scorecardresearch
 

Dinesh Karthik: 'কোথা থেকে সব চলে আসে!' ১৮ বছর পর হিরো সৌরভের তাচ্ছিল্যের সেই দীনেশ

সৌরভ গাঙ্গুলির অধিনায়কত্বে ডেবিউ করেছিলেন। তারপর বদলে গিয়েছে বহু অধিনায়ক। রাহুল দ্রাবিড়, অনিল কুম্বলে, মহেন্দ্র সিং ধোনি, বিরাট কোহলি হয়ে রোহিত শর্মা। তিনি আছেন তাঁর মতোই। ১৮ বছর পর তাঁর আমলের সবাই যখন অবসরের গ্রহে, তিনি তখন বিশ্বকাপ দলে ঢোকার অন্যতম দাবিদার।

Advertisement
দীনেশ কার্তিক চলতি আইপিএলের হিরো দীনেশ কার্তিক চলতি আইপিএলের হিরো
হাইলাইটস
  • সৌরভ গাঙ্গুলি বলেছিলেন, কোথা থেকে আসে এরা?
  • ১৮ বছর পরে হিরো দীনেশ কার্তিক
  • তার নিদাহাস ট্রফির ভিডিও-র রেকর্ড ভিউ

২০০৭ সালে ডার্বানে সাউথ আফ্রিকার সঙ্গে, জোহানেসবার্গে বিশ্বকাপ ফাইনাল হারার পর চার বছর পরে ভারতীয় দল, ক্রিকেটের সবচেয়ে ছোট সংস্করণে বিশ্বকাপ খেলতে নেমেছিল। সামনে অতিথি দক্ষিণ আফ্রিকা ছিল। একটা সাধারণ শুরুর পরে ভারতীয় দল ওই দিন ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে কুড়ি ওভারে রোহিত শর্মার ৫০-রানে ভর করে ১৫০ রানের একটু বেশি রান করতে পেরেছিল। সামনে যে দল ছিল, ওই টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ২০৬ রান চেজ করে ফেলেছিল। ১৫০ তাদের কাছে নিতান্তই সাধারণ টার্গেট। দক্ষিণ আফ্রিকার দলটি যে কোনও দলকে কাগজে-কলমে ভয় পাইয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। যদি ভারতীয় দল কম শক্তিশালী ছিল না। একদিন আগেই যুবরাজ সিং, স্টুয়ার্ট ব্রড এর একটি ওভারে সমস্ত বলে ছয় মেরে দেশকে জয় এনে দিয়েছিল। কিন্তু ঐদিন প্রয়োজন ছিল দক্ষিণ আফ্রিকাকে বোলিংয়ে চমকে দেবার। এই ম্যাচ হারলে ভারতীয় দল দেশে ফিরতে হবে বলে মনে করা হচ্ছিল।

শ্রীশান্ত বল হাতে নেন এবং ইনিংসের প্রথম বলেই একটা বড় ওয়াইড করে ৫ রান বিনামূল্যে বিতরণ করেন। প্রথম ওভার-এর পর দ্বিতীয় ওভার বল করতে আসেন আরপি সিং, হার্সেল গিবসকে এলবিডব্লিউ করে দেন। আউট নিয়ে বিতর্ক থাকলেও ভারতীয় দলের পক্ষে জলদি উইকেট মিলে যায়। এরপরেও বাইরে যাওয়া একটি বলে খোঁচা দিতে বাধ্য করেন আরপি সিং। কিন্তু বলটি গালির খানিকটা দূর দিয়ে বাউন্ডারির দিকে উড়ে যাচ্ছিল। সেই সময়ে প্রায় উড়ে নিজের উচ্চতার ডবল লাফ দিয়ে বলটিকে তালুবন্দি করেন উইকেটকিপার দীনেশ কার্তিক।  এরপরই ধোনি তাঁকে উইকেট কিপিং-এ প্যাড পড়ে স্ট্যাম্পের পিছনে যান।

দীনেশ

এই ঘটনার ১১ বছর পর ২০১৮ সালে প্রেমদাসা স্টেডিয়াম, কলম্বোতে এটা ঐদিন ছিল, যেখানে ভারতীয় দল ফাইনালে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনাল বাংলাদেশের মুখোমুখি হয়েছিল। ঘরোয়া দল শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে বাংলাদেশ ফাইনালে ভারতের সামনে দাঁড়ায় এবং ভারতকে ফাইনালে প্রায় হারিয়ে দিয়েছিল। যখন শেষ দু'ওভারে ৩৪ রান লাগত, তখন ব্যাট করতে নামেন দীনেশ কার্তিক। এরপর যা ঘটেছিল মাঠে, তা ইতিহাস পরিণত হয় গোটা ভারতীয় জাতির কাছে। গায়ে কাঁটা দেওয়া ম্যাচে পরিণত হয়। একের পর এক বল মাঠের বাইরে ফেলে প্রায় না জেতা ম্যাচ জিতলেন দীনেশ কার্তিক। এটি তাঁর জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় ইনিংসের মধ্যে একটি। এমনকী শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট আধিকারিক ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করেন শেষ দুটি ওভারের ভিডিও।যার ভিউ ১৯ তম ওভারে ১৩ কোটি ১ লক্ষ এবং শেষবারের ২২ কোটি ৫ লক্ষ গিয়ে দাঁড়ায় এবং সেই ভিউ প্রতিদিনই বেড়েই চলেছে।

