মুর্শিদাবাদে ভোট অঙ্কে কী প্রভাবপশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির একাধিক ইস্যুর মধ্যে ক্রমেই প্রকট হয়ে উঠছে ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি। সম্প্রতি সেই আগুনে ঘি ঢেলেছে মুর্শিদাবাদে বাবরি মসজিদের শিলান্যাস। রাজ্যে ক্ষমতায় থাকা তৃণমূলের অভিযোগ, বিজেপির মদতেই এই কাজ করেছে তাদের দলের প্রাক্তন বিধায়ক। সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করার অভিযোগে হুমায়ুনকে সাসপেন্ডও করেছে তৃণমূল। এমন পরিস্থিতিতেই বাবরি মসজিদের শিলান্যাসের পরেই আসাউদ্দিন ওয়েইসির AIMIM-এর সঙ্গে জোট গড়ার দাবি করেছেন হুমায়ুন। এরপর থেকেই শুরু হয়েছে জোর চর্চা। যদি সত্যিই মুর্শিদাবাদে AIMIM-এর সঙ্গে জোট গড়ে হুমায়ুন ভোটের ময়দানে নামেন, তবে তা কি ভোট কাটতে পারে তৃণমূলের?
হিসেব কী বলছে?
তথ্য বলছে, মুর্শিদাবাদে মোট ভোটারদের মধ্যে ৬৭ শতাংশই মুসলিম জনসংখ্যার মানুষ। এই ভোটারদের মধ্যে বেশি সংখ্যক ভোটই এতদিন পেয়ে এসেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলই। কিছুটা ভাগ রয়েছে বাম-কংগ্রেসেরও। কিন্তু প্রশ্ন হল একার ক্যারিশ্মায় বা AIMIM-এর সঙ্গে জোট বেঁধে কতটা ভোট নিজের দখলে রাখতে পারবেন হুমায়ুন কবীর?
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন হুমায়ুনের জয়ের রেকর্ড তাঁর খুব বেশি সপ্রতিভ নয়। ২০১১–তে কংগ্রেসের টিকিটে রেজিনগরে জয়ী হয়ে জোড়াফুলে যোগ দিয়েছিলেন হুমায়ুন। কিন্তু ২০১৩–তে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতীকেই ওই রেজিনগরে উপনির্বাচনে তৃতীয় স্থান পেয়েছিলেন তিনি। এরও ১০ বছর পরে ২০২১–তে হুমায়ুন ফের ভোটে জিতেছিলেন। এই ট্র্যাক রেকর্ডের কারণে হুমায়ুন ২০২৬–এর ভোটে কতটা প্রভাব ফেলতে পারবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন চিহ্ন রয়েছে।
তৃণমূল কী বলছে?
তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ অবশ্য হুমায়ুন কবীরের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, হুমায়ুন কবীর বর্তমানে তাঁর 'পলিটিক্স অফ ডিসিডেন্স' বা দলবিরোধী রাজনীতিকে ঢাকতে ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছেন ৷ সংখ্যালঘুদের আবেগ নিয়ে তিনি খেলা করছেন ৷ তিনি বলেন, "একজন নেতা একবার কংগ্রেসে, একবার নির্দল, একবার বিজেপি, আবার তৃণমূলে যাচ্ছেন—কতবার দল বদলাবেন ? বেসিক বিশ্বাসযোগ্যতাটা কোথায় ?" ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে কুণালের আক্রমণ, "সেবার মুর্শিদাবাদে বিজেপির প্রার্থী হয়েছিলেন হুমায়ুন কবীর ৷ যে বিজেপি বাবরি মসজিদ ভেঙেছিল, আপনি তাদের হয়ে ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন ৷ তাদের দফতরে গিয়ে নেতাদের জড়িয়ে ধরেছিলেন ৷ তখন কী বাবরি মসজিদের কথা মনে ছিল না?"
তৃণমূলের বহরমপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অপূর্ব সরকারও জানিয়েছেন, "মুর্শিদাবাদের কোনও আসনে হুমায়ুন নিজে জয়ী হতে পারবেন না এবং প্রভাবও ফেলতে পারবেন না।"
AIMIM-এর তরফে কী জানানো হল?
AIMIM-এর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সভাপতি ইমরান শোলাঙ্কি অবশ্য এই জোটের জয়ের বিষয়ে আশাবাদী। Bangla.Aajtak.In কে তিনি জানান, "যদি এই জোট হয়, তবে তৃণমূল কংগ্রেস মুর্শিদাবাদে কোনও ফ্যাক্টরই হবে না। যে পরিমাণ দুর্নীতি এই দল করেছে, তাতে হুমায়ুন-AIMIM এর জোট হলে মুর্শিদাবাদে এই দলই জয়ী হবে। তৃণমূলের পাশাপাশি বাম বা কংগ্রেসও দাঁত ফোটাতে পারবে না।"
অন্যদিকে, মুর্শিদাবাদে এক সিপিআইএম নেতার দাবি, AIMIM-হুমায়ুন জোট গড়লেও বামেদের ভোট কাটবে না। বরং তৃণমূলের ভোটের কিছু অংশ তারা পেতে পারে। কারণ কিছু বিক্ষুব্ধ তৃণমূলের ভোট ওই জোট পেতে পারে।