
সকালের জলখাবার হোক বা সান্ধ্য আড্ডা বা বাড়িতে অতিথি অ্যাপায়ন, গরম সিঙাড়া বাঙালির কাছে চিরকালীন বেস্টসেলার। সিঙাড়া সারা ভারতে পাওয়া গেলেও কলকাতার সিঙাড়ার (Kolkata Singara) একটা আলাদা মোহ আছে। ক্লাব হোক বা অফিস, কলেজ ক্যান্টিন হোক বা ট্রেনের জানালার ধারের সিট, ধোঁয়া ওঠা সিঙাড়ার (Singara) সঙ্গে এক কাপ চায়ে তুফান ওঠে। তবে চায়ের মতো এই সিঙাড়ার জন্মও বাংলাতে নয়। সিঙাড়ার শিকড় পড়ে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে। পারসি শব্দ সানবুসাগ থেকেই সামোসার উৎপত্তি। ইরানি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সানবুসাগ বা সাম্বুসা আসে ভারতে। মাংসের পুর ভরে তৈরি হত সিঙাড়া। পরের কয়েক দশকে সিঙাড়া আকার ও গন্ধে এদেশের মতো হয়ে ওঠে।
তাতে রসদ জোগায় ঔপনিবেশিক পর্তুগিজরা। ভারতে উপনিবেশ স্থাপন করার সঙ্গেই তাদের সাথে এসে পড়ল বাটাটা বা বাতাতা। বাংলায় যাকে আমরা চিনি আলু নামে। তারপর আলুর পুর দিয়ে চলতে থাকল সিঙাড়া তৈরি। তবে, কালে কালে সিঙাড়ার পুরও বদলে যেতে থাকে। সিঙাড়ায় ফুলকপিও (Cauliflower) ঠাঁই পায়। আলু-ফুলকপির তরকারি পুর দেওয়া সিঙাড়া ক্রমেই জনপ্রিয়তা লাভ করে। বিশেষ করে শীতকালে ফুলকপির সিঙাড়া (Phulkopir Singara) আমরা কম-বেশি সকলেই ভালবাসি। তো আমরা এই প্রতিবেদনে কলকাতার কয়েকটি সেরা ঠিকানার সন্ধান দেব। যেখানকার ফুলকপির সিঙাড়া (Cauliflower Samosa) আপনার মুখে লেগে থাকবে।
আরও পড়ুন:Best Momos Restaurant In Kolkata: মোমো যেখানে সেখানে কেন খাচ্ছেন? কলকাতার সেরা দোকানগুলির হদিশ রইল
দ্বারিক গ্র্যান্ড সন্স (Dwarik Grand Sons): শ্যামবাজার পাঁচমাথার মোড়ে বিটি রোডের দিকের রাস্তায় বাঁ হাতে পড়বে এই দোকানটি। এদের আরেকটি শাখা আছে লালবাজারের কাছে। ১৮৮৫ সালে শ্যামপুকুর স্ট্রিটে প্রথম দোকান স্থাপিত হয়। অনেক পরে এই শ্যামবাজার, এন্টালি মার্কেট ও লালবাজারের দোকান তৈরি হয়। হাতিবাগানেও একটা দোকান ছিল। দোকানের বর্তমান মালিক সিদ্ধার্থ ঘোষ। এই দোকানের সিঙাড়া যেত নামকরা লোকজনের বাড়িতে। তালিকায় রয়েছেন কানন দেবীও।
ভবতারিণী মিষ্টান্ন ভাণ্ডার (Bhabatarini Mistanna Bhandar): এই দোকানটি অবস্থিত শ্যামবাজার শ্যামপুকুর লেনে। প্রায় ৬৫ বছরের পুরনো এই দোকানটির জনপ্রিয়তা হার মানাবে যে কোনও বড় দোকানকে। এখানকার সিঙাড়ার চাহিদা দেখলে মাথা খারাপ হয়ে যাবে। সন্ধে ৬টার মধ্যে হাজির না হলে মিলবে না সিঙাড়া।
মৃত্যুঞ্জয় ঘোষ অ্যান্ড সন্স (Mrityunjay Ghosh & Sons): কলকাতার শরৎ বোস রোডে মৃত্যুঞ্জয় ঘোষ অ্যান্ড সন্স হল আরেকটি প্রাচীন পুরনো মিষ্টির দোকান। ১৯২৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই দোকান এখনও রমরমিয়ে বিভিন্ন ধরন ও স্বাদের খাবার বিক্রি করছে। তার মধ্যে রয়েছে ফুলকপির সিঙাড়াও। ঘন সবুজ চাটনির সঙ্গে এক পিস গরম সিঙাড়া খেলে স্বর্গীয় অনুভূতি পাবেন।
পুঁটিরাম (Putiram): এটি কলেজ স্ট্রিট এলাকার আরেকটি কিংবদন্তি দোকান, কচুরি এবং অন্যান্য মিষ্টির জন্য বিখ্যাত। এই দোকানের সিঙাড়া ও কচুরির স্বাদ ছাড়া কলকাতা অ-সম্পূর্ণ। সব চেয়ে ভাল দিক হল আপনি দিনের যে কোনও সময় এখানে একটি কচুরি ও সিঙাড়া পেতে পারেন।
ভিআইপি সুইটস (V I P Sweets): তুলনামূলকভাবে কলকাতার মিষ্টির বাজারে এই দোকানটি নতুন প্রবেশ করেছে। এরা ইতিমধ্যেই সল্টলেক আউটলেট থেকে শীতকালে খাস্তা ফুলকপির সিঙাড়া বিক্রি করে। যা মানুষের মুখে লাগছে।
বলরাম মল্লিক অ্যান্ড রাধারমণ মল্লিক (Balaram Mullick and Radharaman Mullick): এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে বাঙালির মিষ্টির খিদে মেটাচ্ছে এই দোকানটি। ১৮৮৫ সালে ভবানীপুরে স্থাপিত হয় এই দোকানটি শহরের ঐতিহ্যের অংশ। যদিও দোকানটি ইতিমধ্যেই জনপ্রিয় খাবারগুলিতে অসংখ্য নতুন ফিউশন মিষ্টি যোগ করেছে। তবে একটি আইটেম যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একই আছে তা হল ফুলকপির সিঙাড়া। এটি একমাত্র শীতকালেই বিক্রি করা হয়।
আরও পড়ুন: Best Kochuri Shop In kolkata: শীতের সকালে ধোঁয়া ওঠা ফুলকো কচুরি খুঁজছেন? কলকাতার ৮ সেরা দোকানের হদিশ