![শেন](https://akm-img-a-in.tosshub.com/lingo/styles/medium_crop_simple/public/images/story/202203/whatsapp_image_2022-03-04_at_9.51.15_pm.jpeg)
ক্রিকেট ফ্যানদের জন্য আরও একটা হৃদয়বিদারক দিন। যারা অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট সম্পর্কে খোঁজ-খবর রাখেন, তারা নিশ্চয়ই জানেন, মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগেই মৃত্যু হয়েছে আরও এক কিংবদন্তি ক্রিকেটার অস্ট্রেলিয়া উইকেটকিপার রডনি মার্শের। তাঁর মৃত্যুতে টুইটারে মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগেই শোক প্রকাশ করেছিলেন আরেক কিংবদন্তি স্পিনার শেন ওয়ার্ন। আর কয়েক ঘন্টার মধ্যেই নিজেই আচমকা হৃদসঞ্চালন থেমে গিয়ে চিরদিনের মতো ঘুমিয়ে পড়লেন শেন কিথ ওয়ার্ন। নিজেই গোটা বিশ্বকে স্তম্ভিত করে আচমকা ৫২ বছর বয়সে নিভে গেল অস্ট্রেলীয় কিংবদন্তির জীবন প্রদীপ। তাও ছুটির মেজাজে আমোদ-প্রমোদের মধ্যেই বাড়ি থেকে অনেক দূর থাইল্যান্ডের সমুদ্রসৈকতে একটি হোটেলে থমকে গেল লেগ স্পিনের ঘূর্ণি।
রেকর্ডের রাজা শেন ওয়ার্ন
শেন ওয়ার্নের রেকর্ডের দিকে একবার নজর দিতে গেলে তাঁর সমসাময়িক তো বটেই, যে কোনও ক্রিকেটারদের হিংসা এবং জেলাসি ঠিকরে পড়বে। ক্রিকেট কেরিয়ারে এমন কোনও নজির নেই যা তিনি পূরণ করেননি। একমাত্র অনিল কুম্বলে, জিম লেকার এবং আজাজ প্যাটেল এর যৌথ ১০ উইকেট এর রেকর্ড ছাড়া বোলিংয়ের প্রায় সব রেকর্ড তার দখলে।
টেস্টের সাফল্য
শেন ওয়ার্ন প্রায় ১৪৫ টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন। যেখানে তার ২৫.৪১ গড়ে ৭০৮ টি উইকেট রয়েছে। যা মুতাইয়া মুরলিধরনের ৮০০ উইকেটের পর টেস্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট। তাঁর সেরা প্রদর্শন ৭১ রান দিয়ে ৮ উইকেট। এক টেস্টের এক ইনিংসে ৩৭ বার ৫ উইকেট নিয়েছেন। সঙ্গে ১০ বার এমন সুযোগ এসেছে, যেখানে টেস্ট ম্যাচে তিনি বা ১০ বা তার চেয়ে বেশি উইকেট পেয়েছেন।
বল অফ দা সেঞ্চুরির মালিক তিনি
শেন ওয়ার্ন ১৯৯২ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত ক্রিকেট খেলেছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একই সময়ে স্পিনারদের মধ্যে ধারে কাছে তার খুব একটা কেউ ছিল না। একমাত্র টক্কর দিয়েছেন শ্রীলঙ্কার মুতাইয়া মুরালিধরন এবং ভারতের অনিল কুম্বলে। তবু তার কাছে বাকিরা ছিল অনেকটাই ম্লান। তিনি তার ১৫ বছরের সোনালি কেরিয়ারে বহু স্মরণীয় বল এবং উইকেট দখল করেছেন। ১৯৯৩ সালে অ্যাসেজে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে মাইক গ্যাটিং এর বিরুদ্ধে তাঁর করা বলটি এখনও পর্যন্ত বল অফ দ্য সেঞ্চুরি হিসেবে সোনার অক্ষরে খোদিত হয়ে রয়েছে। মাইগ গ্যাটিং এর মত পোড়খাওয়া ব্যাটসম্যানের লেগ স্ট্যাম্প এর বাইরে পিচ করা বল তার সামনে দিয়ে যেভাবে অফ স্টাম্প নড়িয়ে দিয়েছিল, তা দেখে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল বিশ্ব। আর সেদিনই জন্ম হয়েছিল নতুন তারকার।
