scorecardresearch
 

'লাগে টাকা, দেবে...' কে এই গৌরী সেন?

বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, ‘লাগে টাকা, দেবে গৌরী সেন’— জানেন নিশ্চয়ই! কে এই গৌরী সেন? কারও টাকার প্রয়োজন হলে তিনি কেন দিতে যাবেন? কীভাবে এই প্রবাদের সৃষ্টি হল বাংলায়? গৌরী সেন মহিলা না পুরুষ? গৌরী সেন কি কাল্পনিক চরিত্র নাকি সত্যিই আছেন? জেনে নিন...

Advertisement
বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, ‘লাগে টাকা, দেবে গৌরী সেন’— জানেন নিশ্চয়ই! কে এই গৌরী সেন? প্রতীকী ছবি। বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, ‘লাগে টাকা, দেবে গৌরী সেন’— জানেন নিশ্চয়ই! কে এই গৌরী সেন? প্রতীকী ছবি।
হাইলাইটস
  • বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, ‘লাগে টাকা, দেবে গৌরী সেন’— জানেন নিশ্চয়ই!
  • কে এই গৌরী সেন?
  • গৌরী সেন কি কাল্পনিক চরিত্র নাকি সত্যিই আছেন? জেনে নিন...

মঙ্গলবার মোদী সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের চতুর্থ সাধারণ বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। এই বাজেট অনুসারে, সরকারের ১ টাকা আয়ের ৩৫ পয়সাই ঋণের। একই সময়ে তার ২০ পয়সা সুদ পরিশোধের দিকে যায়। ফলে সব দিক সামলে দেশের সাধারণ মানুষের জন্য কিছু করতে চাইলেও হাতে তেমন কিছু থাকে না। দেশের আম জনতার জন্য টাকা জোগাতে কি এখন গৌরী সেনের দ্বারস্থ হতে হবে? 

বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, ‘লাগে টাকা, দেবে গৌরী সেন’— জানেন নিশ্চয়ই! কে এই গৌরী সেন? কারও টাকার প্রয়োজন হলে তিনি কেন দিতে যাবেন? কীভাবে এই প্রবাদের সৃষ্টি হল বাংলায়? গৌরী সেন মহিলা না পুরুষ? গৌরী সেন কি কাল্পনিক চরিত্র নাকি সত্যিই আছেন? জেনে নিন...

Gauri Sen

‘লাগে টাকা দেবে...’ প্রবাদটা আওড়ানোর সময় এত কথা অবশ্য আমরা কেউই ভাবিনা হয়তো! তবে কখনও সখনও হয়তো এই সব প্রশ্ন আমাদের মনেও উঁকি দিয়েছে! প্রথমেই বলে রাখি, এই গৌরী সেন কোনও কাল্পনিক চরিত্র নয়, পুরনো কলকাতায় সত্যিই একজন ছিলেন। তাঁর পুরো নাম গৌরীশঙ্কর সেন (মতান্তরে গৌরীকান্ত সেন)। নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে, ইনি কোনও মহিলা নন। ইতি শুরু থেকে কলকাতার বাসিন্দাও ছিলেন না। ষোড়শ শতাব্দীর শেষে হুগলী শহরের অন্তর্গত (সে কালে) বালিতে (মতান্তরে বহরমপুরে) অভিজাত সূবর্ণ বণিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন গৌরী সেন। তাঁর জন্মের সালটা সম্ভবত ১৫৮০।

Old Kolkata

এ বার প্রশ্ন হল, ‘লাগে টাকা, দেবে গৌরী সেন’ এই প্রবাদের জন্ম হল কীভাবে?
শোনা যায়, পারিবারিক আমদানি-রপ্তানি ব্যবসার হাত ধরে কাজের সূত্রে কলকাতায় আসেন গৌরীশঙ্কর সেন। কলকাতায় এসে বৈষ্ণব চরণ শেঠ নামে আর এক বিত্তবান ব্যবসায়ীর সঙ্গে অংশীদারিতে ব্যবসা শুরু করেন। যে সময়ের কথা বলছি, এ দেশে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ব্যবসা তখনও ফুলে ফেঁপে ওঠেনি। পর্তুগিজরাই ছিল তখন হুগলীর শাসনকর্তা, কলকাতার প্রধান বিদেশি বণিক।

Advertisement
Old Kolkata

শোনা যায়, পুরনো কলকাতার আদি বাসিন্দা বড়বাজারের বৈষ্ণব চরণ শেঠ আর গৌরীশঙ্কর সেন যৌথভাবে একটা দস্তা-বোঝাই জীর্ণ জাহাজ নিলামে কেনেন। পরে যাচাই করে দেখা যায়, দস্তা নয়, জাহাজ-বোঝাই রুপো কিনেছেন দস্তার দামে। ব্যস! রাতারাতি কপাল খুলে যায় গৌরীশঙ্কর সেনের। ভাগিদারির অংশে পাওয়া রুপোর দামও সে যুগে কয়েক কোটি টাকা! বৈষ্ণব চরণ শেঠ এই অপ্রত্যাশিত সৌভাগ্য গৌরীর কপাল জোরে হয়েছে বলে বিশ্বাস করে বাড়তি সমস্ত টাকা তাঁকেই দিয়ে দেন।

Old Kolkata

গৌরী সেন এই অকল্পনীয় ঐশ্বর্য গরীব-দুঃখী বা যাঁদের অর্থের প্রয়োজন, তাঁদের মধ্যেই বিলিয়ে দেবেন বলে স্থির করেন। শোনা যায়, আনুমানিক ১৫৯৯-১৬০০ সাল থেকেই দান-ধ্যান শুরু করেন গৌরীশঙ্কর সেন। জনশ্রুতি, সে সময় অসংখ্য মানুষকে বিনা শর্তে অর্থ দান করে ঋণমুক্ত হতে সাহায্য করেছিলেন গৌরী সেন। অনেক দরিদ্রের মামলা-মোকদ্দমার খরচও নাকি বহন করেছেন তিনি। এমনকি ১৫৯৯ সালে নির্মিত বাংলার প্রথম গির্জা ব্যান্ডেল চার্চের দেওয়ান ছিলেন তিনি। রাতারাতি কোটিপতি তো অনেকেই হয়েছেন, লাখা লাখ টাকা দান করেও সুনাম কামিয়েছেন কেউ কেউ। কিন্তু গৌরী সেনের মতো বাঙালির মনে, প্রবাদে এমন চিরস্থায়ী বন্দবস্ত (স্থান) আর কে করতে পেরেছে বলুন!

তথ্যসূত্র: কলিকাতা একালের ও সেকালের - হরিসাধন মুখোপাধ্যায়।
 

Advertisement