ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক তথা ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার কপিল দেব আজ ৬২ বছরে পা রাখলেন। ১৯৫৯ সালে আজকের দিনেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন হরিয়ানা হারিকেন। ১৯৮৩ সালে তাঁর নেতৃত্বেই ভারত প্রথমবার ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয় করেছিল। একদিনের ক্রিকেটে সবথেকে আগে ২০০ উইকেট শিকার করেছিলেন এই কপিল দেব। পাশাপাশি কপিল দেবই একমাত্র টেস্ট ক্রিকেটার যিনি ৪০০টি উইকেট শিকার করার পাশাপাশি ৫,০০০-এর উপর রানও করেছেন। আসুন এই কপিল দেবকে নিয়ে একটা গল্প আজ আপনাদের বলি, যা আগে হয়ত কখনও আপনারা শোনেননি।
আগে কপিল দেবের মতো না কেউ ছিল, না আজ আছে। একদিকে সুইং বোলিং, অসাধারণ ফিল্ডিং এবং অন্যদিকে ধামাকাদার ব্যাটিং; এই তিনটে গুণই কপিলকে বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার করে তুলেছে। গত অক্টোবর মাসে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। এরপর তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তড়িঘড়ি করা হয় অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টিও। কপিলের সফল অস্ত্রোপচারের পর চেতন শর্মা তাঁর ছবি সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিলেন।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কেরিয়ার (১৯৭৮-১৯৯৪) ১৬ বছর সুদীর্ঘ হয়েছিল। এই সময়ের মধ্যে তিনি ১৩১টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন। ১৯৮৪-৮৫ মরশুমে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট ম্যাচে যদি তাঁকে 'ড্রপ' না করা হত, তাহলে এই সংখ্যাটাই ১৩২-এ গিয়ে দাঁড়াত। তিনি টানা ৬৬টি টেস্ট ম্যাচ খেলেন এবং তারপর তাঁকে টিম থেকে বের করে দেওয়া হয়। কিন্তু, একটা টেস্ট ম্যাচের পরেই তাঁকে আবার ফিরিয়ে আনা হয় দলে। এরপর তিনি আবার টানা ৬৫টি টেস্ট ম্যাচ খেলেন।
৩১ ডিসেম্বর, ১৯৮৪। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে কলকাতায় টেস্ট ম্যাচের আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু, এই টেস্ট ম্যাচে ভারতীয় ক্রিকেট দলে রাখা হয়নি কপিল দেবকে। সেকারণে তাঁর সমর্থকেরা বেশ চটেই গিয়েছিলেন। শোনা গিয়েছিল, ভারতীয় ক্রিকেট দলের তৎকালীন অধিনায়ক সুনীল গাভাসকারের অঙ্গুলি হেলনেই নাকি কপিলকে দল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, ১৯৮৪-৮৫ মরশুমে ভারতের মাটিতে ইংল্যান্ড পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ় খেলতে এসেছিল। বোম্বাইয়ে আয়োজিত প্রথম টেস্ট ম্যাচে জয়লাভ করেছিল ভারত। এরপর ভারতকে দিল্লি টেস্টে হারতে হয়। এই পরাজয়ের জন্য কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয় কপিল দেবের পারফরম্যান্সকেই।
তখন কপিল দেব ব্যাট করতে নেমেছিলেন। উইকেটে টিকে থাকাটা তখন খুব দরকার ছিল। ইংল্যান্ডের এক স্পিনার বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে বল ফসকে যায়। ৬ বলে তিনি মাত্র ৭ রান করে প্যাভিলিয়নে ফিরে আসেন। তারমধ্যে একটা ওভার বাউন্ডারি ছিল। তিনি মাত্র চার মিনিট উইকেটে থাকতে পেরেছিলেন।
এই ম্যাচে ভারত হারার পর, কপিলকে পরের ম্যাচে আর দলে নেওয়া হয়নি। কপিল দেবকে ছাড়াই কলকাতা টেস্ট খেলতে নেমেছিল ভারতীয় ক্রিকেট দল। ইডেন্স গার্ডেন্সে আসা ভারতীয় ক্রিকেট সমর্থকেরা এই ঘটনায় বেজায় ক্ষিপ্ত হয়েছিলেন। এমনকী ভারতীয় ক্রিকেট দলের তৎকালীন অধিনায়ক সুনীল গাভাসকারকেও তাঁরা প্রকাশ্যে হুমকি দেন। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠে স্লোগান, "উই ওয়ান্ট কপিল, গাভাসকার গো ব্যাক।" স্টেডিয়ামে দেওয়ালে পড়েছিল পোস্টারও। লেখা ছিল, 'নো কপিল, নো টেস্ট'!
তবে ৩২ বছর পর এই ঘটনাটা নিয়ে মুখ খুলেছেন সুনীল গাভাসকার। তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, কপিল দেবকে দলের বাইরে রাখার পিছনে তাঁর কোনও হাত নেই। তিনি বললেন, কোনও অধিনায়কই চাইবে না যে তাঁর ম্যাচজয়ী ক্রিকেটারকে বাইরে বসিয়ে রাখতে। তাঁর কথায়, এটা একেবারেই নির্বাচকদের সিদ্ধান্ত ছিল।
তবে কলকাতার পর কপিল দেবকে মাদ্রাজ টেস্টে আবারও ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। যদিও ওই সিরিজ়ে ভারত ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১-২ ব্যবধানে পরাস্ত হয়েছিল। পাশাপাশি কপিল দেবের ফিটনেসেরও প্রশংসা করতে হবে। তিনি এরপর টানা ৬৫টা টেস্ট ম্যাচ খেলেছিলেন।