Female Dom Tumpa Das- Women's Day 2025: শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ের মাঝে, নিঃশব্দে বিপ্লব ঘটাচ্ছে বাংলার একমাত্র মহিলা ডোম টুম্পা

International Women's Day 2025: একদিকে সংসারের খরচ, অন্যদিকে ভাই-বোনকে লেখাপড়া শেখানোর দায়। তাই নার্সিংয়ের চাকরির বেতনের ভরসা ছেড়ে, বাবার ফেলে যাওয়া কাজকেই হাতে তুলে নিলেন টুম্পা। 

Advertisement
শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ের মাঝে, নিঃশব্দে বিপ্লব ঘটাচ্ছে বাংলার একমাত্র মহিলা ডোম টুম্পামহিলা ডোম টুম্পা দাস

আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারী না পুরুষ? শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে গোটা বিশ্ব এখন মগ্ন। কিন্তু তারই আড়ালে থেকেও যে নারীরা নিঃশব্দে বিপ্লব ঘটিয়ে চলেছেন, তাঁরাই তো আজ বীরাঙ্গনা। তাঁদের না আছে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই, না আছে পুরুষ- নারীতে ভেদাভেদ। তেমনই আজকের গল্পের 'নায়িকা' টুম্পা। 

সালটা ছিল ২০১৪। সদ্য মাধ্যমিক পাশ করে নার্সিং ট্রেনিং নিয়ে সামান্য কটা টাকার বেতনের চাকরিতে ঢুকেছেন তিনি। বাবার রোজগার থেকে সংসারের গোটা খরচ চলে না। তাই ভাই- বোনের পড়াশোনার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন টুম্পা। অভাবে থাকলেও, কোনও রকমে দিন গুজরান হচ্ছিল। কিন্তু, উপরওয়ালার পরিহাসে খুব বেশি দিন সেই স্বস্তিও থাকল না। হঠাৎই মৃত্যু হয় টুম্পার বাবার। মাথায় যেন বাজ ভেঙে পড়ে। একদিকে সংসারের খরচ, অন্যদিকে ভাই-বোনকে লেখাপড়া শেখানোর দায়। তাই নার্সিংয়ের চাকরির বেতনের ভরসা ছেড়ে, বাবার ফেলে যাওয়া কাজকেই হাতে তুলে নিলেন টুম্পা। 

 

Female Dom Tumpa Das

কিন্তু কী সেই কাজ? বারুইপুরের কল্যাণপুর পঞ্চায়েতের পুরন্দরপুর জোড়া মন্দিরের বাসিন্দা ছিলেন বাপি দাস। পেশায় ডোম। সহজ কথায় বলতে গেলে মরা পোড়াতেন। তাঁরই বড় মেয়ে টুম্পা দাস। বাবার মৃত্যুর পর, ২০১৪ সালে সেই কাজকেই নিজের পেশা হিসাবে বেছে নেন তিনি। যদিও শুরুটা এত সহজ ছিল না। পরিবারের বাকি সদস্যদের ইচ্ছের অমতেই এই কাজ করতে চেয়েছিলেন তিনি। মেয়ে হয়ে মরা পোড়াবে? একথা শুনে পাড়ায় অনেকেরই চক্ষুশূল হয়েছিলেন তাদেরই আদরের টুম্পা। কিন্তু তিনি থেমে থাকেননি। অদম্য জেদ এবং স্বাধীন হওয়ার ইচ্ছায় ওই কাজ হাতে তুলে নেন পুরন্দরপুরের এই সাহসী নারী। আজ, তাঁর কাজ নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলেন না। বরং শ্রদ্ধা করেন।

 

baruipur purandarpur cremation ghat

শ্মশানের পাশেই বাড়ি টুম্পা দাসের। ৩৬৫ দিনই সকাল ৮ টায় কাজে আসেন তিনি। শ্মশানে সারা দিনের কর্মী বলতে তিনি একাই। তাই মৃতদেহ এলে, নথিভুক্ত করা থেকে চুল্লিতে দেহ ঢোকানো, সবটাই একা হাতে করতে হয় টুম্পাকে। তাঁর কথায়, "এই কাজ করতে ভাল লাগে।" কারণ, এটা তাঁকে পরিচিতি ও সম্মান দিয়েছে। যদিও এখনও সেখানে আসা বহু মৃতদের পরিজনেরা নানা ক্ষেত্রে বাঁকা চোখে দেখে। তবে আজ সেসব গা- সওয়া হয়ে গেছে তাঁর। আজ এতটা সাহসী হলেও, টুম্পার কথায়, "এখনও কিছু ক্ষেত্রে মরা মানুষের থেকেও জীবিত মানুষকে ভয় পাই।" 

Advertisement

শুরু হয়েছিল কাঠের চুল্লি থেকে। পরবর্তীকালে ২০১৯ সাল থেকে শুরু করেন ইলিকট্রিক চুল্লির কাজ। রোজ ১২- ১৪ ঘণ্টা ডিউটি করার পর শ্মশানে নাইট শিফটে অন্য কর্মী থাকলেও, অনেক সময় ডাক পরে টুম্পার।    

 

Female Dom Tumpa Das

বর্তমানে তিনি এই কাজের জন্য মাত্র পাঁচ হাজার টাকা বেতন পান। সেই সঙ্গে অনেক সময়ই মৃতদেহ সৎকারের পরে সেই পরিবার থেকে বকসিস হিসাবে কিছু টাকা দেওয়া হয় তাঁকে। তা দিয়েই সংসার চলে টুম্পাদের। গত দশ বছর ধরে এই কাজ করছেন টুম্পা। বর্তমানে তাঁর ২৯ বছর বয়স। বিয়ের জন্য পাত্র দেখা হলেও, তাঁর এই কাজের কথা শুনে অনেকেই মুখ ফিরিয়েছেন। তবে তিনিও নিজের জেদ বজায় রেখেছেন। টুম্পার স্পষ্ট কথা, "আমার এই পেশাকে সম্মান জানিয়ে আমাকে ভালোবেসে কেউ যদি গ্রহণ করতে পারে, তবেই আমি বিয়ে করব। কারও জন্যে আমার এই পরিচিতি আমি বিসর্জন দিতে পারব না।"  

টুম্পা, পশ্চিমবঙ্গের একমাত্র মহিলা ডোম এবং ভারতবর্ষের দ্বিতীয়। তাঁকে ছাড়া বারাণসীর মণিকর্ণিকা ঘাটের ৭৬ বছর বয়সী যমুনা দেবী ভারতবর্ষের প্রথম মহিলা ডোম। বলা হয়, এই মণিকর্ণিকা ঘাটে দাহ হওয়া কোন মৃতদেহের পুনর্জন্ম হয় না, বরং স্বর্গ প্রাপ্তি হয়। টুম্পাদের মতো বহু নারী আজ আড়াল থেকে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্যের প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছেন। নারীরা শক্ত হাতে, যত্ন করে যেমন সংসারের হাল ধরতে পারেন, ঠিক সেরকমই বহির্জগতেও তাঁরা অনন্যা। ঠিক যেমন পুরন্দরপুরের টুম্পা দাস।  

                

POST A COMMENT
Advertisement