Virat Kohli Epic Innig Vs Pakistan: শেষ তিন ওভারে ৪৮ রানের সমীকরণ। ক্রিকেটের যে কোনও সংস্করণেই ব্যাটিং দলের জন্য এটা প্রায় কার্যত অসম্ভব। পাঁচবারের মধ্যে চারবারই ব্যর্থ হবে রান চেজ করা দল। কিন্তু যে একবার জিততে পারা সম্ভব তাই করে দেখিয়েছেন বিরাট কোহলি। কঠিন অবস্থায় স্নায়ুচাপের চূড়ান্ত পরীক্ষা দিয়ে ম্যাচ ছিনিয়ে আনলেন বিরাট কোহলি।
চির-প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ বলে রুদ্বশ্বাস জয়। জয়ের নায়ক পোড় খাওয়া বিরাট কোহলি। প্রায় হারতে বসা ম্যাচটার মোড় ঘুরিয়ে দিলেন তিনি। আর বিরাট খেললে কারও কিছু করার থাকে না। সেটাও প্রমাণিত।
৮২ রানের ইনিংসটিকে নিজে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের সেরা বলে আখ্যা দিয়েছেন বিরাট কোহলি। মোহালিতে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে প্রায় সমসংখ্যক বলে সমসংখ্যক রান করলেও এটিকে পরিস্থিতির বিচারে খানিকটা এগিয়ে রাখছেন বিরাট নিজেই।
ম্যাচের প্রথম কিছু ওভারে পাকিস্তান দ্রুত উইকেট হারানো ছাড়া, গোটা ম্যাচে পাল্লা ভারী ছিল পাকিস্তানেরই। বিরাট-পাণ্ডিয়া লড়াই করলেও ম্যাচ যে জেতা যাবে তা ১৮ ওভারেও নিশ্চিত ছিলেন না কেউই।
শেষ ৮ বলে ভারতের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ২৮ রান। সামনে আগুন ছড়াচ্ছেন হ্যারিস রউফ। গোটা ম্যাচে তাঁর জবাব খুঁজে পায়নি গোটা ভারতীয় দলও। হার্দিকও একাধিকবার ব্যাট চালিয়েও হ্যারিসের পেসের সামনে নতজানু হয়ে পড়ছিলেন। ওই পরিস্থিতিতে আরও দুটি বলে ২-৩ রান হওয়া মানে শেষ ওভারে ২৪-২৫ রান তাড়া করতে হবে। যা কার্যত অসম্ভব।
এই পরিস্থিতিতে বারবার ম্যাচ খেলা হলে বারবারই ব্যাটিং টিম পরাজিত হবে। এরপরই দুটি বলে খেলা কার্যত ছিনিয়ে নিয়ে গেলেন কোহলি। গোটা ম্যাচে ভারততে চোখ রাঙিয়ে যাওয়া হ্য়ারিস রউফের আগুনে পেসকে পরপর দু'বলে ছক্কায় মাঠের বাইরে ফেলে কোহলি পাকিস্তানকে ম্যাচ থেকে কার্যত ধাক্কা মেরে বের করে দিলেন।
যার চাপ নিতে পারলেন না স্পিনার নওয়াজও। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে পরপরপ দুটি ওয়াইড। সঙ্গে একটি ‘নো’ বল। নওয়াজের চতুর্থ বলের ফুলটসটা কোহলি হাঁকিয়েছেন ছক্কা। সঙ্গে পরের বলে বাড়তি ফ্রি-হিটের সুবিধা। সেখানে বোল্ড হওয়ার পরও বাই থেকে ভারতের তিন রান।
মেলবোর্নে ৯০ হাজারের বেশি দর্শকের উপস্থিতিতে ১৬০ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই ধসে পড়ে ভারতের টপ-অর্ডার। পাওয়ার প্লেতে ৩১ রানে তিন উইকেটের পতন। সপ্তম ওভারে চতুর্থ ধাক্কা। আউট হওয়া চার ব্যাটারের মধ্যে সর্বোচ্চ ১৫ রান করতে পেরেছেন কেবল সূর্যকুমার যাদব। প্রায় ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে ভারত যে স্বপ্নের প্রত্যাবর্তন করবে সেটা হয়তো পাকিস্তান দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারেনি।
প্রথমে নেমে পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের সামনে খোলসেই ছিলেন কোহলি। তখন হ্যারিস রউফ, নাসিম শাহরা আগুন ঝরাচ্ছেন। চারটি উইকেট চলে গিয়েছে ৩০ রানের মধ্যে। সামনে নিশ্চিত হার। সেখান থেকে ফিনিক্স পাখির মতো ঘুরে দাঁড়ানোর মহাকাব্য সিনেমার চেয়ে কম নয়।
৫৩ বলে তার ৮২ রানের ইনিংস দেখলে এমনিতে কিছু বোঝা যাবে না। টি২০তে এমন ঝোড়ো ইনিংস তো কতই হয়। কিন্তু পাকিস্তানের বোলিং আর সিচুয়েশন যাঁরা দেখেছেন তাঁরা একমাত্র বলবেন যে এটা কতটা কঠিন ছিল। একটা হিসেব দেখালেই বোঝা যাবে। প্রথম ২২ বলে মাত্র ১২ রান করেছিলেন কোহলি। এমনকী স্ট্রাইকও রোটেট করতে পারছিলেন না। শেষ ৩০ বলে নিলেন ৭০ রান। খোলসমুক্তির চেহারাটা এবার স্পষ্ট হল?
হার্দিক পান্ডিয়ার ৩৭ বলে ৪০ রানের ইনিংসটা ধীরগতির মনে হলেও উইকেটের রাশ টেনে ধরতে এবং ম্যাচের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় ছিল মহামূল্যবান। এই যুগলের সামনে পাকিস্তানি বোলাররাই খেই হারিয়ে ফেলেন। রউফ, নওয়াজ শুরুতে দুটি উইকেট নিলেও পরে আর ছন্দটা ধরে রাখতে পারেননি।
এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা পাকিস্তানের ইনিংসের শুরুটাও হয়েছে বিপর্যয় দিয়ে। দলীয় ১৫ রানে সাজঘরে ফিরে যান দুই ওপেনার মহম্মদ রিজওয়ান ও বাবর আজম। তৃতীয় উইকেটে শান মাসুদ ও ইফতিখার আহমেদের ব্যাটে জোড়া ধাক্কা সামলে ওঠে পাকিস্তান। এদিনের জয় দিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভ পর্ব শুরু হলো ভারতের। একই সঙ্গে এশিয়া কাপ ও গত বিশ্বকাপে হারের মধুর প্রতিশোধও নেওয়া রোহিতদের। ভারতের পরের ম্যাচ ২৭ অক্টোবর নেদারল্যান্ডের সঙ্গে।