যে শিশুটি ওজন কমাতে খেলাধুলায় যোগ দিয়েছিল সে পরবর্তীতে অ্যাথলেটিক্সে দেশের প্রথম স্বর্ণপদক বিজয়ী হযন। হ্যাঁ! তারকা জ্যাভলিন থ্রোয়ার নীরজ চোপড়া। হরিয়ানার কৃষকের ছেলে টোকিও অলিম্পিকে জ্যাভলিন থ্রোয়ের ফাইনালে 87.58 মিটার নিক্ষেপ করে বিশ্বকে হতবাক করেছে। এটি 100 বছরেরও বেশি সময় ধরে অ্যাথলেটিক্সে ভারতের প্রথম অলিম্পিক পদক ও সেটিও হল সোনা।
1920 সালে এন্টওয়ার্প অলিম্পিকে ভারত প্রথমবারের মতো অ্যাথলেটিক্সে অংশ নিয়েছিল, কিন্তু তারপর থেকে রিও 2016 পর্যন্ত, এর কোনও ক্রীড়াবিদ পদক জিততে পারেনি। প্রবীণ মিলখা সিংহ এবং পিটি ঊষা যথাক্রমে 1960 এবং 1984 সালে একটি সংকীর্ণ ব্যবধানে বাদ পড়েছিলেন।
নীরজের খেলাধুলার সঙ্গে সম্পর্ক থাকার পেছনে একটি আকর্ষণীয় উপাখ্যান রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, যৌথ পরিবারে বসবাসকারী নীরজ শৈশবে খুব স্থূল ছিলেন এবং পরিবারের চাপে ওজন কমাতে তিনি খেলাধুলায় যোগ দিয়েছিলেন। তিনি 13 বছর বয়স পর্যন্ত বেশ দুষ্টু ছিলেন। গ্রামে তিনি মৌমাছির সঙ্গে ছাঁটাই করা এবং মহিষ ও গরুর লেজ টেনে তোলার মতো দুষ্টামি করতেন।
বাবা সতীশ কুমার চোপড়া ছেলের ক্রমবর্ধমান ওজন নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। অনেক বোঝানোর পর নীরজ দৌড়াতে রাজি হয়, যাতে তার ওজন কমানো যায়। তার কাকা সুরেন্দ্র চোপড়া তাকে গ্রাম থেকে 15 কিলোমিটার দূরে পানিপাতের শিবাজি স্টেডিয়ামে নিয়ে যান। নীরজ দৌড়াতে আগ্রহী ছিল না এবং খেলাধুলার দিকে ঝুঁকে পড়ল যখন সে দেখেছিল কিছু খেলোয়াড় স্টেডিয়ামে জ্যাভেলিন থ্রো অনুশীলন করছে।
২০১৭ সালে সেনাবাহিনীতে যোগদানের পর নীরজ বলেছিলেন, 'আমরা কৃষক, পরিবারের কারোরই সরকারি চাকরি নেই এবং আমার পরিবার আমাকে অনেক কষ্টে সমর্থন করছে। কিন্তু এখন এটা একটা স্বস্তি যে আমি আমার প্রশিক্ষণ চালিয়ে যেতে পারছি।
সোনার ছেলে নীরজ চোপড়া। অলিম্পিক্সে জ্যাভলিনে সোনা জিতে এখন গোটা দেশের নয়নের মনি তিনি। তবে এর আগে জাকার্তায় এশিয়ান গেমসে সোনা জিতেছিলেন তিনি। ১৯৯৭ সালে ২৪ ডিসেম্বর হরিয়ানায় জন্ম নীরজের। ছোটোবেলায় কার্যত পেটুক ছিলেন তিনি। খেতে খুব ভালোবাসতেন। নীরজ প্রথম নজরে আসেন ২০১১ সালে। পানজাপটের শিবাজি স্টেডিয়ামে সেদিন জগিং করছিলেন নীরজ। তাঁকে সেখানে দেখেন আর এক পেশাদার জ্যাভলিন থ্রোয়ার তথা কোচ জয়বীর।
হরিয়ানার খান্ডারাতে বাড়ি নীরজের। তাঁর বাড়ি থেকে পানজাপটের শিবাজি স্টেডিয়ামের দূরত্ব ছিল প্রায় ১৭ কিলোমিটার। অতটা পথ পেরিয়ে নিয়মিত প্র্যাক্টিসে আসতেন নীরজ।
সেখানে প্র্যাক্টিস করতে করতে SAI-এ যোগ দেন নীরজ। তখন তিনি ইতিমধ্যে জ্যাভলিন থ্রোয়িং শুরুও করে দিয়েছেন। কিন্তু, বাড়ির লোক সেই বিষয়ে কিছুই জানতেন না।
পানিপথ সাই সেন্টারে নীরজকে জ্যাভলিনের প্রাথমিক পাঠ দেন জয়বীর। তিনি বলেন, 'ওজন কমানোর জন্য মাঠে তখন আসন নীরজ। একদিন ওকে আমি বলি, জ্যাভলিন থ্রো করো। ও করে । আর আমি দেখে অবাক হয়ে যায়। প্রশিক্ষণ ছাড়া সেদিন ও এত ভালো থ্রো করেছিল যে, আমি ওকে প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করি।'