ভারত-পাকিস্তান উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে পরমাণু হামলা নিয়েও নানা জল্পনা চলছে। আসলে দুই দেশই পরমাণু শক্তিধর। তাই যুদ্ধের মতো এই পরিস্থিতিতে আলোচনায় উঠে আসছে পরমাণু অস্ত্রও। কিন্তু পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার চাইলেই করা যায় না। তাই পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে আলোচনার আগে ভারত ও পাকিস্তানের পরমাণু নীতি জেনে নেওয়া যাক। ভারত আর পাকিস্তান—দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সম্পর্ক চিরকালই টানাপোড়েনের। এই সম্পর্কের বড় অংশ জুড়ে রয়েছে পরমাণু অস্ত্র। চলুন দেখে নেওয়া যাক, কার কী নীতি এই পরমাণু অস্ত্র নিয়ে।
ভারতের পরমাণু নীতি কী?
ভারতে পরমাণু শক্তির ব্যবহার শুরু হয়েছিল প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর সময়। তখন মূল লক্ষ্য ছিল বিদ্যুৎ তৈরি করা। কিন্তু পরে পরমাণু শক্তি হয়ে ওঠে দেশের প্রতিরক্ষা কৌশলের বড় হাতিয়ার, বিশেষ করে পাকিস্তান আর চিনের মতো প্রতিবেশীদের সামলানোর জন্য। ভারত ২০০৩ সালে একটি পরমাণু নীতি ঘোষণা করে। সেই নীতির চারটি প্রধান দিক রয়েছে।
১. নো ফার্স্ট ইউজ (NFU)
ভারত কখনও প্রথমে পরমাণু হামলা করবে না। যদি কেউ ভারতের উপরে পরমাণু হামলা করে, তখনই ভারত এর জবাব দেবে। ভারত এই অস্ত্র ব্যবহার করবে না এমন দেশগুলির উপরে, যাদের কাছে পরমাণু অস্ত্র নেই।
২. বিশ্বাসযোগ্য প্রতিরোধ (Credible Minimum Deterrence):
ভারত বলে, পরমাণু অস্ত্র রাখা হচ্ছে শুধুমাত্র শত্রুপক্ষকে আটকানোর জন্য, যাতে তারা আক্রমণ করার সাহস না পায়।
৩. ব্যাপক প্রতিশোধ (Massive Retaliation):
যদি কেউ পরমাণু হামলা চালায়, ভারত এমন জবাব দেবে যাতে শত্রু পক্ষের সামরিক শক্তি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়।
৪. বায়োলজিক্যাল বা কেমিক্যাল অস্ত্রের ব্যতিক্রম:
যদি কেউ ভারতের উপর জীবাণু বা রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করে, সেক্ষেত্রেও ভারত পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে।
পাকিস্তানের নীতি কী বলছে?
পাকিস্তান কখনও তার পরমাণু নীতি স্পষ্ট করে বলেনি। তারা সব সময় ধোঁয়াশার মধ্যে রেখেছে—কবে, কীভাবে এই অস্ত্র ব্যবহার করবে, তা প্রকাশ করেনি। এই ধোঁয়াশা নীতির কারণ হল, ভারতের থেকে সামরিক দিক দিয়ে পিছিয়ে থাকা পাকিস্তান চাইছে যেন ভারত কখনও আক্রমণ করার সাহস না পায়। ২০০১ সালে পাকিস্তানের এক শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা খালিদ কিদওয়াই বলেছিলেন, চারটি বড় কারণে পাকিস্তান পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে:
জমি হারালে: পাকিস্তানের বড় কোনও অংশ শত্রু দখল করলে।
সেনাবাহিনী ধ্বংস হলে: পাকিস্তানের বড় সেনাশক্তি যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
অর্থনৈতিক সঙ্কট: যদি দেশের অর্থনীতি ধ্বংস হওয়ার মুখে পড়ে।
রাজনৈতিক গোলমাল: দেশে বড় ধরনের রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হলে।
তবে কতটা ক্ষতি হলে পাকিস্তান এই সিদ্ধান্ত নেবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
ভারতের নীতিতে কি বদল আসছে?
ভারতের সরকার এখনও আগের নীতিই মানছে। তবে কিছু নেতা মাঝে মাঝে ইঙ্গিত দিয়েছেন, ভবিষ্যতে হয়তো নীতিতে বদল আনা হতে পারে।
পাকিস্তানের নীতি কি বদলেছে?
পাকিস্তান এখন বলছে, তারা কখনও 'নো ফার্স্ট ইউজ' নীতি মানে না। তারা ছোট পরমাণু অস্ত্রও (যাকে ট্যাকটিকাল নিউক্লিয়ার অস্ত্র বলা হয়) তৈরি করেছে, যা যুদ্ধক্ষেত্রে খুব সীমিত এলাকায় ব্যবহার করা যায়।