বাবাকে হারিয়েছেন চার বছর আগেই। মাকে হারানোর দুইদিন পরই ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছিলেন। একের পর এক সেভ করে নিজের দল পাঠচক্রকে জিতিয়েছেন ম্যাচ। আত সেই ম্যাচ জেতার পরেই কান্নায় ভেঙে পড়েন অর্ণব দাস। বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর আরও বেশি করে ফুটবলকে আঁকড়েই বাঁচতে চাইছেন অর্ণব।
২২ বছরের তরুণ গোলকিপার অনাথ হয়ে গিয়েছেন। হারিয়ে ফেলেছেন তাঁর সবচেয়ে কাছের দুই মানুষকে। তবে ফুটবলকেই আপন করে, কান্না চেপে, ইস্টবেঙ্গলকে শেষ মিনিট পর্যন্ত গোল করতে দেননি। পাঠচক্রের দুর্গ আগলে ভরসার মান রেখেছেন। দিয়েছেন পেশাদারিত্বের পরিচয়। ম্যাচ শেষে কান্নায় ভেঙে পড়লেন অর্ণব। ১-০ গোলে জিতল পাঠচক্র। আসলে জিতল ফুটবল।
ম্যাচ শেষে ধরাকাছা পরেই বাড়ি ফিরলেন অর্ণব। অশৌচ চলছে অর্ণবের। খেলার পরে তাঁর খাবার এখন সাবু আর ফল। মাঠে নামার আগে খেয়েছিলেন শুধু সাবু। ইস্টবেঙ্গলকে হারানোর পর পাঠচক্রের কর্তা পুরো দলকে ব্যারাকপুরের এক নামী হোটেলে বিরিয়ানি খেতে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানান। অর্ণবের সতীর্থরা তা ফিরিয়ে সেই কর্তাকে অনুরোধ করলেন, ওই টাকা অর্ণবের মায়ের কাজের জন্য দেওয়া হোক। দিনের শেষে এটাই ফুটবলের বড় জয়।
অনেক বড় হতে চায় অর্ণব। বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণের লড়াই এখন থেকে একাই লড়তে হবে তাঁকে। তবে এমন সতীর্থদের পেলে একটু হলেও সেই লড়াইটা সহজ হয় বৈকী। পাঠচক্রের হয়ে এবারে লিগের চারটে ম্যাচ খেলে ফেলা অর্ণব একটা গোলও হজম করেননি। ক্লাবের কর্তা নবাব ভট্টাচার্য বলেন, 'ভবিষ্যতে ও বড় দলের জার্সি না পাওয়া পর্যন্ত আমরা ওকে রেখে দেব।’
এর আগে কলকাতা মাঠে এমন নজির অনেক আছে। বছর চারেক আগে আকাশ মুখোপাধ্যায় বাবার দেহ রেখে নেমে পড়েছিলেন খেলতে। তারও আগে মোহনবাগানে খেলার সময় প্রাক্তন ফুটবলার বাসুদেব মণ্ডলের বাবা মারা যান। ধরাকাছা খুলে মাঠে খেলতে নেমে গিয়েছিলেন সেদিনও। তবুও এমন ঘটনা ক্রীড়া প্রেমীদের বারবার নাড়া দিয়ে যায়। আর সেই কারণেই, ম্যাচের পর অর্ণবের কথা জানতে পেরে, সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন ইস্টবেঙ্গলের সৌভিক চক্রবর্তী। এমন স্পিরিটের জন্য প্রতিপক্ষ দলের অর্ণবকে পাশে থাকার বার্তা দেন লাল-হলুদের মিডফিল্ডার।
সৌভিক আশাবাদী, অর্ণব একটা সময়, বড় দলে খেলবে। তিনি লেখেন, 'নবাবদার ফেসবুক পোস্ট থেকে তোমার গল্পটা জানতে পারলাম।
যদিও আমরা কখনও দেখা করিনি বা কথা বলিনি এবং আজ তুমি বিপক্ষে ছিলে, তবুও তোমার প্রতি আমার অনেক শ্রদ্ধা আছে। খুব কম খেলোয়াড়ই এই ধরণের মানসিকতা ধারণ করে। আমি সত্যিই আশা করি তুমি সেই খেলোয়াড় হয়ে উঠবে যা তুমি হওয়ার কথা এবং তোমার মা, বাবা এবং পুরো দেশকে গর্বিত করবে। দৃঢ় থাকো এবং তোমার যাত্রায় বিশ্বাস রাখো! তোমাকে শুভেচ্ছা।'