
আজাদ হিন্দ বাহিনীতে যোগ দিয়ে দেশের প্রথম মহিলা গুপ্তচর হিসাবে ব্রিটিশ শাসকের মনে ত্রাস সৃষ্টি করেছিলেন তিনি।Neera Arya, First Indian Woman Spy: নেতাজির আজাদ হিন্দ ফৌজ "রানি লক্ষ্মী বাই রেজিমেন্ট" এর মহিলা শাখার সৈনিক ভারতের প্রথম গুপ্তচর নীরা আর্যর ১২১তম জন্মবার্ষিকী ইগলাসের তোচিগড় গ্রামে এ বছরেও ৫ মার্চ পালিত হয়েছিল। জুলাই মাসের ২৬-এ তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী।
১৯০২ সালে উত্তরপ্রদেশের বাগপতের খেকরায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি। তাঁর বাবার ব্যবসা কলকাতায় ছিল। তাই তাঁর পড়াশোনা কলকাতাতেই হয়েছিল। কলকাতায় তিনি বাংলা, সংস্কৃত, ইংরেজি সহ একাধিক ভাষা শিখেছিলেন। তাঁর বাবা ব্রিটিশদের দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত ছিলেন। সেই কারণেই তিনি তাঁর মেয়েকে ইংরেজ অফিসার শ্রীকান্ত জয় রঞ্জন দাসের সঙ্গে বিয়ে দেন। শ্রীকান্ত জয় রঞ্জন দাস ব্রিটিশ ভারতে একজন সিআইডি ইন্সপেক্টর ছিলেন। নীরা দেশকে স্বাধীন করতে যতটা মরিয়া ছিলেন, অন্যদিকে তাঁর স্বামী ব্রিটিশদের প্রতি ততটাই অনুগত ছিলেন।

শৈশবে তিনি বীর স্বাধীনতা সংগ্রামী ভগৎ সিং-এর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেয়েছিলেন যখন তিনি ব্রিটিশদের হাত থেকে বাঁচার জন্য বেশ কয়েকদিন হরিয়ানায় লুকিয়ে ছিলেন। দেশ স্বাধীন করার জন্য নীরা আর্যের মধ্যে আগুন জ্বলেছিল। এই কারণে, তিনি আজাদ হিন্দ ফৌজের ঝাঁসি রেজিমেন্টে যোগ দেন। নীরা আর্য দেশের স্বাধীনতার সশস্ত্র সংগ্রামে যুক্ত হতে নেতাজির আজাদ হিন্দ বাহিনীতে যোগ দিয়ে দেশের প্রথম মহিলা গুপ্তচর হিসাবে ব্রিটিশ শাসকের মনে ত্রাস সৃষ্টি করেছিলেন।
ঘটনাচক্রে একদিন খবর পেয়ে নীরা আর্যের স্বামী ব্রিটিশ পুলিশের সিআইডি ইন্সপেক্টর নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুকে লক্ষ্য করে গুলি চালান। নীরার তৎপরতায় ওই গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে নেতাজির গাড়ির চালকের গায়ে লাগে। এর পরই নেতাজির জীবন বাঁচাতে তিনি তাঁর স্বামীকে বার বার ছুরির আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করে হত্যা করেছিলেন। এই ঘটনার পর থেকে নেতাজি তাঁকে ‘নাগিনী’ বলে ডাকতেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে আজাদ হিন্দ ফৌজের আত্মসমর্পণের পরে, যখন দিল্লির লাল কেল্লায় বিচার হয়েছিল, তখন সমস্ত বন্দী আজাদ হিন্দ সেনাদের মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। শুধু নীরা আর্যকে তাঁর স্বামী হত্যার অপরাধে ‘কালা পানি’র সাজা দেওয়া হয়েছিল। যেখানে তাঁর উপর নিষ্ঠুর নির্যাতন করা হয়েছিল। তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। জেলে তাঁর উপর অনেক অত্যাচার করা হয়েছে। নেতাজির খবর পেতে তাঁর একটা স্তনও কেটে নেওয়া হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও নীরার মুখ খোলাতে পারেনি ব্রিটিশ গোয়েন্দারা। নীরা আর্যকে কারাবাসের সময় আন্দামানে পাঠানো হয়েছিল। এখানে তাকে একটি ছোট সেলে রাখা হয়েছিল। লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এই সময়টায় নারকীয় অত্যাচান সহ্য করতে হয়েছিল তাঁকে।
দেশ স্বাধীন হলে জেল থেকে বেরিয়ে আসেন নীরা আর্য। হায়দরাবাদে ফুল বিক্রি করে তাকে জীবিকা নির্বাহ করতে হয়েছে। তিনি ১৯৯৮ সালে মারা যান। তিনি নিজের জীবনীও লিখেছেন, যার নাম 'মেরা জীবন সংগ্রাম হ্যায়'। দেশের স্বাধীনতার পর যে কটা বছর নীরা বেঁচেছিলেন তিনি ফুল বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেছেন। কোনও রকম সরকারি সাহায্য বা পেনশন কখনও নেননি।