আইএসএল-এর (ISL) প্রথম ডার্বি খেলতে নেমেই হ্যটট্রিক করে পিছিয়ে থাকা এটিকে মোহনবাগানকে (ATK Mohun Bagan) জয়ের রাস্তা দেখিয়েছেন ২১ বছর বয়সী কিয়ান নাসিরি (Kiyan Nasiri)। সিএফসি অ্যাকাডেমি থেকে উঠে আসা এই ফুটবলার ২০২০ সালে ১ মার্চ মোহনবাগানের হয়ে ট্রাউ এফসি-র বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচ খেলেন। কিবু ভিকুনার (Kibu Vicuna) কোচিংয়ে সেই ম্যাচে ৩-১ গোলে জিতেছিল মোহনবাগান। সেই মরশুমে আইলিগ চ্যাম্পিয়ন হয় তারা। এরপর এটিকে মোহনবাগানের হয়ে গত বছর ১৯ নভেম্বর কেরল ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে খেলতে নেমেছিলেন তিনি। এএফসি কাপে এফসি নাসাফের বিরুদ্ধেও কিছু সময়ের জন্য তাঁকে মাঠে নামিয়েছিলেন এটিকে মোহনবাগানের তৎকালীন কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাস। বাবা ইরানিয়ান ফুটবলার জামসেদ নাসিরিও দারুণ ফুটবলার ছিলেন। ইস্টবেঙ্গলের হয়ে প্রচুর গোল করেছেন তিনি। মূলত তাঁর কোচিংয়েই সিএফসি অ্যাকাডেমিতে খেলা শুরু করেছিলেন এই তরুণ ফুটবলার। ২০১৯ সালে জি বাংলা ফুটবল লিগে দারুণ ভাবে নজর কেড়েছিলেন কিয়ান ও শুভ ঘোষ। দুই ফুটবলারকেই দলে নিয়েছিলেন কিবু। কলকাতা ফুটবল লিগে মহমেডানের বিরুদ্ধে ম্যাচেও খেলেছিলেন কিয়ান।
এসসি ইস্টবেঙ্গলের (SC East Bengal) বিরুদ্ধে শনিবার মাত্র ২৯ মিনিট মাঠে ছিলেন কিয়ান। আর তাতেই বাজিমাত করে যান তিনি। পঞ্চম ফুটবলার হিসেবে ডার্বিতে হ্যাটট্রিক করলেন কলকাতা নিবাসী এই তরুণ ফুটবলার। এর আগে অমিয় দে, অসিত গঙ্গোপাধ্যায়, বাইচুং ভুটিয়া ও এডে চিডির ডার্বিতে হ্যাটট্রিক করার রেকর্ড ছিল। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হলেন কিয়ান। ইস্টবেঙ্গল ডিফেন্সের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তিনটি গোল করে যান কিয়ান। বাবা হিসেবে জামসেদ নাসিরির আক্ষেপ ছিল তিনি সবুজ মেরুন জার্সি পড়তে পরতে না পারার। তবে সেই আক্ষেপ তাঁর ছেলে যে শুধুই মুছে দিলেন তাই নয়, নতুন ইতিহাস গড়লেন তিনি। দীপক টাংরির জায়গায় ৬৪ মিনিটে মাঠে নেমে তিন গোল করে এসসি ইস্টবেঙ্গল ডিফেন্সকে হতোদ্যম করে দেন তিনি। পেনাল্টি বক্সের মধ্যে তিনবার বল পেয়েই গোলে মারেন কিয়ান। ফুটবল বিশারদদের অবাক করেছে কিয়ানের হিম শীতল মানসিকতা। তার সঙ্গেই তাঁর অসাধরন টেকনিকও মুগ্ধ করেছে তাঁদের। কিয়ানের বাবা জামসেদ নাসিরি যদিও এই নিয়ে খুব বেশি ভাবতে নারাজ। শনিবার ম্যাচের পর আজতক বাংলাকে তিনি বলেন, ''আমি জানতাম ওকে সুযোগ দিলেই গোল পাবে। শুরু থেকেই ওর টেকনিকের প্রশংসা করেছেন ক্লাবের সকলেই। তাই ওর টেকনিক নিয়ে সন্দেহ ছিল না। আমি মোহনবাগানে খেলতে পারিনি। তবে ওকে খেলতে দেখে আর সফল হতে দেখে ভাল লাগছে। তবে এখনই বেশি মাতামাতি করার কিছু হয়নি। অনেক পথ যেতে হবে ওকে। দেশের জার্সিতে ওকে খেলতে দেখতে চাই।''
আরও পড়ুন: জাতীয় দলের জার্সিতে ছেলেকে দেখতে চান জামসেদ নাসিরি
আরও পড়ুন: হ্যাটট্রিক কিয়ান নাসিরি, এসসি ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে ফের জিতল এটিকে মোহনবাগান
চাপের মধ্যে এই তিন গোলের পর আইএসএল-এর অনেক ক্লাবই তাঁকে দলে নেওয়ার চেষ্টা করবে। তবে আরও বেশি সময় মাঠে থেকে খেলতে পারলে আরও ভয়ঙ্কর হতে পারেন এই তরুন ফুটবলার। কিয়ান আবার লিওনেল মেসির ভক্ত। গোল করার পাশাপাশি পায়ে বল রেখে খেলতে পছন্দ করেন কিয়ান। শনিবারের ম্যাচের পর এই কথা জানিয়েছেন তিনি। তবে আইলিগ বা আইএসএল-এর মঞ্চে এখনও সেরকম ভাবে বল ধরে রেখে খেলার সুযোগ পাননি কিয়ান। সুযোগ পেলে তিনি ভয়ঙ্কর হতে পারেন কি না সেটাই দেখার। তবে ছোট্ট ফুটবল কেরিয়ারে নানা পজিশনে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। অনেকেই সুনীল ছেত্রীর উত্তরসূরী হিসেবে ভাবতে শুরু করে দিয়েছেন কিয়ানকে। তবে সেটা বলার সময় এখনও আসেনি। জাতীয় দলে সুযোগ পেয়ে নিজেকে প্রমাণ করতে হবে তাঁকে। তবে তাঁর হাতে এখনও অনেক সময় রয়েছে।