চুলে হালকা পাক ধরেছে অনেক আগেই। গতি কমেছে, বারবারই উঠে এসেছে বয়সের প্রসঙ্গ। তবু মাঠে পা রাখলেই বোঝা যায়—ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো এখনও থামেননি। বরং তিনি যেন এক চলমান অধ্যায়, যার প্রতিটি পাতায় লুকিয়ে আছে অজস্র রোমাঞ্চ। রবিবার রাতে সেই অধ্যায়ের এক নতুন পর্ব লিখলেন তিনি। মিউনিখে স্পেনকে হারিয়ে দ্বিতীয়বার নেশনস লিগ (UEFA Nations League) জিতল পর্তুগাল। আর ম্যাচ শেষে কান্নায় ভেঙে পড়লেন রোনাল্ডো—চোখে জল, গালে হাসি, বুকভরা গর্ব।
আন্তর্জাতিক ফুটবলের সর্বোচ্চ গোলদাতার আসনে
ফাইনালের আগে স্পেন ছিল ফেভারিট। ইউরো চ্যাম্পিয়নরা খেলায় আধিপত্য দেখিয়েওছিল। প্রথমে মার্টিন জুবিমেন্ডি এবং পরে মিকেল ওয়ারজাবালের গোলে এগিয়ে যায় তারা। মাঝখানে পর্তুগালের হয়ে একমাত্র গোলটি করেন নুনো মেন্ডেস। প্রথমার্ধ শেষে স্পেন ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে বদলে যান রোনাল্ডো। বয়স ৩৮ পেরিয়েছে। তবে শরীরের চেয়ে মনের জেদটাই বড়। ৬৩ মিনিটে কাছ থেকে দুরন্ত গোল করে ম্যাচে ফেরান দলকে। সেটিই ছিল তাঁর আন্তর্জাতিক কেরিয়ারের ১৩৮তম গোল—যা তাঁকে আরও দূরে নিয়ে গেল আন্তর্জাতিক ফুটবলের সর্বোচ্চ গোলদাতার আসনে। লিওনেল মেসি বা সুনীল ছেত্রীর মতো তারকারাও বহু পেছনে।
É NOSSA!!!!!! 🏆 pic.twitter.com/YPqYflKKiE
— Cristiano Ronaldo (@Cristiano) June 9, 2025
দাঁড়িয়ে পড়ে গোটা স্টেডিয়াম
সেই গোলের পর গোটা ম্যাচই যেন তাঁর নিয়ন্ত্রণে। তবে কিছুক্ষণ পরই চোট পান রোনাল্ডো। উঠে দাঁড়ানোর সময় দাঁড়িয়ে পড়ে গোটা স্টেডিয়াম, হাততালিতে ভরে যায় স্টেডিয়াম। কোচ রোবের্তো মার্টিনেজ এসে তাঁকে জড়িয়ে ধরেন। দর্শকের অভিবাদন, সতীর্থদের ভালোবাসা—সব মিলে এক আবেগঘন মুহূর্ত তৈরি হয়। ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। কেউই গোল করতে না পারায় নির্ধারণ হয় ভাগ্য টাইব্রেকারে। সেখানেই স্পেনের বিপর্যয়। তাদের হয়ে আলভারো মোরাতা পেনাল্টি মিস করেন। আর সেই সুযোগ লুফে নেন রুবেন নেভেস। নিশ্চিত করেন পর্তুগালের জয়।
I’m crying real tears guys…You deserve this and much more Ronaldo
— BeastBron💜💛 (@bronisabeast) June 8, 2025
🐐🖤 pic.twitter.com/rHvyZfnwqR
ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে জল
আর ঠিক তখনই দেখা যায় আবেগময় সেই দৃশ্য। সাইডলাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে জল। কাঁদছেন তিনি। কারণ তিনি জানেন, এটাই হয়তো তাঁর শেষ আন্তর্জাতিক ফাইনাল, শেষ আন্তর্জাতিক ট্রফি। আর সেই ট্রফিও এল তাঁর হাত ধরেই।
ফুটবল বিশ্বে যখন নতুন প্রজন্মের আবির্ভাব, তখন রোনাল্ডোর মতো ‘বুড়ো’ একজন নিজের জাত চেনালেন আরও একবার। যিনি শুধু গোল করেন না, দলকে নেতৃত্বও দেন। তাঁর গোল, তাঁর লড়াই, তাঁর মানসিকতা—সবই যেন দলকে এগিয়ে দেয় এক নতুন দিগন্তে। এটা শুধু জয়ের গল্প নয়। এটা রোনাল্ডোর গল্প। একটা প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করা, হার না মানা মানসিকতার গল্প। যে গল্পে ফুটবল শুধু খেলা নয়, এক অনুভব। আর সেই অনুভবের কেন্দ্রবিন্দুতে আজও দাঁড়িয়ে আছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো।
তিনি প্রমাণ করে দিলেন, বয়স যতই হোক, যদি জেদ থাকে, যদি বিশ্বাস থাকে, তবে ‘শেষ’ শব্দটা শুধু অভিধানে থাকে, জীবনে নয়। সেই কারণেই তো, আজও ‘বুড়ো’ রোনাল্ডোর ম্যাজিক অটুট।