
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, বাঙালির আবেগের এক অপর নাম। নেতাজি এই নাম শুনলে আজও বহু মানুষের মনে শিহরণ জাগে। সেই নেতাজি কিন্তু খাদ্যরসিক ছিলেন। খেতে খুব ভালবাসতেন তিনি। প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়াকালীন পাশের আদর্শ হিন্দু হোটেল প্রতিদিন নিয়মকরে দুপুরবেলা খেতে যেতেন। তাঁর প্রিয় খাবারের তালিকায় ছিল পালংশাকের বাটি চচ্চড়ি, মুড়িঘন্ট এবং অতি অবশ্যই মৌরলা মাছের ঝাল চচ্চড়ি।
বাঙাসির সঙ্গের চায়ের কেমিস্ট্রি বহু পুরনো। নেতাজিও কথায় কথায় চা খেতেন। আর মুখে থাকত সুপারির কুচো। কলকাতা পুরসভার দায়িত্বে থাকাকালীল সেই ত্রিশের দশকেই চালু করেছিলেন ক্যান্টিন। শোনা যায়, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সব থেকে প্রিয় পানীয় ছিল চা। তিনি নাকি দিনে ২০-২৫ বার চা খেতেন। আর সবসময় সুপারি চিবোতেন। অনেক বারণ করা সত্ত্বেও শুনতেন না। এমনকি ব্যাডমিন্টন খেলার সময়ও তিনি সুপুরি খেতেন। পরে অবশ্য সুপারি সম্পূর্ণ ছেড়ে দিয়ে হরিতকি খেতেন বলে শোনা যায়।
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু অনেক জায়গায় তাঁর খাবারের কথা লিখেছিলেন। বাঙালি হওয়ায় বাঙালি খাবারই ছিল তাঁর দুর্বলতা। তিনি ছানার তৈরি যে কোনও খাবার পছন্দ করতেন। তবে স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় জেলে পরিবেশিত খাবারেই তাঁকে দীর্ঘদিন সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু ১৯২৫ থেকে ১৯২৭ পর্যন্ত মায়ানমারের (বার্মা) মান্ডলা জেলে ছিলেন। তখন তিনি প্রায়ই বৌদি বিভাবতী বসুকে জেলের খাবারের কথা লিখতেন। সেসব চিঠিতে তিনি জানাতেন, কারাগারে কী ধরনের খাবার পান। বৌদিকে বহু চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, জেলে ঠিকমতো ভাত বা খাবার পাওয়া যায় না। খাবারের মধ্যে পেঁপে, বেগুন ও পালংশাক খেয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়।
তিনি খিচুড়ির মতো খাবারও পছন্দ করতেন। আর প্রায়ই মুগ ডাল খেতেন। একবার তিনি জেলে পাওয়া চা সম্পর্কে তাঁর বড় ভাই শরৎচন্দ্র বসুকে একটি চিঠি লিখেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন, দার্জিলিং চা কারাগারে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে। তাঁর চেহারায় সাহেবি আদম কায়দার ঝলক থাকলেও সুভাষ চন্দ্র বসু কিন্তু আদ্যপান্ত বাঙালি মেজাজের ছিলেন। পাড়ার তেলেভাজার দোকানে চপ মুড়ি, বেগুনি, পেঁয়াজি খেতে খেতেই জমে উঠত তাঁর তর্ক। শোনা যায় কলকাতা শহরের যে তেলেভাজার দোকানে বসে চপ মুডি খেতে খেতে পাড়ার সহযোদ্ধাদের সঙ্গে তর্কে মশগুল হতেন সুভাষ সেই দোকানটি প্রতিবছর নাকি সুভাষ চন্দ্র বসুর জন্মদিন বড় করে উদযাপন করে থাকে।