মেসিকে জার্সি উপহার সচিনের কলকাতার সল্টলেক স্টেডিয়াম কার্যত বিরক্ত হয়ে ছেড়েছিলেন মেসি। কিন্তু হায়দরাবাদের মাঠে চেনা ছন্দে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। একই ছবি দেখা গেল মুম্বইয়েও। ওয়াংখেড়ের স্টেডিয়ামে প্রায় এক ঘণ্টা থাকলেন ফুটবলের রাজপুত্র। দেখা করলেন সচিন টেন্ডুলকর, সুনীল ছেত্রীদের মতো তারকাদের সঙ্গে। কথা বললেন, সৌজন্য বিনিময়ও সারলেন।
সল্টলেক স্টেডিয়ামে কয়েক মিনিট ছিলেন মেসি। তাঁর নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে মাঠ থেকে বের করে নিয়ে গিয়েছিলেন নিরাপত্তারক্ষীরা। সেই মিনিট দশের মধ্যেই নেতা-মন্ত্রী-তারকাদ্বারা পরিবৃত ছিলেন এলএম টেন। ফলে তাঁকে দেখতেই পাননি গ্যালারিতে বসে থাকা প্রায় ৭০ হাজার দর্শক। বরং শদেড়েক-দুয়েক লোকের মাঝে বন্দী হয়ে থাকা মেসিকে অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়। বাধ্য হয়ে মাঠও ছাড়েন তিনি। তারপরই মাঠে তাণ্ডব শুরু করেন দর্শকরা।
সল্টলেক স্টেডিয়ামে তাণ্ডবের সেই ছবি মানুষের মনে এখনও টাটকা। অথচ মুম্বইয়ে কোনও অশান্তিই হল না। নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হল সবকিছু। হাসি মুখে মাঠে প্রবেশ করেন মেসি। সঙ্গে ছিলেন লুইস সুয়ারেজ ও রদ্রিগো ডিপল। স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে বল নিয়ে 'কাজ' দেখালেন। সুনীল ছেত্রীর সঙ্গে পেনাল্টি শট নিলেন। গোলও করলেন। তুললেন ছবি। তারপর গোটা মাঠে ঘোরা শুরু করলেন তিন বিদেশি খেলোয়াড়। দর্শকদের অভিবাদন গ্রহণ করলেন।
তারপর হায়দরাবাদের মাঠের মতো মুম্বইয়েও একের পর এক শটে গ্যালারিতে ফুটবল পাঠানো শুরু করলেন মেসিরা। তখন গোটা ওয়াংখেড় 'মেসি মেসি' শোনা যাচ্ছে। হাসিমুখে গোটা মাঠ ঘুরে ঘুরে বল মারলেন তিনি। দর্শকরা তখন উচ্ছ্বসিত। কারও চোখ জলে ভরে উঠেছে, কেউ দর্শক আসন থেকেই ফ্লাইং কিস ছুড়ছেন। তাদের আবেগ দেখে মেসিও যেন বুঝতে পারলেন ভারতের ফুটবল প্রেম।
তবে মেসি যখন মাঠে তখন কলকাতার মতো তাঁর ধারে-কাছে ছিলেন না কোনও নেতা, মন্ত্রী বা তারকা। সস্ত্রীক মুখ্যমন্ত্রী ফড়নবীস গ্যালারিতে বসে ছিলেন। তাঁর সঙ্গে দেখা যায় সচিনকেও। অনেক তারকা এলেও তাঁরাও কাছে এসে সেলফি তোলার চেষ্টা করেননি। মাঠের ইভেন্ট শেষ হওয়ার পরই গ্যালারি থেকে এক এক করে নেমে আসেন সচিন-সহ বলিউড অভিনেতা-অভিনেত্রী ও রাজনৈতিক নেতারা। সেখানে মাঠের মাঝে আর্জেন্টিনার তারকাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
মেসির সঙ্গে কথা বলেন সচিন, সুনীল-সহ মাঠে থাকা খেলোয়াড়রা। তাঁদের সঙ্গে হাসিমুখে দেখা গেল আরও দুই বিদেশি খেলোয়াড়কে। সচিন নিজের হাতে তাঁর জার্সি তুলে দেন মেসিকে। তা পেয়ে মাস্টার ব্লাস্টারের কাঁধে হাত রাখলেন ফুটবলের রাজপুত্র। পাল্টা তিনিও দিলেন একটি ফুটবল। মাঠে তখন সচিন ও মেসির নামে জয়ধ্বনি দিচ্ছেন দর্শকরা। এমনিতেই মুম্বই মানেই সচিন। তাঁকে নিয়ে যে আবেগ মুম্বইবাসী বারবার দেখিয়েছে তা ইতিহাসে লিখে রাখার মতো। সেই সচিনের সঙ্গে ফুটবলের ঈশ্বরকে দেখে যেন আবেগে ভাসল স্টেডিয়াম।
সেই আবহেই মাইক হাতে নিয়ে মেসিকে ধন্যবাদ জানালেন সচিন। তাঁর অবদানের কথা তুলে ধরে বলেন, 'মেসির খেলা নিয়ে বলার কিছু নেই। তবে খেলার পাশাপাশি ও দারুণ একজন মানুষ।'
ঠিক এমনই দৃশ্য দেখতে চেয়েছিল কলকাতা। সেই আশাতেই তো হাজার হাজার টাকা খরচ করে টিকিট কেটেছিলেন মেসি-ভক্তরা! কিন্তু হল কই?