Rabindra Jayanti 2025: পাঁঠার মাংস থেকে কাবাব, ঝালে-ঝোলে-অম্বলে কী কী ভালোবাসতেন রবীন্দ্রনাথ?

রাত পোহালেই ২৫ বৈশাখ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৪তম জন্মদিন। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও বাঙালির মন ও মননে জায়গা দখল করে আছেন তিনি। রবীন্দ্রনাথের গান বাঙালির আলোর দিশা। তার কবিতা, ছোটগল্প ও উপন্যাস বাংলা সাহিত্যকে এগিয়ে নিয়েছে। কাল কবিগুরুর জন্মদিন ‘রবীন্দ্রজয়ন্তী’ উৎসব হিসেবে উদযাপন হবে দেশজুড়ে।

Advertisement
 পাঁঠার মাংস থেকে কাবাব, ঝালে-ঝোলে-অম্বলে  কী কী ভালোবাসতেন রবীন্দ্রনাথ? কী কী ভালোবাসতেন রবীন্দ্রনাথ?

রাত পোহালেই  ২৫ বৈশাখ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৪তম জন্মদিন। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও বাঙালির মন ও মননে জায়গা দখল করে আছেন তিনি। রবীন্দ্রনাথের গান বাঙালির আলোর দিশা। তার কবিতা, ছোটগল্প ও উপন্যাস বাংলা সাহিত্যকে এগিয়ে নিয়েছে। কাল কবিগুরুর জন্মদিন ‘রবীন্দ্রজয়ন্তী’ উৎসব হিসেবে উদযাপন হবে দেশজুড়ে।

সত্যি কথা বলতে,সিনেমা থেকে শিল্পে, গানে, কবিতায় ১৬৪ বছর পরেও প্রাসঙ্গিক কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ৷ তাঁর অমর সৃষ্টি আগামী হাজার বছরও হয়তো তেমনই প্রাসঙ্গিক থাকবে। রবীন্দ্রনাথের নামের সঙ্গে ‘খাদ্যরসিক’ শব্দটি অনেকেই বসান। কিন্তু আদতে রবীন্দ্রনাথ কোন খাবারটি পছন্দ করতেন, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায় না। তবে তিনি যে খাবারের ব্যাপারে অত্যন্ত সচেতন ছিলেন, সে বিষয়ে স্পষ্ট বিবরণ পাওয়া যায়।

শোনা যায় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নানা ধরনের খাবার ভালোবাসতেন এবং কখনো কখনো নিজ হাতে রান্নাও করতেন। রসনাবিলাসও তাঁকে আকৃষ্ট করেছে প্রবলভাবে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়ানোর সময় সেসব জায়গার নিজস্ব খাবারের প্রতি তাঁর অনুরাগ জন্মেছে, পরবর্তী সময়ে তাঁর প্রিয় খাবারের তালিকায় সেগুলোর সংযুক্তিও ঘটেছে। যেমন: প্যাটিস, স্যুপ, পাই, কাটলেট, রোস্ট, কাবাব ইত্যাদি।  রবীন্দ্রনাথের এ ভোজনপ্রীতি প্রভাবিত করেছে বাড়ির ঠাকুরঘরকেও। বিভিন্ন ভোজের নিমন্ত্রণ এবং প্রসিদ্ধ রেস্তোরাঁর মেনু কার্ড সংগ্রহ করেছেন তিনি এবং সেগুলো নিয়ে এসে দেশি ও বিদেশি রান্নার ফিউশন করিয়েছেন ঠাকুরবাড়ির রসুইঘরের ঠাকুরদের দিয়ে।

রবীন্দ্রনাথের নামের সঙ্গে ‘খাদ্যরসিক’ শব্দটি বেশ ভালো যায়। খাবার যে একটা রসের ব্যাপার, উপভোগ করার ব্যাপার সেটা তিনি ভালোই বুঝতেন। শুধু নিজে খাওয়া নয়, অন্যকে খাওয়ানো, খাবার পরিবেশেনে চমৎকারিত্ব, খাবার নিয়ে নতুন নতুন ভাবনা ইত্যাদি ব্যাপার খাদ্যরসিক না হলে ঠিক জমানো যায় না। কোনটা রবীন্দ্রনাথের প্রিয় খাবার আর কোনটা নয়, সে ব্যাপারে বিস্তর বাদানুবাদ আছে। তাঁকে যে যখন যা খেতে দেখেছেন, তিনি সেটাকেই রবীন্দ্রনাথের প্রিয় খাবার বলে লিখেছেন। 

