ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি পেলের (Pele) মৃত্যুতে কলকাতাতেও শোকের আবহ। এখানেও তাঁর কোটি কোটি ভক্ত রয়েছে, যারা তাকে এক ঝলক দেখার জন্য যেকোনো কিছু করতে প্রস্তুত। ভারতের সঙ্গে পেলের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। তিনি দু'বার ভারত সফর করেছেন। একবার ফুটবলার হিসেবে আর একবার সুব্রত কাপের প্রধান অতিথি হিসেবে কলকাতায় আসেন তিনি। পেলে কলকাতায় মোহনবাগানের (Mohun Bagan) বিপক্ষে ইডেনে প্রদর্শনী ম্যাচ খেলেছিলেন। দ্বিতীয়বারের বাংলায় এসে দুর্গাপূজায় অংশ নেন।
কলকাতায় একটি ম্যাচ খেলেছেন পেলে
১৯৭৭ সালে ভারতে প্রথমবার পা রেখেছিলেন মহান ফুটবল ফুটবলার পেলে। সেই সময়ে, পেলে, কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে ২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭৭-এ মোহনবাগানের বিরুদ্ধে একটি ম্যাচ খেলেন। তখন তিনি নিউইয়র্ক কসমস দলের হয়ে খেলছিলেন। দর্শকে ভরা ইডেন গার্ডেন্সের মাঠে এই ম্যাচটি ছিল খুবই উত্তেজনাপূর্ণ। তিনবারের ফিফা বিশ্বকাপজয়ী পেলে যদিও তাঁর জাদু দেখাতে পারেননি। শুরু থেকেই সুব্রত ভট্টাচার্য, গৌতম সরকার, পিকে বন্দোপাধ্যায়রা কড়া মার্কিং-এ রেখেছিলেন পেলেকে।
মোহনবাগানের খেলোয়াড়রা সাফল্য পেয়েছেন। পেলে গোল করতে পারেননি। এক সময় মোহনবাগান ২-১ ব্যবধানে ম্যাচ জিতেছিল, কিন্তু কসমস দলকে বিতর্কিত পেনাল্টি দেওয়া হয়। একটি গোল করে ম্যাচটি ২-২ গোলে ড্র করে পেলের ক্লাব।
আরও পড়ুন: 'বিশ্বাসই করতে পারিনি পেলের বিরুদ্ধে খেলব', মনে পড়ছে সুব্রতর
ম্যাচে চার গোল হয়
১৭তম মিনিটে কসমসের হয়ে প্রথম গোলটি করেন কার্লোস আলবার্তো। যদিও এই লিড বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। কিছুক্ষণের মধ্যেই শ্যাম থাপা গোল করে ম্যাচ সমতা ফেরান। প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার ঠিক আগে আকবর দ্বিতীয় গোল করে মোহনবাগানকে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে দেন। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে বিতর্কিত পেনাল্টি থেকে গোল করে ম্যাচ সমতা আনেন চাঙ্গালিয়া। এই ম্যাচটি কলকাতা ময়দানের বিখ্যাত ফুটবল প্রশাসক ধীরেন দে-এর প্রচেষ্টার ফল, যিনি তখন মোহনবাগানের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
বলিউডের একটি ছবিতেও এই ম্যাচের উল্লেখ করা হয়েছিল
সেই সময় পেলের জনপ্রিয়তা ভারতে এতটাই ছিল যে এটি চলচ্চিত্রেও এই ম্যাচের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। এই ম্যাচের দুই বছর পর অর্থাৎ ১৯৭৯ সালে মুক্তি পায় অমল পালেকারের ছবি 'গোলমাল'-এ এই ম্যাচের কথা বলা হয়। ছবিতে, অমল পালেকর যখন একটি কাজের জন্য উৎপল দত্তের কাছে ইন্টারভিউ দিতে যান, তখন তিনি 'ব্ল্যাক পার্ল' সম্পর্কে বলেন, 'শোনা যায় কলকাতায় প্রায় ৩০-৪০ হাজার ফুটবল পাগল জনতা মধ্যরাতে দমদম বিমানবন্দরে পৌঁছে গিয়েছিল।
আরও পড়ুন: ৩টি বিশ্বকাপ-১২৭৯ গোল, বিশ্বফুটবলের প্রথম 'মেগাস্টার'
সাত বছর আগে ফের ভারতে এসেছিলেন পেলে
১৯৭৭ সালে খেলা সেই ম্যাচের পর পেলে আবার ২০১৫ সালের অক্টোবরে ভারত সফর করেন। এ সময় তিনি প্রায় সপ্তাহ কলকাতায় ছিলেন। এ সময় পেলে পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপূজায়ও অংশ নেন। এর সঙ্গে ইন্ডিয়ান সুপার লিগের কিছু ম্যাচও দেখেছিলেন। প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও পেলের সঙ্গে দেখা করেন।
পেলেকে নিয়ে এক অনুষ্ঠানে সৌরভ বলেন, 'আমি তিনটি বিশ্বকাপ খেলেছি। বিজয়ী এবং রানার আপ হওয়ার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। তিনটি বিশ্বকাপ এবং গোল্ডেন বুট জেতা অনেক বড় ব্যাপার।'' পেলে ভারতে আসার আগে বলেছিলেন, 'আমি ভারতে আসার আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছি, কারণ আমি এখানকার মানুষকে খুব পছন্দ করি,' পেলে দেশে ফিরে যাওয়ার সময় বলেছিলেন, 'আমি যদি কোনোভাবে ভারতীয় ফুটবলকে সাহায্য করতে পারি, তবে আমি আবার আসব।'