scorecardresearch
 

Uttam Kumar: 'ফ্লপ মাস্টার' টিটকিরিতে অভিনয় ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন উত্তম

প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘দৃষ্টিদান’ থেকে ‘সঞ্জীবনী’ (১৯৫২) অবধি পরপর সাতটি ছবি ফ্লপ করার পর উত্তম তখন অভিনয় ছেড়ে দেওয়ার কথা ভেবেছিলেন। ‘ফ্লপ মাষ্টার জেনারেল’ তকমায় বিদ্রুপ আর টিপ্পনিতে বিপর্যস্ত। সেই সময় নির্মল দে পরিচালিত ‘বসু পরিবার’ (১৯৫২) মুক্তি পেল। সেখান থেকেই ঘুরে দাঁড়ালেন উত্তম।

Advertisement
উত্তম কুমার উত্তম কুমার
হাইলাইটস
  • ‘দৃষ্টিদান’-এ (১৯৪৮) তিনি নায়ক অসিতবরণের ছোটবেলার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন।
  • সেখানে টাইটেল কার্ডে তাঁর নামই ছিল না।
  • ‘দৃষ্টিদান’ থেকে ‘সঞ্জীবনী’ (১৯৫২) অবধি পরপর সাতটি ছবি ফ্লপ করার পর উত্তম তখন অভিনয় ছেড়ে দেওয়ার কথা ভেবেছিলেন।

নায়ক থেকে মহানায়ক হয়ে ওঠার রাস্তায় কতটা বাধা পেরতে হয়েছিল উত্তম কুমারকে তার সম্যক ধারণা হয়তো অনেকেই করতে পারবেন না। প্রথম জীবনে কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টে কেরানির চাকরি করতে হয়েছিল তাঁকে। কারণ সংসারের দায়ভার তাঁর কাঁধেই এসে পড়েছিল। বাড়ির বড় ছেলে হিসাবে সেই দায়িত্ব তুলে নিয়েছিলেন। চাকরির পাশাপাশি 'সুহৃদ সমাজ' নাট্যগোষ্ঠীতে তিনি অভিনয়ও করতেন। এটি ছিল তাঁদের পারিবারিক নাটকের গ্রুপ। নীতিন বসু পরিচালিত মায়াডোর নাটকে তিনি সকলের নজর আকর্ষণ করেন। এর পর তাঁরই পরিচালনায় 'দৃষ্টিদান' ছবিতে ১৯৪৮ সালে চলচ্চিত্র জীবন শুরু করেন উত্তম।

‘দৃষ্টিদান’-এ (১৯৪৮) তিনি নায়ক অসিতবরণের ছোটবেলার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। সেখানে টাইটেল কার্ডে তাঁর নামই ছিল না। দ্বিতীয় ছবি ‘কামনা’ (১৯৪৯) থেকেই অবশ্য তিনি নায়ক। সেখানে টাইটেল কার্ডে নাম দেখা গেল ‘উত্তম চ্যাটার্জি (অ্যাঃ)।’ ছবি চলল না। পরের ছবি ‘মর্যাদা’তে (১৯৫০) নাম নিলেন ‘অরূপ কুমার।’ এ ক্ষেত্রেও ভাগ্য পরিবর্তন হল না। মুখ থুবড়ে পড়ে ছবিটি। পরের ছবি ‘ওরে যাত্রী’তে (১৯৫১) আবারও ‘উত্তম চ্যাটার্জি’ হয়ে ফিরলেন। পরের ছবি ‘সহযাত্রী’ (১৯৫১) থেকে তিনি হলেন উত্তম কুমার। কিন্তু সাফল্য আসতে সময় লেগেছিল আরও কিছুদিন।

