
Our Legal Rights, IPC Section 498: বিবাহিত মহিলাদের প্রতি তাঁদের শ্বশুরবাড়িতে যে কোনও রকম নিগ্রহ বা নিষ্ঠুরতাই ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৮ ধারার আওতায় পড়ে। স্বামী ও শ্বশুরালয়ের আত্মীয়দের করা নির্যাতন মানসিক হোক বা শারীরিক, এই ধারায় বিবাহিত কোনও মহিলার সুরক্ষায় অভিযুক্তদের শাস্তির বিধান রয়েছে।
কিন্তু সাম্প্রতিক অতীতে এমন বেশ কয়েকটি মামলা সামনে এসেছে, যেখানে এই ৪৯৮ ধারা অন্যায় ভাবে প্রয়োগ করে, প্রকৃতপক্ষে নির্দোষ স্বামী বা তার পরিবার পরিজনকে হয়রান করা হয়েছে। মামলাগুলিতে দেখা গিয়েছে, বেশ কিছু মহিলা এই আইনের অপপ্রয়োগ করে তাঁর স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনদের থেকে মোটা টাকা আদায় করার চেষ্টা করেছেন বা তাঁদের নানা ভাবে হয়রান করেছেন। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৮ ধারার অপপ্রয়োগ থেকে কীভাবে বিবাহিত পুরুষরা ও তাঁদের পরিবার-পরিজনরা নিজেদের রক্ষা করবেন? কোন আইনে ৪৯৮ ধারায় মামলা হওয়া সত্ত্বেও নির্দোষ ব্যক্তিরা গ্রেফতারি এড়াতে পারেন বা এ ক্ষেত্রে পাল্টা কী কী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যায়? জেনে নিন এ প্রসঙ্গে ঠিক কী বলছেন কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী রাধামোহন রায়...
আইনজীবী রাধামোহন রায় বলেন, “ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৮ ধারা একদিকে যেমন বৈবাহিক নির্যাতনের শিকার হওয়া মহিলাদের কাছে আশির্বাদ, তেমনই নির্দোষ বিবাহিত পুরুষদের ক্ষেত্রে এই আইন অভিশাপ। কারণ, এই আইনের অপপ্রয়োগের ফলে সাম্প্রতিককালে অনেক নির্দোষ বিবাহিত ব্যক্তি ও তাঁর পরিবারের লোকজনকে অহেতুক গ্রেফতারি ও নানা প্রশাসনিক হয়রানির শিকার হতে হয়েছে।”
৪৯৮ ধারায় মামলা হলেই কি গ্রেফতার?
রাধামোহনবাবু বলেন, “২০২২ এসএসসি অনলাই: মুকেশ বনসল বনাম উত্তরপ্রদেশ এবং এমনই আর একটি মামলা যেটি বিহারে ওই একই বছরে সুপ্রিম কোর্টের নজরে আসে। এই দুই মামলায় সুপ্রিম কোর্টের মাননীয় বিচারপতিরা দেখেন, স্ত্রীকে কোনও নির্যাতন না করেও এই দুই মামলার অভিযুক্ত ব্যক্তিদের পুলিশি হেফাজতে যেতে হয়েছে। মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোয় এই দুটি মামলাতেই অভিযুক্ত ব্যক্তি ও তাঁদের পরিবারকে নানা নানা প্রশাসনিক হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। এর পরই ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৮ ধারায় মামলা হলে অভিযুক্তকে সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতার করা যাবে না বলে পুলিশকে নির্দেশ দেয় দেশের সর্বোচ্চ আদালত।”
বধূ নির্যাতনের মিথ্যা মামলা থেকে বাঁচার উপায়
রাধামোহনবাবু জানান, ২০২২ সালের উল্লেখিত দুটি মামলার প্রেক্ষিতে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৮ ধারায় সঙ্গে যুক্ত হয় সেকশন ৪০। ৪৯৮ ধারায় মামলা হওয়ার পর অভিযুক্তের সঙ্গে সঙ্গে বিনা বিচারে গ্রেফতারি রুখতে, প্রকৃত নির্দোষ স্বামীদের বধূ নির্যাতনের মিথ্যা মামলা থেকে বাঁচাতে ঢাল হয়ে দাঁড়ায় এই সেকশন ৪০। আইন বলছে, পুলিশ যখন ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৮ ধারায় কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ পাবে, সেক্ষেত্রে স্বতপ্রণোদিতভাবে সেকশন ৪০ প্রয়োগ করে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে থানায় ডেকে পাঠাবে মামলার দায়িত্বে থাকা আধিকারিক। অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদ করে যদি পুলিশ আধিকারিকের মনে হয় বধূ নির্যাতনের অভিযোগ মিথ্যা, তাহলে এ ক্ষেত্রে গ্রেফতারি এড়ানো যেতে পারে। তবে দুই পক্ষের আলোচনায় বিবাদ মিটিয়ে নেওয়া যেতে পারে অথবা মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে পাল্টা মামলার সুযোগ পেতে পারেন অভিযুক্ত স্বামী বা তাঁর পরিবার-পরিজন।
পুলিশ যদি সেকশন ৪০ প্রয়োগ না করেই সরাসরি গ্রেফতার করে?
রাধামোহনবাবু বলেন, “পুলিশ যদি এক পক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে সেকশন ৪০ প্রয়োগ না করেই বধূ নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্তকে সরাসরি গ্রেফতার করে, তাহলে তা তদন্তের গাফিলতি হিসাবেই বিবেচিত হবে। আর এ ক্ষেত্রে আদালতে পুলিশের বিরুদ্ধেও অভিযোগ জানানো যেতে পারে। অভিযোগ প্রমাণ হলে বধূ নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্ত জামিনের আবেদন করতে পারেন।
কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী রাধামোহন রায় বলেন, “আইনের প্রয়োগ বা অপপ্রয়োগ সবটাই নির্ভর করে মানুষের উদ্দেশ্য এবং অভিসন্ধির উপর। তাই যদি কখনও কাউকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়, সে ক্ষেত্রেও তাঁকে বাঁচানোর জন্য আইনের একাধিক উপায় ও ধারা রয়েছে। এর জন্য প্রয়োজন সঠিক আইনজীবীর পরামর্শ অনুযায়ী দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া।”