এশিয়া কাপে পাকিস্তানের নাটক মঞ্চস্থ হওয়ার আগেই ভেস্তে গেল! ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফটকে সরানোর দাবি করেছিল পিসিবি। তা মানল না আইসিসি। এরপরই সংযুক্ত আরব আমিরশাহির বিরুদ্ধে ম্যাচ খেলতে বেঁকে বসে পাকিস্তান। কিন্তু এক ঘণ্টা যেতে না যেতেই অসহায় আত্মসমর্পণ! শেষপর্যন্ত মাঠে নামতে বাধ্য হয় তারা। এমন ডিগবাজি কেন? আসলে সম্মানের চেয়েও বড় অর্থের মায়া!
ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফটকে নিয়ে গোঁসা পাকিস্তানের। তাঁকে না সরালে খেলবে না! বুধবার সন্ধ্যায় ম্যাচের আগে শুরু হয়েছিল নাটক। ৭০ মিনিট পর পাকিস্তান 'সারেন্ডার'। পুরো ঘটনাক্রম কী? স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টাতে হোটেল ছাড়েননি শাহিন আফ্রিদিরা। হোটেলের লবিতে অপেক্ষামান বাস। সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিট নাগাদ দলের কিট পৌঁছনো হয় বাসে। সেই সময় ক্রিকেটারদের হোটেলের ঘরে থাকার নির্দেশ দেয় পিসিবি। সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিট নাগাদ খবর আসে, রামিজ রাজার সঙ্গে বৈঠক করছেন পিসিবি প্রধান। সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ খবর দলকে স্টেডিয়ামে যাওয়ার নির্দেশ দেয় পাক ক্রিকেট বোর্ড। সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিট নাগাদ স্টেডিয়ামের উদ্দেশে রওনা দেন ক্রিকেটাররা। পাকিস্তানের না খেলার হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফটকে সরানো দেওয়া হয়নি। যার অর্থ, ৭০ মিনিটেই পাকিস্তানের নাটক শেষ!
গোটা নাটকে পাকিস্তানের ঝুলি কার্যত খালি। ম্যাচ রেফারিকে অপসারণের দাবি মানা হয়নি। দাবি না মানা হলে ম্যাচ বাতিল করার হুমকি দিয়েছিল পিসিবি। তারপর খবর আসে, রেফারি বহাল থাকবেন। আর সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে ম্যাচ খেলবে পাকিস্তান। জানা গিয়েছে, আইসিসির কাছে দুটি প্রধান দাবি জানিয়েছিল পিসিবি।
পিসিবির প্রথম দাবি: এশিয়া কাপ থেকে সরানো হোক অ্যান্ডি পাইক্রফটকে। পাকিস্তান বোর্ডের অভিযোগ, পাইক্রফটের আম্পায়ারিং পক্ষপাতদুষ্ট। পাকিস্তান দলের বিরুদ্ধে অন্যায্য সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পিসিবির দাবি ছিল, এমন একজন আম্পায়ারকে দিয়ে সুষ্ঠুভাবে খেলা সম্ভব নয়।
পিসিবির দ্বিতীয় দাবি: ভারতীয় দলের অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদবের বিরুদ্ধে আইসিসির কাছে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছিল পিসিবি। তাদের অভিযোগ, ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের পরে সূর্যকুমার যাদব রাজনৈতিক মন্তব্য করেছেন। যা ক্রিকেটের মর্যাদার পরিপন্থী। সূর্যকুমারকে শাস্তি দেওয়া হোক, যাতে ভবিষ্যতে কোনও ক্রিকেটার এই ধরনের রাজনৈতিক মন্তব্য না করতে পারেন।
পাকিস্তানের দু'টি দাবিই নাকচ করে দেয় আইসিসি।
পিসিবি সরকারের পুতুল হিসেবে রয়ে গেছে। বাস্তবে, পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের নিজের উপর কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। এটি মূলত পাকিস্তান সরকারের পুতুল হিসেবে কাজ করে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বোর্ডের উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাখেন, নির্বাচন কর্মকর্তা নিয়োগ করেন। তিনি পিসিবির দুই সদস্যকে মনোনীত করেন। তিনি অডিট কমিটির প্রধানও নিযুক্ত করেন। চেয়ারম্যান বা পুরো বোর্ডকে অপসারণের ক্ষমতাও তার আছে।
পাকিস্তান কেন পিছু হটল?
পিসিবি চেয়ারম্যান এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নকভি আসলে শাঁখের করাতে পড়েছিলেন। একদিকে, তাঁকে দেশে নিজের মুখরক্ষা করতে হত। অন্যদিকে, কোটি কোটি টাকার লোকসান। শ্যাম ও কূল রক্ষার জন্য একটা নাটক করলেন নকভি। টুর্নামেন্ট থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েও ম্যাচ খেলতে রাজি হলেন।
১৪১ কোটি টাকার লোকসানের আশঙ্কায় পিসিবি পিছু হটল?
সংবাদ সংস্থা পিটিআই দাবি করেছে, এশিয়া কাপ বয়কট করলে পাকিস্তানের প্রায় ১ কোটি ৬০ লক্ষ ডলার লোকসান হত। ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ১৪১ কোটি টাকা। পিসিবির বার্ষিক বাজেট প্রায় ২২৭ মিলিয়ন ডলার। ১৬ মিলিয়ন ডলার মানে আয়ের প্রায় ৭ শতাংশ! আর ভাঁড়ে মা ভবানী দশা পাকিস্তানের। ফলে আত্মসমর্পণ ছাড়া আর উপায় ছিল না।