নিজে ভালো গান করতেন। আর গানে ঠোঁট নাড়ানোর ব্যাপারে উত্তমকুমারের অনন্যতা যে কিংবদন্তীস্বরূপ, তা সকলেই জানেন। এ বিষয়ে প্রথম বলেছিলেন চিত্র পরিচালক নির্মল দে। তাঁকে সিনেমার পর্দায় উত্তম কুমারের ‘জন্মদাতা’ বলা হয়। কারণ প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘দৃষ্টিদান’ থেকে ‘সঞ্জীবনী’ (১৯৫২) অবধি পরপর সাতটি ছবি ফ্লপ করার পর উত্তম তখন অভিনয় ছেড়ে দেওয়ার কথা ভেবেছিলেন। ‘ফ্লপ মাষ্টার জেনারেল’ তকমায় বিদ্রুপ আর টিপ্পনিতে বিপর্যস্ত। সেই সময় নির্মল দে পরিচালিত ‘বসু পরিবার’ (১৯৫২) মুক্তি পেল। সেখান থেকেই ঘুরে দাঁড়ালেন উত্তম।

Advertisement
দেয়া নেয়া ছবিতে উত্তম কুমার

বাণিজ্যিকভাবে চূড়ান্ত অসফল এক অভিনেতাকে কেন তাঁর ছবিতে নিলেন নির্মল বাবু, সেই ঘটনায় আসা যাক। তখন ‘সঞ্জীবনী’ ছবির কাজ চলছে। এম পি প্রোডাকশন্সের ছবি। উত্তম, নির্মল দে দু’জনেই তখন এম পিতে ছিলেন। ‘সঞ্জীবনী’-তে অনুপম ঘটকের সুরে শৈলেন রায়ের কথায় সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া গান ছিল ‘চাঁদের বেণু বাজবে এবার…।’ একদিন স্টুডিয়োতে বসে আপনমনেই গানটা গাইছিলেন উত্তম। নির্মল দে কাছাকাছিই ছিলেন। তাঁর কানে এল উত্তমের সুরেলা গলা আর চোখে পড়ল মুখের নাটকীয় অভিব্যক্তি ও আত্মমগ্নতার রূপ। ঠিক করলেন নিজের প্রথম পরিচালিত ছবি ‘বসু পরিবার’–এ বড়োভাই সুখেনের চরিত্রে কাস্ট করবেন উত্তমকে।

এই সিদ্ধান্তে অনেকেই নাক সিঁটকেছিলেন। কিন্তু নির্মলবাবুর যুক্তি ছিল, ‘ও যখন গাইছিল, সুর, ছন্দ আর কথার সঙ্গে সঙ্গে ওর অভিব্যক্তি বদলাচ্ছিল। আমি সেটাই লক্ষ্য করছিলাম। যার অনুভুতি এত তীক্ষ্ণ, ভাব স্বতোৎসারী, তার পক্ষে সব রোলই করা সম্ভব। ওকে আমি গ্রাম্য চরিত্র দেব। দেখবে ও তাও সুন্দর করবে।’ এম পি প্রোডাকশন্সের প্রবীণ কর্মী সলিল সেনকে নির্মলবাবু বলেছিলেন, ‘আমার কাজ ওকে অ্যাকটিং শেখানো নয়, ওর এই ভাবটা যাতে ক্যামেরার সামনে ধরে রাখতে পারে সে টুকু শিখিয়ে দেওয়া। শেখানো ঠিক নয়, ওকে শুধু ধরিয়ে দেওয়া। ও অনেক কিছু জানে, কিন্তু দুমদাম করে জাহির করে না। আমি বলছি দেখো, হি উইল স্কোর। কাব্যের রসে যে সঞ্জীবীত হতে পারে, তার অভিনেতা হিসাবে ভয় কী? অবশ্য সঞ্জীবনীর গান না শুনলে আমিও এতটা বুঝতে পারতাম না।’

নির্মল দে তাঁর পরের দু’টো ছবিতেও নায়ক হিসাবে নিয়েছিলেন উত্তমকুমারকে। দু’টিই উত্তমের অভিনয় জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ (১৯৫৩) ছবিতে প্রথম দেখা গেল উত্তম-সুচিত্রা জুটিকে। পরের ‘চাঁপাডাঙ্গার বউ’ (১৯৫৪) ছবিতে গ্রাম্য যুবকের চরিত্রে জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অভিনয়টা করেন উত্তম।

এর পর থেকে প্রকৃত অর্থে উত্তম যুগের সূচনা হয়েছিল। যা এখনও বাঙালির মনে সোনালি এবং উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে।

 

কৃতজ্ঞতা: মহানায়ক উত্তমকুমার, সপ্তর্ষি প্রকাশন

 

Advertisement