Advertisement

দীনেশ কার্তিকের ক্যারিয়ার আপ ডাউন এ ভরা। তিনি যখন ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১৯ বছর বয়সে ডেবিউ করেন ভারতীয় ক্রিকেটের অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলি।৩ মাস ১৮ দিন পরে আরেকজন উইকেটকিপারের অভিষেক হয়। তার নাম মহেন্দ্র সিং ধোনি, এবং ধোনি আসতেই উইকেটকিপার ব্যাটিং স্পট আগামী ১৫ বছরের জন্য বুক হয়ে যায়। ফলে দীনেশ কার্তিকের যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তিনি সুযোগ পাননি ধোনিকে ছাপিয়ে যেতে না পারায়। এর মাঝে তিনি ঘরোয়া ক্রিকেটের ঝুড়ি ঝুড়ি রান করেন এবং তিনি পরিষ্কার বুঝতে পেরেছেন, যেটা তিনি নিজেই স্বীকার করেছিলেন যে ধোনিকে ছাপিয়ে তার পক্ষে দলে আসা অসম্ভব। তাই তিনি ভারতীয় দলে খেলার স্বপ্ন ছেড়ে ঘরোয়া ক্রিকেটের মন দেন এবং নিজেকে শান দিতেতে থাকেন। তিনি আবার সুযোগ পান তখন যখন মহেন্দ্র সিং ধোনির ১৫ বছর পর অবসর নিয়ে নেন এবং তিনি তার যোগ্যতা দিয়ে ভারতীয় দলে সুযোগ পান। তবে ধারাবাহিকতা রাখতে না পারায় তাকে আবারও বাদ পড়তে হয়।

কার্তিক

ভারতীয় দলের মধ্যে কোনও খেলোয়াড়ের দুটি টেস্ট এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গ্যাপ দীনেশ কার্তিকের কপালে জোটে। তিনি ২১ জানুয়ারি ২০১০ এ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে খেলার আট বছর পরে ফের ভারতীয় দলে খেলতে আসেন ১৪ জুন ২০১৮ তে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে ভারতীয় দল ৮৮ টি টেস্ট ম্যাচ খেলে ফেলেন। যার মধ্যে তার সুযোগ হয়নি এবং বলাই বাহুল্য ৮৮ টি ম্যাচের মধ্যে সিংহভাগ ম্যাচ খেলেছেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। এবং যেগুলিতে তিনি খেলতে পারেননি সেখানে খেলেছেন ঋদ্ধিমান সাহা। কিন্তু দীনেশ কার্তিকের নাম উঠে আসেনি। একসময় পার্থিব প্যাটেল এর যে অবস্থা হয়েছিল তাঁরও হতে পারত, যদি না তিনি তার লক্ষ্যে স্থির থাকতেন। ২০০৭ সালে ইংল্যান্ডে বিজয়ী ভারতীয় দলের অংশ হিসেবে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

২০০৪ সালে খেলা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে একটি মজাদার কাহিনী হয়। দীনেশ কার্তিক ডেবিউ করে ফেলেছিলেন। কিন্তু ওই টুর্নামেন্টে খেলার সুযোগ তখনও পর্যন্ত পাননি। পাকিস্তানের সঙ্গে খেলা ছিল। তখন সৌরভ গাঙ্গুলি ক্যাপ্টেন ছিলেন। পাকিস্তান মজবুত পার্টনারশিপ করে ফেলেছিল এখন সেখানে ইনজামাম-উল-হক উইকেট ঢুকে পড়েন। তখন ভারতীয় দল ম্যাচের ফিরে আসার পথ তৈরি করে ফেলেন। উইকেট পড়তেই ক্যাপ্টেন সৌরভ গাঙ্গুলি সবাইকে কর্ডনে ডেকে নেন এবং পরবর্তী প্ল্যান বলেন। এরই মধ্যে দলের দ্বাদশ ব্যক্তি হিসেবে জলের বোতল নিয়ে আসেন দীনেশ। নিজের কাজে কোনও রকম খামতি রাখেননি তিনি। সমস্ত শক্তি দিয়ে ওই কর্ডনের দিকে দৌড়ে যান। দুই হাতে বোতল ধরে দৌড়াতে থাকা দীনেশ কার্তিক কর্ডনের কাছে পৌঁছেও থামতে পারেননি। পিছলে সৌরভ গাঙ্গুলির সঙ্গে ধাক্কা মারেন। ধাক্কা খেয়ে সৌরভ গাঙ্গুলি সামনে এগিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়েন। তিনি যখন পেছন দেখেন তখন ক্রিমে নতুন আসা দীনেশ কার্তিক দাঁড়িয়েছিলেন। সৌরভ গাঙ্গুলি বলেন, "কাঁহা কাঁহা সে আ জাতে হ্যায় টিমমে।" 

ডিকে

আপাতত দীনেশ কার্তিক ২০২২ এর তৃতীয় কোয়ার্টারে হতে চলা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের রেসে শামিল হয়ে গিয়েছেন। চলতি আইপিএলে দুর্দান্ত ফর্মে দেখিয়ে। এই আইপিএলে যেখানে ভারতীয় দলের নিয়মিত উইকেটকিপার রিসব পন্ত এবং সেকেন্ড উইকেটকিপার হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে মনে করা ঈশান কিশান দুজনেই চূড়ান্ত ব্যর্থ, সেখানে চমক জাগিয়েছেন খোদ দীনেশ কার্তিক এবং আরও ১ বাতিলের খাতায় চলে যাওয়া উইকেটকিপার ঋদ্ধিমান সাহা। ফলে দু'জনকেই অন্তর্ভুক্তি করার দাবি উঠেছে। যদিও দুজনের মধ্যে একজনেরও অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তবে পারফরম্যান্সের বিচারে দেখতে হলে তাদের দু'জনের একজনকে অন্তত শামিল করা উচিত বলে মনে করছে গোটা দেশ।

Advertisement

 

Advertisement