বেশ লম্বা বিরতির পরেই ২০০৪ সালে পাকিস্তান সফরে গিয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেট দল। ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে আয়োজিত তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজ়ের প্রথম ম্যাচটা মুলতানে আয়োজন করা হয়েছিল। এই ম্যাচে ভারতীয় ক্রিকেট দল টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয়। ভারতের ইনিংস শুরু করতে মাঠে নামেন বীরেন্দ্র সেহওয়াগ এবং আকাশ চোপড়া। প্রথম উইকেটে এই দুই ক্রিকেটারই ১৬০ রানের পার্টনারশিপ গড়ে তোলেন। ৪২ রান করে সাকলাইন মুস্তাকের বলে আউট হয়ে যান। কিন্তু, সেহওয়াগ বিধ্বংসী মেজাজে ব্যাট করতে থাকেন।
আকাশ চোপড়া আউট হওয়ার পর তিন নম্বরে ব্যাট করতে আসেন রাহুল দ্রাবিড়। কিন্তু, তিনি মাত্র ৬ রান করেই আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান। দ্রাবিড়ের উইকেটটা মহম্মদ সামি তুলে নেন। এরপর বীরেন্দ্র সেহওয়াগকে সঙ্গ দিতে মাঠে নামেন সচিন তেন্ডুলকর। সচিন এবং সেহওয়াগ পাকিস্তানের বোলারদের কার্যত কচুকাটা করতে শুরু করেন। ভারতের এই দুই ব্যাটসম্যান পাকিস্তানের বোলারদের কার্যত দিশেহারা করে দেন। প্রথম দিন যখন খেলা শেষ হয় তখন ভারতের স্কোর ২ উইকেটে ৩৫৬ রান।
এরপর শুরু হয় দ্বিতীয় দিনের খেলা। সচিন এবং সেহওয়াগ বিধ্বংসী মেজাজে ব্যাট করতেই থাকেন। টেস্ট ম্যাচের দ্বিতীয় দিন সেহওয়াগ নিজের ট্রিপল সে়ঞ্চুরি পূরণ করে নেন। তিনি ৩০৯ রান করে আউট হন। অন্যদিকে সচিন যখন ১৯৪ রানে ব্যাট করছিলেন, তখনই এই ইনিংস ডিক্লেয়ার করে দেন অধিনায়ক রাহুল দ্রাবিড়। সচিন এবং সেহওয়াগ ছাড়া এই ইনিংসে ভিভিএস লক্ষ্মণ ৩৯ এবং যুবরাজ সিং ৫৯ রান করেন। ভারত পাঁচ উইকেটে ৬৭৫ রান করে ইনিংসের পরিসমাপ্তি ঘোষণা করে। পাকিস্তানের হয়ে মহম্মদ সামি জোড়া উইকেট এবং একটি উইকেট সাকলাইন মুস্তাক নেন।
এই টেস্ট ম্যাচে পাকিস্তান প্রথম ইনিংসে ৪০৭ রান করে অলআউট হয়ে যায়। প্রথম ইনিংসে পাকিস্তানের হয়ে ইয়াসির হামিদ ৯১ রান, ইনজ়ামাম উল হক ৭৭ রান এবং আব্দুল রাজ্জাক ৪৭ রান করেন। কিন্তু, তাঁরা ফলোঅনের অপমান এড়াতে পারেনি। ভারতীয় ক্রিকেট দলের হয়ে সবথেকে বেশি উইকেট শিকার করেন ইরফান পাঠান (চারটে)। এছাড়া সচিন তেন্ডুলকর এবং অনিল কুম্বলে দুটো করে উইকেট শিকার করেন। পাশাপাশি জ়াহির খান এবং লক্ষ্মীপতি বালাজি একটা করে উইকেট নেন।
ফলোঅনে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান মাত্র ২১৬ রানের মধ্যেই অলআউট হয়ে যায়। দ্বিতীয় ইনিংসে কিছুটা হলেও লড়াই করেছিলেন মহম্মদ ইউসুফ। তিনি ১২২ রান করে আউট হন। এছাড়া ইমরান ফারহাট ২৪, ইয়াসির হামিদ ২৩ এবং আব্দুল রাজ্জাক ২২ রান করে আউট হন। বাকিদের রান এর থেকেও কম। ভারতীয় বোলারদের মধ্যে সবথেকে বেশি সাফল্য পান অনিল কুম্বলে। তিনি ৬ উইকেট শিকার করেন। এছাড়া ইরফান পাঠান দুটো এবং যুবরাজ সিং একটা উইকেট নেন। এই ম্যাচটা ৫২ রানে জেতে ভারত। ৩০৯ রানের ঐতিহাসিক ইনিংস খেলার জন্য বীরেন্দ্র সেহওয়াগের হাতেই ম্যান অফ দ্য ম্যাচের পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।