral Therapy, IISER: ভাইরাসের যে কোনও রূপান্তরকেই রুখবে এই ওষুধ, বাঙালি বিজ্ঞানীর হাত ধরে যুগান্তকারী আবিষ্কারের পথে ভারত। ভারতীয় বিজ্ঞানীরা এমন এক ওষুধ ও তার প্রয়োগ পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন যা শরীরে ইনফ্লুয়েঞ্জা বা কোভিড ভাইরাসের (SARS-CoV-2, influenza virus) বাড়-বৃদ্ধি গোড়াতেই রুখে দেবে। ফলে ইনফ্লুয়েঞ্জা বা কোভিড ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিকে সহজেই সুস্থ করে তোলা সম্ভব হবে, কমবে মৃত্যুর ঝুঁকিও। এই আবিষ্কার পরবর্তিতে ভাইরাসের চিকিৎসায় গোটা বিশ্বকে পথ দেখাবে বলে আশা ভারতের গবেষক-বিজ্ঞানীদের।
বাঙালি বিজ্ঞানীর হাত ধরে যুগান্তকারী আবিষ্কার:
এই গবেষণা মোহালির ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ-এর (IISER)। এই গবেষণায় IISER-এর ডঃ ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায় ও রোপার-এর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (IIT Ropar)-র ডঃ প্রবাল বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে রয়েছেন CSIR-IMTECH আর IISc Bangalore-এর বিজ্ঞানীরাও। IISER মোহালির নেতৃত্বে এই চার সংস্থা একত্রে এই গবেষণাটি চালিয়েছে। মোহালির ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ-এর (IISER) অধ্যাপক, ভাইরাস বিশেষজ্ঞ ডঃ ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Dr Indranil Banerjee) নেতৃত্বে ওঁনারই Ph.D. ছাত্র নির্মল কুমার এই গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন।
আরও পড়ুন: COVID টিকায় ব্যবহৃত 'অ্যাডেনো' ভ্যারিয়েন্টই এখন ঘাতক? বিশেষজ্ঞরা যা জানাচ্ছেন...
গবেষণাপত্রটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন
হোস্ট-ডাইরেক্টেড থেরাপি:
IISER-এর ভাইরাস বিশেষজ্ঞ ডঃ ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায় bangla.aajtak.in-কে বলেন, “এই গবেষণায় ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে একটি নতুন পদ্ধতি আমরা অবলম্বন করেছি, যাকে বলা হয় 'হোস্ট-ডাইরেক্টেড থেরাপি'। ইনফ্লুয়েঞ্জা বা কোভিড ভাইরাসের (influenza virus, SARS-CoV-2) সংক্রমণ রোখার জন্য বাজারে যে ওষুধগুলি ব্যবহৃত হয়, সেগুলি সবকটাই সরাসরি ভাইরাসকে লক্ষ্য করে বানানো। কিন্তু ভাইরাসের রূপান্তর বা মিউটেশন খুব স্বাভাবিক একটা ব্যপার। তাই, মিউটেশনের ফলে নতুন কোনও ভাইরাল স্রেইন এলে, বাজারে চলতি অ্যান্টিভাইরাল ওষুধগুলি রূপান্তরিত নতুন বৈশিষ্টযুক্ত ভাইরাসকে প্রতিহত করতে ব্যর্থ হতে পারে। একে বলা হয় অ্যান্টিভাইরাল রেসিস্ট্যান্ট (antiviral resistance)। ইনফ্লুয়েঞ্জা বা কোভিড ভাইরাসকে (influenza virus, SARS-CoV-2) যে সব ওষুধ সাধারণত ব্যবহার করা হয়, তাদের প্রায় সবকটির বিরুদ্ধেই রেসিস্ট্যান্ট ভাইরাস স্রেইনের খোঁজ মিলেছে, যা আগামী দিনে ভাইরাস সংক্রমণ রোখার ক্ষেত্রে খুবই উদ্বেগজনক বিষয়। কিন্তু আমাদের আবিষ্কৃত এই ওষুধগুলি কাজ করে ভাইরাসকে অকেজো করতে নয়, শরীরের কোষে ভাইরাসের ‘এন্ট্রি পয়েন্ট’-এই ভাইরাসকে আটকে দিতে। ফলে, সংক্রমণের গোড়াতেই ভাইরাসের বাড়-বৃদ্ধি রুখে দেওয়া যাচ্ছে। যেহেতু আমাদের আবিষ্কৃত ওষুধগুলি হোস্ট সেলকে টার্গেট করে ভাইরাস সংক্রমণ রুখতে সক্ষম, তাই আমরা আশা করি SARS-CoV-2 বা ইনফ্লুয়েঞ্জার নতুন কোনও স্ট্রেইন এলেও এই থেরাপির মাধ্যমে রুখে দেওয়া সম্ভব হবে। এই পদ্ধতিকে 'হোস্ট-ডাইরেক্টেড থেরাপি' বলা হয়। আমরা গবেষণা করে দেখেছি, আমাদের আবিষ্কৃত ওষুধগুলি SARS-CoV-2 বা ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রায় সবকটি স্রেইনকেই প্রতিহত করতে সক্ষম।”
ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে হোস্ট-ডাইরেক্টেড থেরাপি কতটা কার্যকর?
ডঃ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “গবেষণার প্রাথমিক পর্যায়ে আমরা পশুর শরীরে এই থেরাপি কাজে লাগিয়ে সফল ভাবে ভাইরাসের সংক্রমণ রুখে দিতে পেরেছি। আমরা দেখেছি, প্রায় ৯৭-১০০ শতাংশ ক্ষেত্রেই শরীরে ভাইরাসের সংক্রমণ সম্পূর্ণ রুখে দিতে পেরেছে এই পদ্ধতি। গবেষণার এই অভাবনীয় ফলাফল পরবর্তিতে সাফল্যের ইঙ্গিত দিচ্ছে। মানুষের শরীরেও ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে হোস্ট-ডাইরেক্টেড থেরাপি সফল হতে পারে বলে আমরা আশাবাদী। পরবর্তী পর্যায়গুলিতে এই গবেষণার সাফল্যের হার যদি এই রকম থাকে, তাহলে ভাইরাসের যে কোনও রূপান্তরকেই রুখে মানুষের প্রাণ বাঁচাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে পারে আমাদের এই আবিষ্কার।”
কবে নাগাদ ভাইরাসের চিকিৎসায় এই ওষুধ-থেরাপি উপলব্ধ হবে?
ডঃ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এখনও এই গবেষণাটি একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। গবেষণার ফলাফল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ! তবে ভাইরাসের চিকিৎসায় এই ওষুধ বা থেরাপি কবে চালু হবে, তা এখনই বলা সম্ভব নয়। বর্তমানে নানা ভাইরাসের বাড়বাড়ন্তে চিন্তা বাড়াচ্ছে সাধারণ মানুষ থেকে চিকিৎসকদের। তবে আমরা আশা করি যে, ভবিষ্যতে এই ওষুধ আর থেরাপির সাহায্যে ভাইরাসের যে কোনও রূপান্তরকেই রুখে দিয়ে বাঁচানো যাবে লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণ।”