লিডসে ইংল্যান্ডের কাছে প্রথম টেস্টে ৫ উইকেটে হেরেছে ভারত। যেভাবে খেলা এগিয়েছিল তাতে মনে হয়েছিল ভারতীয় দল সহজেই এই ম্যাচটি জিততে পারত। কিন্তু দুর্বল ফিল্ডিং, অতিরিক্ত উৎসাহ, গড়পড়তা অধিনায়কত্ব এবং নীচুতলার ব্যাটসম্যানদের হতাশাজনক পারফরম্যান্সের কারণে টিম ইন্ডিয়া হেরে যায়। এই পরাজয়ের কারণে পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ভারতীয় দল ০-১ ব্যবধানে পিছিয়ে গিয়েছে। টেস্ট সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ ২ জুলাই থেকে এজবাস্টনে শুরু হবে।
রোহিত শর্মা এবং বিরাট কোহলি টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার পর এটিই ছিল ভারতীয় দলের প্রথম টেস্ট ম্যাচ। এই ম্যাচে টিম ইন্ডিয়ার ব্যাটিং দুর্দান্ত হয়েছে। তবে বিশেষ করে ফিল্ডিংয়ের সময় কোহলির অনুপস্থিতি টের পাওয়া গিয়েছে। মাঠে থাকাকালীন কোহলিকে সহ খেলোয়াড়দের মনোবল বাড়াতে দেখা যেত। স্লিপে সেরা ফিল্ডারদের একজন হিসেবেও বিবেচনা করা হয় তাঁকে। কোহলি এবং রোহিত শর্মার মতো সিনিয়র খেলোয়াড়দের ছাড়া ভারতীয় দল প্রাথমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি।
লিডস টেস্টের মাধ্যমে ৫টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও উঠে এসেছে...
বুমরার সাফল্য ছাড়া জয় পাওয়া যায় না
জসপ্রীত বুমরা আবারও দেখিয়ে দিলেন যে তিনিই টিম ইন্ডিয়ার বোলিংয়ের স্তম্ভ। তাঁর তীক্ষ্ণ বোলিং ছাড়া ভারতীয় দলের জয় কল্পনা করা অসম্পূর্ণ। বুমরা প্রথম ইনিংসে পাঁচ উইকেট নেন, যার কারণে ভারতীয় দল ৬ রানের লিড নিয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে বুমরা কোনও উইকেট পাননি, যার কারণে দলকে ছত্রভঙ্গ দেখাচ্ছিল। এর থেকে প্রমাণিত হয় যে এই ম্যাচে ভারতীয় দল সম্পূর্ণরূপে বুমরার ওপর নির্ভরশীল ছিল। দলের জন্য কেবল বুমরার ওপর নির্ভর করা ঠিক নয়।
নতুন অধিনায়ক প্রয়োজনীয় চাপ তৈরি করতে পারেননি
প্রথমবারের মতো টেস্ট দলকে নেতৃত্ব দেওয়া শুভমন গিলের মধ্যে অধিনায়কত্বের অভিজ্ঞতার অভাব স্পষ্টভাবে দেখা গিয়েছে। শুভমন অবশ্যই ব্যাট হাতে ভাল পারফর্ম করেছেন এবং সেঞ্চুরি করেছেন, কিন্তু অধিনায়ক হিসেবে তিনি চাপ তৈরি করতে পারেননি। ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে তাঁর কৌশলের অভাব স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছিল। অধিনায়ক হিসেবে শুভমন বোলারদের সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারেননি। ফিল্ডিং প্লেসমেন্টও রক্ষণাত্মক দেখাচ্ছিল তাঁকে।
ব্যাটিং নিয়ে গর্বিত, সেঞ্চুরি করার পর খুশি
এই ম্যাচে ভারতীয় দলের থেকে পাঁচটি সেঞ্চুরি এসেছে, তবুও হারতে হয়েছে। ঋষভ পন্ত উভয় ইনিংসেই সেঞ্চুরি করেছেন। একই সঙ্গে অধিনায়ক শুভমান গিল, যশস্বী জয়সওয়াল এবং কেএল রাহুলও সেঞ্চুরি করেছেন। ব্যক্তিগত মাইলফলক অর্জন করা ঠিক আছে, কিন্তু দল যখন জিততে পারে না তখন সেঞ্চুরি বা ডাবল সেঞ্চুরি করে কী লাভ? খেলোয়াড়রা তাঁদের ব্যাটিং নিয়ে গর্ব করতে পারেন, কিন্তু দলের পরাজয়ের কারণে তাঁদের মুখ শুকিয়ে গিয়েছে।
জয়ের খিদে শারীরিক ভাষায় দেখা যায়নি
ম্যাচের শেষ দিনে যখন ইংল্যান্ড দল দ্রুত রান করে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়, তখন ভারতীয় খেলোয়াড়দের শারীরিক ভাষা কমতে দেখা যায়। ভারতীয় খেলোয়াড়দের মধ্যে ক্লান্তি এবং বিভ্রান্তি স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছিল। খেলোয়াড়দের মধ্যে ইচ্ছাশক্তির অভাবও ছিল, পাশাপাশি দলের কৌশলও ঠিক দেখাচ্ছিল না। মনে হচ্ছিল ম্যাচ জেতার খিদে কোথাও মিলিয়ে গিয়েছে।
ভারসাম্যপূর্ণ দল তৈরির দিকে মনোযোগ দিতে হবে
লিডস টেস্ট আবারও প্রমাণ করেছে যে কেবল প্রতিভা যথেষ্ট নয়, অভিজ্ঞতা এবং মানসিক শক্তিও সমান গুরুত্বপূর্ণ। আসন্ন ম্যাচগুলিতে ভারতকে এখন একটি বিশেষ গেম প্ল্যান তৈরি করতে হবে। একই সঙ্গে দল নির্বাচনের দিকেও মনোযোগ দেওয়া হবে। পরের ম্যাচে আর্শদীপ সিংকে সুযোগ দেওয়া ঠিক হবে। কারণ তিনি একজন বাঁহাতি ফাস্ট বোলার, যার কারণে পেস আক্রমণ শক্তিশালী হবে। চায়নাম্যান কুলদীপ যাদবকেও খেলার জন্য বিবেচনা করা উচিত, যার যে কোনও পিচে বল ঘোরানোর ক্ষমতা রয়েছে।