scorecardresearch
 

Sumita Sanyal: নক্সাল নেতার বোন! অমিতাভ-দিলীপের নায়িকা সুমিতা

তাঁর সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য রয়েছে যা অবাক করার মতো। অনেকেই জানেন না, তিনি দাপুটে নক্সাল আন্দোলনের নেতা কানু সান্যালের খুড়তুতো বোন। অনেকে এটাও ভুলে যান সুমিতা সান্যাল ভারতীয় সিনেমার প্রথম মহিলা গোয়েন্দা চরিত্রে অভিনয় করেছেন। সিনেমার নাম ছিল কুহেলি। তরুণ মজুমদার পরিচালিত ছবিতে তিনি শঙ্কর রায়ের মেয়ে ছোট্ট রানুর গভর্নেস হয়ে যান নিঝুমগড়ের রায়কুঠিতে।

Advertisement
আনন্দ ছবিতে অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে সুমিতা সান্যাল আনন্দ ছবিতে অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে সুমিতা সান্যাল
হাইলাইটস
  • সিনেমার পাশাপাশি গ্রুপ ছিয়েটার এবং রঙ্গসভা দলে সাফল্যের সঙ্গে মঞ্চে অভিনয় করেছেন সুমিতা।
  • বাংলা ছবিতে কাজ করার সঙ্গে সঙ্গে তিনি তাঁর কেরিয়ারের প্রাইম টাইমে সমান ভাবে মুম্বইতেও অভিনয় করেছেন।
  • ১৯৬৮ সালে আশীর্বাদ ছবিতে তিনি প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন হিন্দি চলচ্চিত্রে। ১৯৭১ সালে পর পর তিন ছবি আনন্দ, গুড্ডি এবং মেরে অপনে।

'আপনি বিবাহিতা?'

প্রশ্ন শুনেই চোখে জল চলে এল। কয়েক মুহূর্তের মধ্যে হাউহাউ করে কাঁদতে শুরু করলেন প্রমিলা, মিস প্রমিলা চ্যাটার্জি। সামনে এসে অবাক 'নায়ক' অরিন্দম মুখার্জি। পর ক্ষণেই উজ্জ্বল হাসিতে ঘর ভরিয়ে দিলেন প্রমিলা। আঙুলের ডগায় চোখের জলের ফোঁটা নিয়ে অরিন্দমকে বললেন, 'অভিনয়। গ্লিসারিন লাগবে না।' সত্যজিৎ রায় (Satyajit Ray) নায়ক (Nayak) ছবিতে তাঁকে এ কারণেই হয়তো কাস্ট করেছিলেন। কারণ উত্তমকুমারের (Uttam Kumar) সঙ্গে ওই ছোট্ট ডুয়েল বাংলা সিনেমাপ্রেমীদের চিরকাল মনে থাকবে।

সব মিলিয়ে স্ক্রিনে ছিলেন মিনিট খানেক। কিন্তু তিনি কত বড় অভিনেত্রী, বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তামাম সিনেমা বোদ্ধাদের। তিনি সুমিতা সান্যাল (Sumita Sanyal)। তাঁর মতো এত ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে অভিনয় খুব কম অভিনেত্রীই করেছেন। নায়িকা থেকে খলনায়িকার চরিত্রে অনায়াস দক্ষতায় বিচরণ করেছেন।

তাঁর সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য রয়েছে যা অবাক করার মতো। অনেকেই জানেন না, তিনি দাপুটে নক্সাল আন্দোলনের নেতা কানু সান্যালের (Kanu Sanyal) খুড়তুতো বোন। অনেকে এটাও ভুলে যান সুমিতা সান্যাল ভারতীয় সিনেমার প্রথম মহিলা গোয়েন্দা চরিত্রে অভিনয় করেছেন। সিনেমার নাম ছিল কুহেলি (Kuheli)। তরুণ মজুমদার (Tarun Majumdar) পরিচালিত ছবিতে তিনি শঙ্কর রায়ের মেয়ে ছোট্ট রানুর গভর্নেস হয়ে যান নিঝুমগড়ের রায়কুঠিতে। বান্ধবী অপর্ণার রহস্য মৃত্যুর জন্য তিনি নিজের পরিচয় সম্পূর্ণ অজ্ঞাত রেখে সেই রহস্যের তদন্ত করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিলেন আসল খুনিকে। রানুর চরিত্রে শিশু শিল্পী হিসাবে অভিনয় করেছিলেন দেবশ্রী রায় (Debashree Roy)। শঙ্কর এবং অপর্ণার চরিত্রে ছিলেন বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায় (Biswajit Chatterjee) এবং সন্ধ্যা রায় (Sandhya Roy)।

