২০১৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় টেস্ট সিরিজ খেলতে গিয়েছিল ভারতীয় দল। সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ হেরে আগেই সিরিজ হাতছাড়া হয়ে গিয়েছিল বিরাট কোহলির টিম ইন্ডিয়ার। কিন্তু তৃতীয় টেস্ট ছিল সম্মানরক্ষার লড়াই। জোহানেসবার্গে সেই টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার দরকার ছিল মাত্র ২৪১ রান। একসময় ম্যাচ ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার মুঠোয়। কিন্তু এক 'গরম' ঘটনার জেরে বদলে যায় পুরো চিত্র। আর সেই ঘটনার নায়ক—মহম্মদ শামি।
'সব খিদে কি বিরিয়ানিতে মিটে গেল?'
সম্প্রতি একটি টিভি সাক্ষাৎকারে ভারতের প্রাক্তন হেড কোচ রবি শাস্ত্রী সেই ম্যাচের মজার কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার কথা জানিয়েছেন। বলছেন, চতুর্থ দিনের দুপুরে খাবারের সময় শামিকে তিনি বিরিয়ানি খেতে দেখেন। হালকা হেসে শাস্ত্রী জিজ্ঞেস করেন, 'সব খিদে কি বিরিয়ানিতে মিটে গেল?' এই কথাটা শুনেই রেগে আগুন হয়ে যান শামি! রবি শাস্ত্রীর কথায়, 'ও বিরিয়ানির প্লেটটা সরিয়ে দিল। বলল, বিরিয়ানি নিকুচি করেছে, আমি খেলতে নামছি!'
বিরিয়ানি সরিয়ে রাখা রাগী শামি
শুধু রবি শাস্ত্রী নন, প্রাক্তন বোলিং কোচ ভারত অরুণও সেই মুহূর্তের কথা বলেন। তিনি জানান, শাস্ত্রী এসে তাঁকে বলেন, 'শামি এখন রেগে আছে, ওকে ওর মতো খেলতে দাও। ওকে বল, মাঠে গিয়ে কয়েকটা উইকেট তুলে নিয়ে তারপর কথা বলতে আসুক!' বিরিয়ানি সরিয়ে রাখা রাগী শামি এরপর যেভাবে বল করলেন, তাতে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং লাইনআপ যেন ভেঙে পড়ে। লাঞ্চের পর মাত্র ১২.৩ ওভার বল করে শামি তুলে নেন ৫টি উইকেট। দক্ষিণ আফ্রিকা ১৪৪/৩ থেকে গড়ায় ১৭৭ অলআউট। ভারত ম্যাচটা জেতে ৬৩ রানে। রক্ষা হয় হোয়াইটওয়াশের লজ্জা থেকে।
ম্যাচ জেতার পর রবি শাস্ত্রী ও ভারত অরুণ আবার শামিকে একটি বিরিয়ানি প্লেট তুলে দেন, হেসে বলেন, 'এবার যত খুশি খা!' শামির উত্তর ছিল আরও মজার,'আমায় রাগিও দিও, তাহলেই আমি ভাল খেলি!' এই ঘটনা শুধু একটি ক্রিকেট ম্যাচ নয়, একজন খেলোয়াড়ের মানসিক অবস্থার গুরুত্বও তুলে ধরে। রাগ, ক্ষোভ—এই আবেগগুলোকে যদি সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায়, তাহলে সেখান থেকেই জন্ম নিতে পারে জয়ের রাস্তা। শামির সেই স্পেল ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম স্মরণীয় স্পেল হয়ে রয়েছে আজও।
সেই শামি এখন ভারতীয় টেস্ট দলে নেই
দুঃখের বিষয়, সেই শামি এখন ভারতীয় টেস্ট দলে নেই। ২০২৩ সালের বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল ছিল তাঁর শেষ ম্যাচ। চোট-আঘাতের জন্যই ইংল্যান্ড সিরিজের দলেও জায়গা হয়নি তাঁর। ৬৪টি টেস্টে তাঁর উইকেট সংখ্যা ২২৯, গড় ২৭.৭১—যেখানে রয়েছে ৬টি পাঁচ উইকেটের ইনিংস।
তবে যেভাবে 'বিরিয়ানি'কে কেন্দ্র করে শামি নিজের রাগকে পারফরম্যান্সে পরিণত করেছিলেন, সেটা শুধু হাস্যকর স্মৃতি নয়—তা এক ধরনের অনুপ্রেরণা। ক্রিকেটে শুধু স্কিল নয়, মানসিক শক্তিও বড়ো ফ্যাক্টর। আর সেই মানসিক শক্তির এক দুর্দান্ত উদাহরণ হলেন মোহাম্মদ শামি।