ভারতের বিরুদ্ধে তিনি খেলেছেন প্রথম টেস্ট
ভারতের বিরুদ্ধে তিনি খেলেছেন প্রথম টেস্ট। অনেকের হয়তো মনে নেই, এই কিংবদন্তি ক্রিকেটারের অভিষেক হয়েছিল ভারতের বিরুদ্ধে সিডনিতে। ১৯৯২ সালের জানুয়ারিতে তিনি ভারতের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টে মাঠে নামেন। তিনি রবি শাস্ত্রীকে নিজের প্রথম শিকার হিসেবে তুলে নেন। তারপর থেকে পিছনে ঘুরে আর দেখতে হয়নি তাঁকে। একের পর এক কীর্তি স্থাপন করে গিয়েছেন। শেন ওয়ার্ন নিজের শেষ টেস্ট খেলেছেন ২০০৭ সালে। ১৯৯৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার vice-captain হন তিনি। কিন্তু তিনি কখনও স্থায়ী ক্যাপ্টেন হতে পারেননি।
ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ছিল দুর্দান্ত
শেন ওয়ার্নে এর ওয়ানডে কেরিয়ার ছিল দারুণ। ১৯৪ টি ওয়ান ডে ইন্টারন্যাশনাল খেলে ২৯৩ উইকেট দখল করেন। এর মধ্যে তার ঘর ২৫.৭৩ এবং স্ট্রাইকরেট ৩৬.৩ ছিল। ওয়ানডে ইন্টারন্যাশনাল ক্যারিয়ারে একবার ৫ উইকেট দখল করেন। পাশাপাশি ১২ বার ৪ উইকেট দখল করার কৃতিত্ব রয়েছে তাঁর।
আইপিএল কেরিয়ার
শেন নিজের অধিনায়কত্বে রাজস্থান রয়্যালসকে প্রথম দফায় চ্যাম্পিয়ন করেন ২০০৮ সালে। প্রথম শ্রেণির আইপিএল ফাইনালে মোকাবিলায় টিম চেন্নাই সুপার কিংসকে ফাইনালে পরাজিত করে প্রথম আইপিএল জিতে নেন তাঁরা। ২৯ টি ম্যাচের আইপিএল কেরিয়ারে তিনি ২৫.৩৯ গড়ে ৫৭ উইকেট দখল করেছিলেন।
বিবাদে ভরা তার কেরিয়ার ও জীবন
শেন ওয়ার্ন এবং বিবাদ একে অপরের পরিপূরক ছিল। গোটা কেরিয়ার জুড়ে ২০০০ সালে ব্রিটিশ এক নারীর সঙ্গে ওয়ার্নের বিরুদ্ধে অশ্লীলতার অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ অনুযায়ী ওয়ার্ন ফোনে ওই নার্সকে অশ্লীল মেসেজ করেছিলেন বলে অভিযোগ। এছাড়া ২০০৩ সালে অ্যাঞ্জেলা নামে একজন ওয়ার্নের বিরুদ্ধে অশ্লীল মেসেজ করার অভিযোগ তুলেছিলেন। ২০০৬ সালে এক ম্যাগাজিনে ২ মডেলের সঙ্গে ওয়ার্নের একটি ফটো প্রকাশিত হয়। মডেলরা দাবি করেছিলেন যে তাদের সঙ্গে জবরদস্তি যৌনতা করেন শেন। জানুয়ারি ২০১৫তে ৪৩ বছর বয়সী এক মহিলা শেনের সঙ্গে নিজের সম্পর্কের কথা সামনে আনেন। ২০০৩ ওয়ার্ল্ড কাপের সময় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচে আগে শেন ওয়ার্নের ড্রাগ টেস্টে যেখানে তাকে পজিটিভ পাওয়া যায়। এরপর তাকে পুরো টুর্নামেন্ট থেকে বের করে দেওয়া হয়।
এই সমস্ত বিবাদের কারণে তিনি যোগ্য হয়েও কোনদিনও অধিনায়কত্বের সম্মান পাননি।