ভালো পারফর্ম করেও ব্রাত্য। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে (ICC World Test Championship Final), ভারতীয় ক্রিকেট দলে (Indian Cricket Team) সুযোগ পেলেন না বঙ্গ উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান ঋদ্ধিমান সাহা (Wriddhiman Saha)। এই প্রসঙ্গেই, এবার মুখ খুললেন প্রাক্তন ক্রিকেটার সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় (Sambaran Banerjee)।
চলতি আইপিএলে (IPL 2023), রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের (Royal Challengers Bangalore) বিরুদ্ধে বাউন্ডারি বাঁচাতে গিয়ে চোট পান লখনউ সুপার জায়ান্টস (Lucknow Super Giants) অধিনায়ক কেএল রাহুল (KL Rahul)। যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকেন এবং তারপর ফিজিওদের কাঁধে ভর দিয়ে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। চোট এতটাই গুরুতর যে, শেষপর্যন্ত আইপিএল থেকে ছিটকে যান রাহুল। সামনেই বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল। সেই ম্যাচকে কেন্দ্র করে যে দল ঘোষণা করা হয়, সেই স্কোয়াডে ছিলেন তিনি। কিন্তু এই চোটের জেরে এবার, বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দল থেকেও বাদ পড়লেন তিনি। সেই সূত্রেই, ঘোরাফেরা করতে শুরু করে ঋদ্ধিমান সাহার নাম।
প্রসঙ্গত, এই আইপিএলে উইকেটের পিছনে বেশ সপ্রতিভ রয়েছেন শিলিগুড়ির পাপালি। শুধু তাই নয়, শেষ ম্যাচে লখনউয়ের (LSG) বিরুদ্ধে বিধ্বংসী একটি ইনিংসও উপহার দেন। তাঁর ৪৩ বলে ৮১ রানের সুবাদে, বড় রানে পৌঁছতে সক্ষম হয় গুজরাত টাইটানস (Gujarat Titans)। বয়স নয়, আসল কথা হল ফিটনেস। বাইশ গজের লড়াইতে এখনও যে তিনি ফুরিয়ে যাননি, প্রমাণ দিলেন ঋদ্ধিমান নিজেই। কিন্তু এতকিছুর পরেও, কেএল রাহুলের বদলে উইকেটকিপার (Wicket-keeper) হিসেবে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দলে সুযোগ দেওয়া হল না তাঁকে। বরং, তাঁর বদলে টিমে নেওয়া হল ঈশান কিশানকে (Ishan Kishan)।
এই প্রসঙ্গে সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় bangla.aajtak.in-কে জানান, ‘প্রথমেই বলি, এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। আইপিএল খেলা হচ্ছে সাদা বলে এবং বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ খেলা হবে লাল বলে। আমি বিশ্বাস করি যে, লাল বলে ঋদ্ধিমান সাহা এখনও সেরা কিপার ভারতীয় ক্রিকেটে। এমনকি, ঋষভ পন্থ (Rishabh Pant) যদি ফিট থাকত, তাহলেও আমি এটাই বলতাম। ঋষভ পন্থের চোটটা অত্যন্ত দুঃখের। এই চোটের পর আমরা স্বভাবতই ভেবেছিলাম যে, ঋদ্ধিমান সাহা টেস্ট ক্রিকেটে ফিরবে। সেইখানে এই বিষয়টি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের। ভরতকে নেবে না, আমরা বুঝতে পেরেছিলাম। দ্বিতীয়ত, ইংল্যান্ডে বল যেইরকম সুইং করে, অনেকসময় উইকেটের পিছনে গিয়ে আবার সুইং করে যায়। সেইখানে দক্ষ কিপার-ব্যাটসম্যান হিসেবে ঋদ্ধিমান সাহা অটোমেটিক চয়েস ছিল।‘
তিনি আরও যোগ করেছেন, ‘সেইসঙ্গে এই বছর আইপিএলে ওর যা ফর্ম দেখলাম, উইকেটের সামনে এবং পিছনে তা এককথায় আউটস্ট্যান্ডিং। সেইখানে কি করে এই ধরণের ব্যাপারটা হয় জানিনা। আমি নিজেও একসময় নির্বাচক ছিলাম। আমি যেটা শুনেছিলাম, আগেই নাকি সিদ্ধান্ত হয়েছে কয়েকজন প্লেয়ার যাঁদের একটু বয়স হয়ে গেছে তাঁদেরকে আর কনসিডার করা হবে না। কারণ, আমরা সামনের দিকে তাকাতে চাই। কিন্তু কথাটা হচ্ছে, বয়সটা কোনও বিষয়ই নয় যদি সে ফিট থাকে।‘
প্রাক্তন জাতীয় নির্বাচক bangla.aajtak.in-কে আরও বলেন, ‘ভারতীয় ক্রিকেটে এইমুহূর্তে যে কয়েকজন ফিটনেস লেভেলের চূড়ান্ত জায়গায় রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ঋদ্ধিমান সাহা একজন। সুতরাং, ফিটনেস নিয়ে কোনও প্রশ্নই আসতে পারে না। অন্তত এই টেস্ট ম্যাচটায় ওকে নিয়ে যাওয়া উচিৎ ছিল। কারণ, এটা বিশ্ব টেস্ট ক্রিকেটের ফাইনাল ম্যাচ। ঈশান কিশান লাল বলে কতটা কি করবে, আমরা কেউ কিছু জানি না। এমনকি, ও পরীক্ষিতও নয়। সুতরাং, আমার কাছে এই বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখের। এটি খুব দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা বাংলার ক্রিকেটের জন্য।‘
সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, ‘সোজাকথা সোজাভাবে বললে অ্যাভয়েড করল। জাতীয় দলের নির্বাচকরা সবাই আমার খুব পরিচিত। তাঁরা কিভাবে দেখেছে ব্যাপারটা আমি জানিনা। ওই জায়গাটায়, হি ইজ দ্যা বেস্ট। ক্রিকেটীয় মেরিটের দিক থেকে দেখলে, খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আমার কাছে ভীষণ দুঃখের।‘
সবমিলিয়ে, ঋদ্ধিমান সাহার ভারতীয় দলে সুযোগ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হওয়া নিয়ে ইতিমধ্যেই ক্রিকেটমহলে শুরু হয়েছে জোর চর্চা। সেই প্রসঙ্গে, আমাদের প্রশ্নের উত্তরে এবার অকপট জবাব দিলেন প্রাক্তন ক্রিকেটার এবং প্রাক্তন জাতীয় নির্বাচক সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়।