এবার রাজ্যসভার ৭টা আসনের ভোটে সবথেকে দুঃখের ঘটনা কংগ্রেস প্রার্থী প্রদীপ ভট্টাচার্যের বিদায়ের পর সেই আসনটি কংগ্রেস তার নিজের হাতে আর রাখতে পারবে না। অর্থাৎ কংগ্রেস যেহেতু বিগত বিধানসভা নির্বাচনে একটা আসনও জিততে পারেনি সেই কারণে কংগ্রেসের পক্ষে একটা আসনও রাজ্যসভায় পাওয়া কঠিন! তাহলে এই আসনটি বাই ডিফল্ট পেয়ে যেতে পারে বিজেপি। বিজেপি যদি এই আসনে প্রার্থী দেয়, বিজেপির এখন যা বিধায়ক সংখ্যা তাতে এই আসনটি বিজেপির পক্ষে পাওয়া সম্ভব। কিন্তু বাকি ছ'টি আসন তৃণমূল কংগ্রেস এবং তৃণমূল কংগ্রেসেরই থাকবে।
বাকি আসনগুলি কারা পাবে আর কারা পাবে না সেটা আগাম বোঝা মুশকিল। তবে ডেরেক ও ব্রায়েন যেহেতু রাজ্যসভার সংসদীয় দল নেতা এবং তার একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে জাতীয় রাজনীতিতে। সেই কারণে ডেরেক ও ব্রায়েনকে আবার একবারের জন্য নমিনেশন দেওয়াটাই স্বাভাবিক রাজনৈতিক ঘটনা বলে মনে করা হচ্ছে। ঠিক যেভাবে উপনেতা সুখেন্দু শেখর রায়ও পেতে পারেন। যদিও সুখেন্দুবাবু লোকসভার নির্বাচন লড়তে পারেন এই নিয়ে অনেক জল্পনা কল্পনা ছিল। তাঁকে লোকসভার নির্বাচনে যদি নিয়ে যাওয়া হয় তাহলে রাজ্যসভার অন্য কাউকে লোকসভার নির্বাচনে জেতানোর জন্য তাঁকে ২০২৪ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে। কিন্তু সেটা শেষ পর্যন্ত হবে, নাকি সুখেন্দু বাবুকে রাজ্যসভাতে রাখা হবে সেটা একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। যেটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যৌথভাবে নেবেন।
এছাড়া একটি আসন গোয়ার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কংগ্রেস নেতাকে দেওয়া হয়েছিল যেহেতু তিনি গোয়া নির্বাচনের আগে বিধানসভায় এসে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু তার পর তিনি গোয়ার নির্বাচনের সময় নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেননি। তৃণমূলের থেকে দূরত্ব রচনা করে আবার কংগ্রেসে ফিরে যান। তার ফলে সেই আসনটি তিনি ছেড়ে দেন এবং ইস্তফা দিয়ে দেন রাজ্যসভার সদস্য পদ থেকে। এই রাজ্যসভার পদটা ছিল নাট্য ব্যক্তিত্ব অর্পিতা ঘোষের। তাঁকে আবার এই পদটা ফিরিয়ে দেওয়া হবে নাকি তাকে লোকসভা নির্বাচনে লড়ার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হবে এবং রাজ্যসভার এই আসনটিতে অন্য কাউকে আনা হবে সেটা দেখার বিষয়। অর্পিতা ছাড়া অন্যান্য আরো অনেকে আছে যারা এই আসনটা পাওয়ার জন্য মরিয়া।
কে পেতে পারে, কাকে দেওয়া হতে পারে? অন্যান্য যে আসন গুলো রয়েছে তার মধ্যে রয়েছে সুস্মিতা দেব। সুস্মিতা দেবকে আবার দেওয়া হবে? নাকি এবারে লোকসভা নির্বাচনের শিলচর যেটা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সন্তোষ মোহন দেবের আসন ছিল এবং সুস্মিতা দেবের রাজনৈতিক বিচরণ ক্ষেত্র সেখান থেকেই তাঁকে নির্বাচনে জিতে আসার জন্য চেষ্টা করতে হবে? কারণ তিনি শিলচরের পুরসভার চেয়ারপার্সন পর্যন্ত হয়েছিলেন। দায়িত্ব নিয়ে শিলচরের রাজনীতি সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু শিলচর কি তৃণমূলের জেতার জন্য অনুকূল? এই প্রশ্নগুলি কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
এর পাশাপাশি আরও বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে অন্য আসনটি। সেই ব্যক্তিটি হলেন দোলা সেন। দোলা সেন ট্রেড ইউনিয়নের নেত্রী। তাকে জমির রাজনীতিতে নিয়ে আসা হবে নাকি রাজ্যসভায় রাখা হবে। রাজ্যসভায় ডাকাবুকো নেত্রী মানে ওয়েলে এসে বিক্ষোভ দেখান এরকম চরিত্রেরও তো প্রয়োজন আছে। শুধু যাঁরা বক্তৃতা দেন তাঁদের নিয়ে তো শুধু রাজনীতি হয় না। সুতরাং খুব বেশি পরিবর্তন হবে নাকি চমক থাকবে এগুলো এখনো পর্যন্ত বোঝা যাচ্ছে না। তবে শেষ কথা এটা পরিষ্কার বলা যায় যে কংগ্রেস এবং সিপিএম পশ্চিমবঙ্গ থেকে রাজ্যসভার নির্বাচনে বড় অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেল!