scorecardresearch
 

Posto or Poppy Seeds in Bengal: পোস্ত কীভাবে এল? সে বার সবজির আকাল, আফিম ফুলের বীজ রাঁধলেন চাষির স্ত্রী

স্বাধীনতার পর, সরকার আফিম পোস্ত চাষ কঠোরভাবে দমন করতে শুরু করে। যার কারণে আরও বেশি পোস্ত একটি মূল্যবান আইটেম হয়ে ওঠে। তবে, দাম বাড়লেও বাঙালির পোস্ত প্রেমে আজও ভাটা পড়েনি।

Advertisement
বাঙালির ঘরে পোস্ত এল যেভাবে বাঙালির ঘরে পোস্ত এল যেভাবে
হাইলাইটস
  • পোস্তর ইতিহাস মুঘল এবং ব্রিটিশ আমলের
  • সে সময় মূলত বিদেশ থেকেই পোস্ত আমদানি হতো

আপনি যখন সেরা নিরামিষ বাঙালি খাবারের কথা ভাবেন, তখন প্রথম যে জিনিসটি মনে আসে তা হল অবিসংবাদিত আলু পোস্ত (Aloo Posto)। পেঁয়াজ বা রসুন ছাড়াই রান্না করা এই পদটি প্রতিটি বাঙালি পরিবারের সবচেয়ে সহজ, আরামদায়ক এবং প্রধান নিরামিষ খাবার। পোস্তবাঁটার (Posto Bata) অনন্য স্বাদ, কাঁচা লঙ্কা ও সর্ষের তেলের ঝাঁঝ। সব মিলিয়েই আলু পোস্ত বাঙালিদের মধ্যে একটি ক্লাসিক এবং সবচেয়ে প্রিয় খাবারে পরিণত হয়েছে।

বাঙালিরা আলু পোস্ত খেতে ও খাওয়াতে পছন্দ করে। এই সুস্বাদু নিরামিষ খাবারটি নিয়ে গর্ববোধও করে। কিন্তু কখনও কি ভেবে দেখেছেন যে বাঙালি খাবারের সঙ্গে কীভাবে পোস্ত (Posto) ও আলু পোস্ত জড়িয়ে গেল? এই পদটির বাংলার রান্না ঘরে কবে ঢুকে পড়েছিল তা আমরা অনেকেই জানি না। ঠিক আছে, আপনি জেনে অবাক হবেন যে এর একটি আকর্ষণীয় ইতিহাস রয়েছে, যা মুঘল এবং ব্রিটিশ আমলের।

আরও পড়ুন: Poppy Cultivation: অতি সুস্বাদু, তবু কেন পোস্ত চাষ হয় না বাংলায়-কেন এত দাম? রইল কারণ

এটা অনুমান করা হয় যে আকবরের আমলে কোনও সবজির ঝোল ঘন করতে পোস্ত বেঁটে মেশানো হতো।  সে সময় মূলত বিদেশ থেকেই পোস্ত আমদানি করা হতো। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি পলাশীর যুদ্ধে জয়লাভের পরপরই তারা চিনের বিশাল অবৈধ আফিমের (Opium) বাজারে হানা দেয়। আসলে সেই সময় চিন থেকে চোরাপথে বাংলাতে আফিম আসতো। লাখ লাখ টাকার আফিম চোরাপথে এদেশে নিয়ে আসা হতো। ব্রিটিশরা (British) এসব দেখে বুদ্ধি খাটাল। তারা এটা ভেবে দেখে যে চিনাদের কাছ থেকে আফিম এদেশে আনার চেয়ে যদি নিজেরাই আফিম চাষ শুরু করা যায় তাহলে তো লাভ অনেক বেশি হবে। কিছুদিনের মধ্যেই ব্রিটিশরা আফিম উৎপাদনের জন্য বাংলায় পোস্ত চাষ (Opium cultavation in west bengal) করাতে শুরু করে। যার ফলে অন্যান্য সবজির অভাব দেখা দেয়।

Advertisement

বাঙালির ঘরে পোস্ত এল যেভাবে

সবজির আকাল দেখা দেওয়াতে এক কৃষকের স্ত্রী শুকনো ও অবশিষ্ট আফিম ফুলের বীজ পোস্ত নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছিলেন। তিনি পোস্ত বেঁটে তাতে সর্ষের তেল ছড়িয়ে দেন, এরপর সেদ্ধ আলু সহযোগে পান্তা ভাত খান। খেতে ভাল লাগলে তিনি টানা কয়েকদিন এটাই করতে থাকেন খাওয়ার জন্য। সঙ্গে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে থাকেন পোস্ত নিয়ে। একে একে আবিষ্কার হতে থাকে ঝিঙে পোস্ত, করলা পোস্ত ইত্যাদি। ওই মহিলার রান্নাঘর থেকে ধীরে ধীরে পোস্তর নানা পদ বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। সেই সময় কে ভেবেছিল যে এই পোস্ত একদিন বাংলার সেরা খাবারের তালিকাতে ঠাঁই পাবে।

স্বাধীনতার পর, সরকার আফিম পোস্ত চাষ (Posto Cultavation In West Bengal)) কঠোরভাবে দমন করতে শুরু করে। যার কারণে আরও বেশি পোস্ত একটি মূল্যবান আইটেম হয়ে ওঠে। তবে, দাম বাড়লেও বাঙালির পোস্ত প্রেমে আজও ভাটা পড়েনি। বাংলার প্রতিটি বাড়িতেই পোস্তর নানা পদ রান্না হয় প্রায় রোজই। পোস্ত বাঁটা, পোস্তর বড়া, ঝিঙে পোস্ত, আলু পোস্ত, চিচিঙ্গা পোস্ত ইত্যাদি। আজকাল আমিষেও ঢুকে পড়েছে পোস্ত। তালিকায় রয়েছে, রুই পোস্ত, চিকেন পোস্ত, পেঁয়াজ পোস্ত ইত্যাদি। এবার রাজ্যে পোস্ত চাষে (Poppy Cultivation) উদ্যোগী হচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee)। পোস্ত চাষে অনুমতি দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে তিনি চিঠিও দিয়েছেন। বিধানসভায় নিজেই এ কথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই বাংলায় পোস্ত চাষ হলে দাম অনেকটাই কমতে পারে। আর জমিয়ে পোস্তর নানা পদ খেতে পারবে বাঙালি।

Advertisement