Advertisement

মির্জা গালিবের মতো রবীন্দ্রনাথও যে আম খেতে পছন্দ করতেন, সেটা ঠিক। তিনি জাপান যাওয়ার সময় আম সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলেন। পুত্র রথীন্দ্রনাথ লিখেছেন, একবার অসুস্থ হয়ে আমেরিকা যাওয়ার সময় মুম্বাই বন্দর থেকে এক বাক্স আলফানসো আম কিনেছিলেন তাঁরা। রবীন্দ্রনাথের সেই ছেলেবেলার কবিতায়ও কিন্তু আমের কথাই আছে, ‘আমসত্ত্ব দুধে ফেলি…।’ মোদ্দাকথা আম ছিল রবীন্দ্রনাথের প্রিয় ফল।

লেখক বনফুল সপরিবার গিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে দেখা করতে। শান্তিনিকেতনে বসন্ত উৎসবের সময়ে। সঙ্গে নিয়ে গিয়েছেন স্ত্রীর বানানো সন্দেশ। রবীন্দ্রনাথ বনফুলের হাতে সন্দেশের বাক্স দেখে বললেন, এটি কী? বনফুল বললেন, সন্দেশ। তিনি কৌটাটি খুলে রবীন্দ্রনাথের সামনে রাখলেন। রবীন্দ্রনাথও একটি সন্দেশ মুখে দিয়ে বিমোহিত হয়ে গেলেন। সন্দেশ খেতে খেতে বললেন, ‘বাংলাদেশে তো দুটি মাত্র রস-স্রষ্টা আছে। প্রথম দ্বারিক, দ্বিতীয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এ যে তৃতীয় লোকের আবির্ভাব হল দেখছি।’ সেই একই সাক্ষাৎকারে রবীন্দ্রনাথ বনফুলকে বিকেলে দেখা করতে বললেন। বললেন, ‘তোমার লেখা পড়ে মনে হয় তুমি ঝাল খেতে ভালোবাস। বিকেলে বড় বড় কাবলে মটরের ঘুগনি করলে কেমন হয়? ঘুগনির মাঝখানে একটা লাল লঙ্কা গোঁজা থাকবে। কী বল?’

রবীন্দ্রসাহিত্যে কিংবা রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে লেখা বিভিন্ন লেখকের স্মৃতিকথায়, জীবনীতে তাঁর খানাপিনা নিয়ে ভাবনার অনেক কিছু পাওয়া যায়। কিন্তু খুব কম জায়গায় পাওয়া যায় তাঁর খাদ্যদর্শন।বনফুলের লেখা থেকে জানা যায়, রবীন্দ্রনাথ খেতে এবং খাওয়াতে ভালোবাসতেন। পুত্র রথীন্দ্রনাথও সে কথা লিখেছেন। ইন্দিরা দেবীও মোটামুটি কাছাকাছি কথাই লিখেছেন।তবে তাঁর খাদ্যদর্শনটি ধরতে পেরেছিলেন সম্ভবত রথীন্দ্রনাথই। 

 

তাঁর সময় ঠাকুরবাড়িতে 'পাঁঠার বাংলা' নামক এক পদের উল্লেখ আছে। ১৯৪১ সালে, কবিগুরু মৃত্যুর ঠিক দুই বছর আগে কালিম্পং থেকে জোড়াসাঁকোতে আসেন ক্লান্ত, অবসন্ন শরীর নিয়ে। এই বিশেষ পাঁঠার মাংস তাঁর খাদ্যতালিকায় ছিল। এই মেনু বাঙালির খাদ্যতালিকায় অবলুপ্ত। রবীন্দ্রনাথ নিজেই বলেছেন, "Do not blame the food because you have no appetite." তাঁর খুব প্রিয় খাদ্যের মধ্যে ছিল কাবাব। তা ছাড়াও তিনি খুব পছন্দ করতেন আনারস দিয়ে তৈরি রোস্টেড পাঁঠার মাংস। নানান রান্নার ক্ষেত্রেই প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের এক অদ্ভুত মেলবন্ধন ঠাকুরবাড়ির হেঁশেল ঘটিয়েছিল। পূর্ণিমা ঠাকুর ‘ঠাকুরবাড়ির রান্না’ বইতে তা লিপিবদ্ধ করেছেন। 

শুধু সাহিত্য বা শিল্পকলাই নয়, রবীন্দ্রজীবনবোধে খাদ্যরসিকতা একটি বড় দিক! ঠাকুরবাড়ির হেঁশেল একটা সময় বাংলার রান্নার ঘরানার ট্রেন্ড সেট করেছে। রবীন্দ্রনাথেরও নিজের পছন্দের কিছু খাবার ছিল। চলুন জেনে নেওয়া যাক রবিঠাকুরের পছন্দের খাবার সম্পর্কে।

