দেশ স্বাধীন হতে তখনও অনেক দেরি। তবে বঙ্গভঙ্গ (Partition Of Bengal) বিরোধী আন্দোলনে উত্তাল তৎকালীন অবিভক্ত বাংলা। ভাইসরয় লর্ড কার্জন (Lord Curzon) বঙ্গভঙ্গের যে নির্দেশ দিয়েছিলেন, তার বিরুদ্ধে চলছে লাগাতার আন্দোলন। ব্যাপক গণ আন্দোলনের মুখে পড়ে শেষ পর্যন্ত ১৯১১ সালের ১২ ডিসেম্বর বঙ্গভঙ্গ রদ করে ইংরেজ সরকার (British Goverment)। তবে তার ঠিক কয়েকমাস আগেই গোটা বাংলার আপামর জনগণকে যা এক সুতোয় বেঁধেছিল তা হল ফুটবল।
সেই বছর আইএফএ শিল্ডের ফাইনালে (IFA Shield Final) ওঠে মোহনবাগান (Mohun Bagan)। ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ ছিল ইস্ট ইয়র্কশায়র রেজিমেন্ট (East Yorkshire Regiment)। আর সেই খেলাকে ঘিরেই যেন একজোট হয়ে ওঠেন গোটা বঙ্গবাসী। ২৯ জুলাই ফাইনাল ম্যাচে ইস্ট ইয়র্কশায়র রেজিমেন্টকে হারিয়ে আইএফএ শিল্ড জেতে মোহনবাগান (Mohun Bagan)। সবুজমেরুন প্রেমীদের কেউ কেউ বলেন, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে বাংলার মানুষকে একজোট করতে এবং তাঁদের ভিতরের জাতিয়তাবোধকে আরও বেশি করে জাগিয়ে তুলতে সেই খেলার ভূমিকাও কিছু কম ছিল না।
পশুচিকিৎসক ছিলেন শিবদাস ভাদুড়ি
১৯১১-র আইএফএ শিল্ডের (IFS Shield) ফাইনালে মোহনবাগানের কাছে ২-১ গোলে পরাজিত হয় ইস্ট ইয়র্কশায়র রেজিমেন্ট (East Yorkshire Regiment)। প্রথমার্ধে এক গোলে পিছিয়ে থেকেও দ্বিতীয়ার্ধে দুটি গোল করে ম্যাচ জেতে মোহনবাগান। গোল করেন অধিনায়ক শিবদাস ভাদুড়ি (Shibdas Bhaduri) ও অভিলাষ ঘোষ (Abhilash Ghosh)।
তবে শিবদাস ও অভিলাষ গোল করলেও খেলার মধ্যে দিয়ে ব্রিটিশদের জবাব দিতে সেইদিন কার্যত জীবনপণ করেছিলেন দলের বাকি সদস্যরাও। শোনা যায় দলের প্রত্যেক সদস্যকে নাকি বেছে বেছে নিয়ে এসেছিলেন শিবদাসই। আর হবে নাই বা কেন, মোহনবাগান ক্লাবের সঙ্গে যে শিবদাস ভাদুড়ির নাড়ির টান। শিবদাস ছাড়া সেই দলে ছিলেন তাঁর দাদা বিজয়দাস ভাদুড়িও। তাছাড়া শিবদাসের আরও দুই দাদা দ্বিজদাস ও রামদাসও খেলতেন মোহনবাগানে। তবে শুধু খেলাই নয়, শিবদাস ছিলেন পশুচিকিৎসকও। যুক্ত ছিলেন কলকাতা ভেটারিনারি কলেজের সঙ্গে।
ব্রিটিশ শিবিরে আতঙ্ক জাগিয়েছিলেন অভিলাষ ঘোষ
অন্যদিকে যাঁর জয়সূচক গোলের মধ্যে দিয়ে আইএফএ শিল্ড প্রথমবার ঘরে তোলে মোহনবাগান সেই অভিলাষ ঘোষ ছিলেন দলের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য। পড়াশোনা করতেন স্কটিশচার্জ কলেজে। পায়ের জাদুতে রীতিমতো সাহেবদের শিবিরে আতঙ্ক জাগিয়ে তুলেছিলেন তিনি। খেলার মাঠে মার খেলে, পালটা মার দিতেও ছাড়তেন না। শোনা যায় ব্রিটিশ ফুটবলাররা নাকি তাঁর নাম দিয়েছিলেন 'কালো দৈত্য'। পরবর্তী সময় ক্লাবের অধিনায়কও হন অভিলাষ। এছাড়া একসময় ব্রিটিশ চা সংস্থার পদস্থ কর্তাও হয়েছিলেন মোহনবাগানের প্রথম আইএফএ শিল্ড জয়ের অন্যতম এই নায়ক।
আরও পড়ুন - মোহনবাগান দিবস : শিলিগুড়িতে সবুজ মেরুন উচ্ছ্বাস