মাচ শেষ হতেই লাল-হলুদ গ্যালারিতে যখন হাজার হাজার মোবাইল ফ্ল্যাশ জ্বলে উঠেছে, ঠিক তখন শূন্য মোহনবাগান গ্যালারি। আর সেই দুটো লম্বা ব্যানার? যার একটায় লেখা লেখা, 'মাঝি ধরল হাল/ নৌকা তুললে পাল।' আরেকটাতে 'বল ছিড়ল জাল/ নিভল ভাঙা মশাল।' সেই ব্যানার দুটো ধীরে-ধীরে তুলে নিলেন সেই মোহনবাগান সমর্থকরা, যাঁরা গ্যালারিতে তা এনেছিলেন।
আর দুরন্ত জয়ের পর ইস্টবেঙ্গল ফুটবলাররা যখন ভিকটি ল্যাপ দিচ্ছেন তখন মোহনবাগান গ্যালারি খাঁ-খাঁ করছে। লাল-হলুদ সমর্থকদের স্লোগানের মধ্যে দিয়েই স্টেডিয়াম ছাড়লেন মোহনবাগান ফুটবলাররা। এই দৃশ্য দেখে নিজেকে শান্ত রাখতে পারলেন না জেসন কামিংস। বাসের মধ্যে বসে লাল-হলুদ সমর্থকদের উদ্দেশে অশালীন অঙ্গভঙ্গি করে গেলেন এই অজি বিশ্বকাপার।
আর মোহনবাগান কোচ জোসে মোলিনা? যেন বিধ্বস্ত সেনাপতি। হারের পর একই রকম যন্ত্রণায় বিদ্ধ তিনিও। সমর্থকদের উদ্দেশে মোহনবাগান কোচ বলছিলেন, 'আমাদের সমর্থকদের জন্য দুঃখ লাগছে। জিততে পারলাম না। তবে আগামীকাল আবার সূর্য উঠবে। আশা করব ওঁদের হাসি মুখ আবার দেখতে পারব।' হারের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি আরও যোগ করেন, 'প্রথমার্ধে আমাদের মাঝমাঠ ভালো খেলতে পারেনি। গোলের সামনে গিয়েও গোল করতে পারিনি। তুলনায় দ্বিতীয়ার্ধে ছেলেরা চারিত্রিক দৃঢ়তার পরিচয় দেখিয়েছে।'
মনবীর, শুভাশিসরা ছিলেন না বলে মোহনবাগান জিততে পারেনি, এই যুক্তি মানছেন না মোহনবাগান কোচ। বরং এই জয়ের জন্য প্রতিপক্ষকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তিনি। এমনকী জেসন কামিন্সদের ফিটনেসে ঘাটতি ছিল বলে ম্যাচে হার, সেটাও মনতে চাননি মলিনা।
এদিন ম্যাচের ঠিক আগে, তখনও সূর্য পুরোপুরি ঢলে যায়নি পশ্চিমে। যুবভারতীতের গেটে উপস্থিত হাজার হাজার ফুটবলপ্রেমীর মাঝেও ধরা গায়ে, হাতে মোহনবাগান পতাকা নিয়ে ভিআইপি গেটের সামনে ঘুরে বেড়ানো দীর্ঘঙ্গী ফুটবলপ্রেমীকে দেখে বুঝে নিতে অসুবিধা হয়নি সদ্য প্রিয়জনকে হারিয়েছেন তিনি। এয়ারপোর্ট অঞ্চল থেকে আসা এই মোহনবাগান সমর্থক প্রসেনজিৎ চক্রবর্তীর এক সপ্তাহ আগে মা মারা গিয়েছেন। আর একমাস আগে বাবা। একমাসের মধ্যে দু'জন প্রিয়জনকে হারিয়েও প্রসেনজিৎ ঘরে বসে থাকতে পারেননি। কাছের এক বন্ধুকে নিয়ে চলে এসেছিলেন যুবভারতীতে। গেটে ঢোকার সময় বলেছিলেন, "মা-বাবা যখন ছিলেন, তখন বাড়িতে বলে আসতাম মোহনবাগানকে জেতাতে যাচ্ছি। আজ জিতলে সেই জয়টা বাবা-মা কে উৎসর্গ করতে চাই।'
কিন্তু তা আর হল কোথায়? বরং ম্যাচ শেষে দলের হার আর ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের উৎসব দেখতে দেখতে মনোকষ্ট নিয়ে বাড়ি ফিরতে হল এই মোহনবাগান সমর্থককে।