সোনা মুগের ডাল, তবে তাতে থাকতে হবে সজনে ডাঁটা
রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতনের জীবনে অনেকেই তাঁর জন্য বিভিন্ন সুস্বাদু খাবার রান্না করে আনতেন। তবু জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির খাওয়ারের স্বাদ ভুলতে পারতেন না রবীন্দ্রনাথ। সেখানের সোনা মুগের ডাল খেতেন তিনি। তবে তাতে চাই সজনে ডাঁটা। সজনে ডাঁটা ছাড়া রবিঠাকুর সোনা মুগের ডাল পছন্দ করতেন না।

ঠাকুরবাড়ির রান্নার ঘরানা 
ছোটবেলা থেকেই রবীন্দ্রনাথ এমন এক পরিবারে মানুষ হয়েছেন, যেখানে স্পেন, ইতালি, ইংল্যান্ড, ইউরোপের রান্নার প্রভাব ছিল। ঠাকুরবাড়ির রান্নায় বাঙালির চেনা ঘরানার সঙ্গে মিশে থাকত বৈদেশিক বহু দেশের রান্নার প্রভাব। আর সেই হিসেবে রবিঠাকুর নিজেও বহু ধরনের খাবারে নতুনত্ব আনতে চাইতেন।

ঠাকুরবাড়ির ফ্রুট সালাড 
বিভিন্ন দেশের প্রভাব রয়েছে ঠাকুরবাড়ির সালাড তৈরিতে। শোনা যায়, বাড়ির সবাইকে নিয়ে জমিয়ে বসে মধ্যাহ্নভোজের পর এই ফ্রুট সালাড খেতে পছন্দ করতেন রবীন্দ্রনাথ। 

চা ও শরবত 
রবীন্দ্রনাথের প্রিয় পানীয়ের মধ্যে চা বিশেষ জায়গা করে নিয়েছিল। তবে জাপানের চায়ের প্রতি কবিগুরুর আকর্ষণ অনেকটাই বেশি ছিল। অন্যদিকে শরবতের রকমফের নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন রবীন্দ্রনাথ। আর সেই কারণেই আসে নিমের শরবতের উদ্ভাবন। তবে আমসত্ত্ব, দুধ ও সন্দেশ ‘মাখা’ও কিন্তু রবিঠাকুরের প্রিয় পদ ছিল।

Advertisement

কাবাব থেকে ইলিশের ঝোল 
বিদেশ সফরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যখনই যেতেন, তখনই তিনি কোনো না কোনো বেক ফুড বেছে নিতেন। আর তাঁর প্রিয় খাবারের তালিকায় ছিল চিকেন কাবাব নোসি, টার্কি কাবাব, সুরতি মিঠা কাবাব। মাংসের মধ্যে যখন কাবাবে তাঁর মন ছুঁয়ে যেত, তখন মাছের পদকেও পেছনে রাখতেন না তিনি। কাঁচা ইলিশের ঝোল, চিতল মাছের মুঠে, নারকেল চিঁড়ি, আদা দিয়ে মাছের ঝোল ছিল রবিঠাকুরের প্রিয় খাবারের তালিকায়।

ঠাকুরবাড়ির ‘ভাতের কোফতা’
রবিঠাকুরের বাড়ির একটি বিশেষ পদ ছিল ভাতের কোফতা। যার হদিস মেলে ঠাকুরবাড়ির মেয়ে প্রজ্ঞাসুন্দরী দেবীর লেখা বই ‘আমিষ ও নিরামিষ আহার’ বইয়ে। এই রেসিপি শুনতে যেমন ভিন্ন, স্বাদেও অপূর্ব। রবিঠাকুরের প্রিয় খাবারগুলোর একটি ছিল এই ভাতের কোফতা।

বিদেশি যেসব পদ পছন্দ করতেন তিনি
চিংড়ির কাটলেট সে যুগে একটি অভাবনীয় পদ ছিল। বিদেশ থেকে আসে ঠাকুরবাড়িতে এই পদের রান্নার জন্য আবদার আসত রবীন্দ্রনাথের তরফে। এ ছাড়া হ্যাম প্যাটিসহ একাধিক খাবার ছিল তাঁর প্রিয়। বাঙালি রান্নার পদ যা মন ছুঁয়ে নিত। বলা হয় ঠাকুরবাড়িতে রবীন্দ্রনাথের জন্য বিশেষভাবে তৈরি হতো এঁচোড় মাংস। পাঁঠার মাংস রান্না তাঁর পছন্দের তালিকায় ছিল। তা ছাড়া ছানার চপ ছিল তাঁর প্রিয় খাদ্য। এ ছাড়া নিরামিষ রান্নার মধ্যে পাঁচফোড়নসহকারে রান্না ছিল তাঁর পছন্দের।

POST A COMMENT
Advertisement