নায়ক ছবিতে সেই কান্নার দৃশ্য

১৯৪৫ সালের ৯ অক্টোবর দার্জিলিং শহরে জন্ম সুমিতার। বাবা-মা নাম রেখেছিলেন মঞ্জুলা। কিন্তু সে নামে তাঁকে কেউ চেনেন না। ২ বার নাম পরিবর্তনের পর বাংলা এবং হিন্দি চলচ্চিত্র জগতে অভিনয়ের স্বাক্ষর রেখেছিলেন সুমিতা সান্যাল হিসাবেই। পিতা গিরিজা গোলকুন্দ সান্যাল চাকরি সূত্রে উত্তরবঙ্গে পোস্টেড ছিলেন। সে জন্যেই তাঁর শিক্ষাজীবনের অনেকাংশ কেটেছে কার্শিয়াঙে। সেখানেই কনভেন্ট স্কুলে পড়ার সময় আলাপ হয় অভিনেত্রী লীলা দেসাইয়ের সঙ্গে। লীলা সেই স্কুলের শিক্ষিকা ছিলেন। তিনি একবারেই বুঝেছিলেন, এই মেয়ের অসাধারণ অভিনয় দক্ষতার কথা।

Advertisement

পারিপারিক বন্ধু হওয়ার সুবাদে লীলা দেবীর সুপারিশেই ১৬০ সালে বিভূতি লাহার পরিচালনায় খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন ছবিতে অভিনয় করেন সুমিতা। এ ছবিতে টাইটেল কার্ডে তাঁর নাম ছিল সুচরিতা। মঞ্জুলা থেকে নাম পাল্টে ওই নাম রাখেন পরিচালক বিভূতি। সেই প্রথম উত্তমকুমারের সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করা। এর পর আরও তিনটি ছবিতে উত্তম কুমারের সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। যার মধ্যে নায়কের কথা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। এর পর পরিচালক কনক মুখোপাধ্যায় পরবর্তী ছবিতে তাঁর নাম পাল্টে ছোট করে দেন। নাম হয় সুমিতা। তার পর থেকে এই নামেই তিনি টলি এবং বলি পাড়ায় পরিচিত পেয়েছেন।

সিনেমার পাশাপাশি গ্রুপ ছিয়েটার এবং রঙ্গসভা দলে সাফল্যের সঙ্গে মঞ্চে অভিনয় করেছেন সুমিতা। বাংলা ছবিতে কাজ করার সঙ্গে সঙ্গে তিনি তাঁর কেরিয়ারের প্রাইম টাইমে সমান ভাবে মুম্বইতেও অভিনয় করেছেন। ১৯৬৮ সালে আশীর্বাদ ছবিতে তিনি প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন হিন্দি চলচ্চিত্রে। ১৯৭১ সালে পর পর তিন ছবি আনন্দ, গুড্ডি এবং মেরে অপনে। তিনটি ছবিই বাণিজ্যিক ভাবে সফল এবং একই সঙ্গে সমালোচকদেরও অকুণ্ঠ প্রশংসা কুড়িয়েছিল। বাংলায় সাগিনা মাহাতো-র কথাই ধরুন। দিলীপ কুমারের সঙ্গে অমন জাঁদরেল অভিনয় করার দক্ষতা ক' জন দেখাতে পেরেছেন!

সঞ্জীব কুমারের সঙ্গে

সুমিতা সম্পর্কে আরও একটি ইন্টেরেস্টিং তথ্য হল তিনি চৌধুরী ফারমাসিউটিক্যাল নামে একটি বাংলা ধারাবাহিকে অভিনয় করেছিলেন, যেখানে সহ-অভিনেতা হিসাবে ছিলেন রাজনীতিবিদ মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। সিনেমায় অভিনয়ের সূত্র ধরেই পরিচয় হয় চিত্র সম্পাদক সুবোধ রায়ের সঙ্গে। তাঁকেই জীবনসঙ্গী করেন সুমিতা।

তাঁর অসামান্য অভিনয় দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও সীমিত সংখ্যক বাংলা এবং হিন্দি ছবিতে তাঁকে দেখা গিয়েছে। কেন, তার উত্তর হয়তো সুমিতা নিজেই দিতে পারতেন। বঞ্চনা, না স্রেফ অভিমান করে এক সময় অভিনয় থেকে দূরে সরে ছিলেন তিনি, সে উত্তরও সুমিতার সঙ্গে চিরতরে হারিয়ে গিয়েছে। দীর্ঘ দিন বার্ধক্যজনিত অসুখে ভোগার পর ২০১৭ সালের ৯ জুলাই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। মানুষ চলে যাওযার পর তাঁর সঠিক মূল্যায়ন হয় কিনা জানা নেই, তবে জীবিত অবস্থাতেও সুমিতা সান্যালের মূল্যায়ন হয়নি, এ কথা বলা যেতেই পারে।

তথ্য ঋণ: গৌতম বসু মল্লিক

 

Advertisement