ICC World Cup 2023 Timed Out: বিশ্বকাপে বাংলাদেশ বনাম শ্রীলঙ্কার আপাত গুরুত্বহীন একটা ম্যাচ। এই বিশ্বকাপের নিরিখে দুদলের যে কেউ হারুক কিংবা জিতুক তাতে কিছুই আসত-যেত না। বাংলাদেশের কাছে একটা চ্যালেঞ্জ ছিল পয়েন্ট টেবলে কমপক্ষে ৮-এ উঠে আসা। তাতে ২০২৪-এ চ্যালেঞ্জার ট্রফি খেলার সুযোগ মিলবে। এ ছাড়া আর তেমন কোনও গুরুত্ব নেই। কিন্তু সেই সাদামাটা ম্য়াচই হঠাৎ এখন চর্চার তুঙ্গে। শাপ-শাপান্ত থেকে ক্ষোভ-বিক্ষোভ শুরু হয়েছে ম্যাচকে ঘিরে। লক্ষ্য বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব-অল-হাসান। এর কারণ এই ম্যাচে ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম টাইমড আউট হয়েছেন শ্রীলঙ্কার অলরাউন্ডার তথা প্রাক্তন অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ। আর এরপর থেকেই মুণ্ডপাত চলছে সাকিব-অল-হাসানের। এমন আউটের আবেদন করাকে ক্রিকেটিয় স্পিরিটের পরিপন্থী বলে দাবি করা হয়েছে। যার জবাবও দিয়েছেন সাকিব। কিন্তু আসলে কী বলা আছে আইনে, কেন চালু হয়েছিল আইন? আসুন জেনে নিই...
কী বলছে আইন?
এমসিসির আইনের ৪০.১.১ নম্বর ধারা (MCC)অনুযায়ী, ‘একজন ব্যাটারের আউট হয়ে যাওয়া বা রিটায়ার্ড হার্টের পর যে ব্যাটসম্যান আসবেন, তাকে অথবা অন্য ব্যাটসম্যানকে ৩ মিনিটের মধ্যে বলের মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে হবে। অন্যথায় যে ব্যাটসম্যান নামছেন, তাকে আউট হতে হবে।’
বিস্তারিত ব্যাখ্যা
ক্রিকেটের এর আইন ৪০-এর বিধানে বলা হয়েছে যে আগত ব্যাটসম্যানকে অবশ্যই নজর রাখতে হবে যে শেষ উইকেটটি পড়ার তিন মিনিটের মধ্যে তাঁকে গার্ড নিতে হবে অথবা যদি তিনি নন স্ট্রাইকার হন, তাহলে নিজের পজিশনে দাঁড়াতে হবে। পরের বলটি গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। যদি এই প্রয়োজনীয়তা পূরণ না করা হয় তবে আগত ব্যাটসম্যানকে আবেদন এর ভিত্তিতে টাইমড আউট দেওয়া হবে।
"আগত ব্যাটসম্যান" এমন কোনও ব্যাটসম্যান হতে পারেন যিনি এখনও ব্যাটিং করেননি। ক্রিকেটে কোনও নির্ধারিত ব্যাটিং অর্ডার নেই। আবেদন করার সময় যদি কোনও ব্যাটসম্যান মাঠে পা না রাখেন তবে ব্যাটিং অধিনায়ক এখনও ব্যাটিং করেননি এমন খেলোয়াড়দের মধ্যে থেকে যে কোনও এক জনকে বেছে নিতে পারেন। ফলে যদি পরবর্তী ব্যাটসম্যানটির কিছুটা বিলম্ব হয় তবে অধিনায়ক তাঁর সবচেয়ে খারাপ ব্যাটারটিকে (যিনি সাধারণত ১১ নম্বরের হয়ে থাকেন) ঐ আউটের জন্য বলিদান দেবেন বলে মনে করা হয়।
যদি দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরও কোনও ব্যাটসম্যানই উইকেটে না আসেন, তবে আম্পায়াররা বিবেচনা করবেন যে ব্যাটিং দল খেলতে অস্বীকার করছেন এবং আম্পায়াররা ম্যাচটি অন্য দলের হাতে পুরস্কার হিসাবে তুলে দেবেন। কিন্তু যদি কোনও অনিবার্য কারণে যেমন অসুস্থতার কারণে কিংবা অন্য কোনও গ্রাহ্যগত কারণে বাকি সমস্ত যোগ্য খেলোয়াড় ব্যাট করতে না পারেন, তবে তাঁদের টাইমড আউট দেওয়া হয় না।
টি টোয়েন্টিতে আইনে বদল আছে
টি-২০ ক্রিকেটের নিয়ম অনুসারে আইনটিতে বর্ণিত তিন মিনিটের পরিবর্তে একজন ব্যাটসম্যানকে ৯০ সেকেন্ডের মধ্যে মাঠে নামতে হয়। ফলে প্যাভিলিয়নে বসার পরিবর্তে পরবর্তী ব্যাটসম্যানটি বাউন্ডারির ঠিক পরেই অবস্থিত একটি বেঞ্চে তৈরি করা ডাগ আউটে অপেক্ষা করেন।
প্লেয়িং কন্ডিশন
আইসিসির বিশেষ নিয়মে এটিকে ২ মিনিট বলা রয়েছে। বিশ্বকাপের প্লেয়িং কন্ডিশনে বলা আছে, এক্ষেত্রেও সময়টা ২ মিনিট। ম্যাথিউজ এদিন অতিক্রম করে গেছেন দুটিই। যার ফলে, বাংলাদেশের আবেদনের প্রেক্ষিতে তাকে আউট দেন আম্পায়াররা।
কেন এমন আইন করা হয়েছে?
ক্রিকেট খেলা শুরু যেমন ব্রিটিশদের হাত ধরে, তেমনই বিভিন্ন সময় তাঁরাই প্রাথমিকভাবে নানা রকম ঘটনার মুখে পড়ে। অনেকে আউট হওয়ার পর অযথা সময় নষ্ট করতেন। কেউ শৌচাগারে গিয়েছেন তো, কেউ হাতের সিগারেট শেষ করতে ব্যস্ত। এই রকম ঘটতে থাকায় খেলায় অযথা বিলম্ব হত। তা রুখতেই এই বন্দোবস্ত। এই নিয়মটির উদ্দেশ্য হল খেলায় কোনও অপ্রয়োজনীয় দেরি না করাকে নিশ্চিত করা। এই ব্যাপারটি সহজেই এড়ানো যায় এবং ব্যাটসম্যানের 'টাইমড আউট' হওয়া খুব অস্বাভাবিক ঘটনা ব'লে বিবেচনা করা যায়। ক্রিকেটের কয়েকশো বছরের ইতিহাসে নভেম্বর ২০২৩-এর হিসাব অনুযায়ী ৬ নভেম্বর অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজের আউটটাই প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ঘটা টাইমড আউট। ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে সব শুদ্ধ কেবল ৬ টি উদাহরণ রয়েছে।