
Rinku Singh KKR রবিবার সন্ধ্যায় আলিগড়ের এক ক্রিকেটার আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে যা ঘটিয়েছেন তা এখন সকলের মুখে মুখে ঘুরছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় রিঙ্কু সিং-এর প্রশংসায় পঞ্চমুখ সকলেই। এমনটা নয় যে এর আগে ক্রিকেটে কোনোওদিন পাঁচ বলে পাঁচটা ছক্কা হয়নি। তবে রিঙ্কু সিং শেষ ওভারে যে দক্ষতায় ব্যাট চালিয়েছেন তা দারুণ গুরুত্বপূর্ণ। দারিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করে ক্রিকেট খেলতে হয়েছে রিঙ্কুকে। আর সেই মনোভাবই এদিন মাঠেও দেখা গিয়েছে। একটা সময় চরম আর্থিক কষ্টের মধ্যে খেলা ছাড়ার সিদ্ধান্তও প্রায় পাকা করে ফেলেছিলেন বাঁ হাতি ব্যাটার। ঠিক সেই সময় আইপিএল-এ সুযোগ পান রিঙ্কু। এখন প্রতি মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা রোজগার করছেন তিনি।
প্রথমবার পেয়েছিলেন ১০ লক্ষ টাকার
রিংকু সিংকে ২০১৭ সালের নিলামে কিংস ইলেভেন পঞ্জাব (বর্তমানে পঞ্জাব কিংস) ১০ লক্ষ টাকায় কিনেছিল। কিন্তু আইপিএলের ওই মরশুমে একটিও ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি তিনি। ২০১৮ সালের মরশুমে, রিঙ্কু সিংকে ৮০ লক্ষ টাকা মূল্যে কলকাতা নাইট রাইডার্স (KKR) তাদের দলে নেয়। এরপর থেকেই তিনি কলকাতা নাইট রাইডার্সের দলে রয়েছেন।
আরও পড়ুন: পাঁচ ছক্কা খাওয়া বোলারকে 'পেপ টক' নাইটদের, প্রশংসায় নেটিজেনরা
মাসিক আয় কত?
২০১৯, ২০২০ এবং ২০২১ সালের আইপিএল মরশুমেও তিনি কেকেআর থেকে ৮০ লক্ষ টাকা পেয়েছেন। কিন্তু রিংকুকে কেকেআর আইপিএল ২০২২-এর মেগা নিলামে ৫৫ লক্ষ টাকায় কিনেছিল। অর্থাৎ তারা আগের চেয়ে কম টাকায় রিঙ্কুকে পেয়েছে। বর্তমানে রিঙ্কুর মাসিক আয় প্রতি মাসে পাঁচ থেকে ছয় লক্ষ টাকা। এর মধ্যে আইপিএল থেকে আয়ের একটি বড় অংশ রয়েছে।
আরও পড়ুন: চালাতেন অটো, জুটত আধ পেটা খাবার, হারা ম্যাচ জিতিয়ে বাজিগর সেই রিঙ্কুই
আয় বাড়বে...
কিন্তু এখন আইপিএলে যে ভাবে রিংকুর ব্যাট চলছে, শিগগিরই বিজ্ঞাপন জগতে তাঁর চাহিদা বাড়তে চলেছে। যার ফলে তাঁর আয়ও বাড়বে। কারণ আইপিএলের অন্য তারকারাও বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে মোটা টাকা আয় করছেন। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই বিজ্ঞাপন জগতে রিঙ্কু সিংয়ের ঢুকে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু দারিদ্র্যের মধ্যে যেভাবে রিংকুর প্রতিভা সামনে এসেছে, তা অন্য যুবকদের জন্য অনুপ্রেরণার।

বাবা গ্যাস সিলিন্ডার ডেলিভারির কাজ করতেন
১২ অক্টোবর, ১৯৯৭ সালে উত্তর প্রদেশের আলিগড়ে জন্ম নেওয়া রিঙ্কু সিং পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে তৃতীয়। রিঙ্কুর বাবার আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না। গ্যাস সিলিন্ডার ডেলিভারির কাজ করতেন তিনি। অন্যদিকে রিঙ্কু শৈশব থেকেই ক্রিকেটের প্রতি অনুরাগী হলেও বাবা চাইতেন না ছেলে ক্রিকেট খেলে সময় নষ্ট করুক। কিন্তু একটা সময় এসেছিল যখন রিঙ্কুকে ক্রিকেট ছেড়ে চাকরি করতে হয়েছিল। রিঙ্কুর শিক্ষাগত যোগ্যতা খুব বেশি ছিল না। ফলে কোচিং সেন্টারে ঝাড়ুদারের কাজ করতে শুরু করেন রিঙ্কু।
২০১৪ সালে ভাগ্য ফেরে রিঙ্কুর
স্বাভাবিক ভাবেই এই কাজ করতে ভালো লাগত না রিঙ্কুর। তিনি কিছুদিনের মধ্যেই এই কাজ ছেড়ে দেন। এরপর রিঙ্কু ক্রিকেটে মনোযোগ দেন। অবশেষে ২০১৪ সালে, উত্তরপ্রদেশ থেকে লিস্ট-এ এবং টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অভিষেকের সুযোগ পান তিনি। পঞ্জাবের বিপক্ষে দুই বছর পর প্রথম শ্রেণিতে অভিষেক হয় রিঙ্কু সিংয়ের। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি রিঙ্কুকে। রিঙ্কুর খেলা তাঁর এগিয়ে যাওয়ার পথ তৈরি করতে থাকেন।
প্রথম আইপিএল আয় থেকে ঋণ শোধ
তাঁর কঠিন সময়ের দিনগুলি স্মরণ করে, রিঙ্কু সিং 'জিও সিনেমা'-তে একটি সাক্ষাত্কারে বলেছিলেন যে তাঁর মা কিছুটা সমর্থন করতেন, তবে বাবা ক্রিকেটকে মোটেও সমর্থন করেননি। প্রথমবার, যখন তিনি টুর্নামেন্ট খেলতে কানপুরে গিয়েছিলেন, তাঁর মা প্রতিবেশীর কাছ থেকে ১,০০০ টাকা ধার করে তাঁকে খেলতে পাঠিয়েছিলেন। রিঙ্কু সিংকে আইপিএলে প্রথমবার ২০১৭ সালে পঞ্জাব দল ১০ লক্ষ টাকায় কিনেছিল। সেই মুহূর্তের কথা মনে করে রিঙ্কু বলেছিলেন, 'এই টাকাটা আমার কাছে অনেক মূল্যবান। এটা দিয়ে সব ঋণ শোধ করেছি।'
এরপর কেকেআর তাঁকে ৮০ লক্ষ টাকায় কিনে নেয়। রিঙ্কু সিং বলেছিলেন, 'আমি যখন এই দাম পেয়েছি, তখন বিশ্বাসই করতে পারিনি। সেই ৮০ লক্ষ টাকা দিয়ে বাড়ি বানিয়েছেন, বাবাকে গাড়ি কিনে দিয়েছেন। তাঁর একটা গাড়ি কেনার খুব ইচ্ছা ছিল।' রিঙ্কু সিং স্বীকার করেছেন যে আইপিএল খেলে তাঁর জীবন বদলে গিয়েছে। রবিবার গুজরাত টাইটান্সের বিরুদ্ধে তাঁর দল কলকাতা নাইট রাইডার্সকে জিতিয়ে তিনি আধিপত্য বিস্তার করেছেন। আগামী দিনে তার ব্র্যান্ড ভ্যালু আরও বাড়তে পারে।