বিশ্বকাপে বাংলাদেশ বনাম শ্রীলঙ্কার আপাত গুরুত্বহীন একটা ম্যাচ। এই বিশ্বকাপের নিরিখে দুদলের যে কেউ হারুক কিংবা জিতুক তাতে কিছুই আসত-যেত না। বাংলাদেশের কাছে একটা চ্যালেঞ্জ ছিল পয়েন্ট টেবলে কমপক্ষে ৮-এ উঠে আসা। তাতে ২০২৪-এ চ্যালেঞ্জার ট্রফি খেলার সুযোগ মিলবে। এ ছাড়া আর তেমন কোনও গুরুত্ব নেই। কিন্তু সেই সাদামাটা ম্য়াচই হঠাৎ এখন চর্চার তুঙ্গে। শাপ-শাপান্ত থেকে ক্ষোভ-বিক্ষোভ শুরু হয়েছে ম্যাচকে ঘিরে। লক্ষ্য বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব-অল-হাসান। এর কারণ এই ম্যাচে ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম টাইমড আউট হয়েছেন শ্রীলঙ্কার অলরাউন্ডার তথা প্রাক্তন অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ। আর এরপর থেকেই মুণ্ডপাত চলছে সাকিব-অল-হাসানের। এমন আউটের আবেদন করাকে ক্রিকেটিয় স্পিরিটের পরিপন্থী বলে দাবি করা হয়েছে। যার জবাব দিয়েছেন সাকিব।
আক্রমণের মুখে কী বললেন সাকিব?
সাকিব অবশ্য এমন ঘটনার জন্য অনুতপ্ত নন। তিনি সেই সময় জয়টাকেই মুখ্য বলে মনে করছিলেন বলে দাবি করেন। তাঁর দাবি দেশের জয়ের জন্য সব কিছু করতে পারেন তিনি। ম্যাচের শেষে প্রেস কনফারেন্সে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সাকিব বলেন, "আমাদের একজন ফিল্ডার আমার কাছে এসে বললেন, আমি আপিল করলে সে আউট হয়ে যাবে। এরপর আবেদন করি। আম্পায়ার আমাকে জিজ্ঞেস করলেন আমি সিরিয়াস কিনা। এটা আইনে আছে। এটা ঠিক না ভুল জানি না। আমার মনে হচ্ছিল আমি যুদ্ধে আছি। আমার যা করার ছিল, আমি তাই করেছি। বিতর্ক থাকবেই। আজ যে এই নিয়ম (টাইম আউট) আমাদের সাহায্য করেছে, আমি তা অস্বীকার করব না!"
এদিন দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজকে টাইমড আউট করেন। সে কারণে তিনি ব্যাট করতে নেমেও কোনও বল না খেলেই প্যাভিলিয়নে ফিরে যান। আসলে সাদিরা সমরবিক্রমা আউট হওয়ার পর ম্যাথিউজ ব্যাট করতে ক্রিজে আসেন। কিন্তু হেলমেটের ফিতে ছেঁড়া থাকার কারণে স্টান্স না নিয়ে ফের হেলমেট চেয়ে পাঠান। দ্বাদশ ব্যক্তি হেলমেট নিয়ে মাঠে আসেন। ম্যাথিউজ হেলমেট ঠিক করেন। ততক্ষণে নতুন ব্যাটার আসার নির্ধারিত সময় ২ মিনিট পেরিয়ে গিয়েছে। আর সেকারণেই বাংলাদেশ ক্রিকেট দল টাইমড আউটের আবেদন করে। আম্পায়ার আইন মেনে আউট দেন।
এই ঘটনার পর মাঠের মধ্যেই সাকিবকে ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে যান। কিন্তু সাকিব জানিয়ে দেন, তিনি আইন মেনে আবেদন করেছেন। এখন সম্পূর্ণটাই আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত। এরপর বেশ খানিকক্ষণ তর্কও করেন ম্যাথিউজ। কিন্তু, নিয়ম তো নিয়মই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এই প্রথমবার কোনও ব্যাটারকে টাইমড আউট হলেন।
স্পোর্টসম্যান স্পিরিটের চূড়ান্ত অভাব বাংলাদেশে, দাবি ক্রিকেট সমর্থদের
গোটা বিশ্বের ক্রিকেট সমর্থকেরা ইতিমধ্যে সাকিব আল হাসানের সমালোচনা শুরু করে দিয়েছেন। তাঁদের মতে, ক্রিকেটকে এতদিন ধরে ভদ্রলোকের খেলা বলা হত। কিন্তু, সোমবার সাকিব যে মানসিকতার পরিচয় দিলেন, এই খেলার ভদ্রতা ধুলোয় মিশে গেল। কারণ এই খেলায় কখনও কখনও দেরি হতেও পারে। কিন্তু, কেউ কখনও এমন আউটের আবেদন আগে কখনও করেননি। মাঠে উপস্থিত ক্রিকেটাররা ড্রেসিংরুম থেকে হামেশাই ব্যাট, গ্লাভস কিংবা হেলমেট চেয়ে পাঠান। সেকারণেই সকলে একবাক্যে স্বীকার করছেন যে সাকিবের এই মানসিকতা একেবারেই অখেলোয়াড়সুলভ। সোশ্যাল মিডিয়ায় ইতিমধ্যেই বইতে শুরু করেছে নিন্দার ঝড়।