যুগ যুগ ধরে অজানাকে জানার চেষ্টায় ব্রতী হয়েছে মানবসমাজ। মানুষের এই গুণই তাকে আর পাঁচটা প্রাণীর থেকে আলাদা করে। এই অদম্য কৌতূহলই সভ্যতার মূল। মানবজাতির সেই কৌতূহলী মনেরই ফল চন্দ্রযান ২। চাঁদের মাটিতে কী আছে, তা জানার চেষ্টায় গিয়েছিল ভারতের যন্ত্র দূত। আর সেই কাজে যে সে ১০০ শতাংশ সফল, তা আরও একবার প্রমাণ করলেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা।
চাঁদের আকাশে সূর্যের বিস্ফোরণের প্রভাব
অবিশ্বাস্য রিডিং তুলে ধরল চন্দ্রযান-২। এই প্রথম চাঁদের গায়ে সূর্যের করোনাল মাস ইজেকশন বা CME র প্রভাব ধরা পড়ল। চন্দ্রযান ২ এর বিশেষ যন্ত্র CHACE 2 এর মাধ্যমে এই রিডিং ধরা হয়েছে।
শনিবার (১৮ অক্টোবর, ২০২৫) এক বিবৃতিতে ইসরো যা জানিয়েছে তার সারমর্ম
চাঁদের দিনের দিকের এক্সোস্ফিয়ারে(চাঁদের একেবারে পাতলা গ্যাসীয় স্তর) হঠাৎ চাপ অনেকটা বেড়ে গিয়েছিল। সূর্যের আগুনের স্রোত চাঁদের গায়ে আছড়ে পড়তেই এই পরিবর্তন ঘটে।
২০২৪ সালের ১০ মে এক বিরল মহাজাগতিক ঘটনা ঘটে। সূর্যপৃষ্ঠ থেকে পর পর কয়েকটি CME বের হয়। সূর্যের এই জ্বলন্ত গোলায় মূলত হাইড্রোজেন ও হিলিয়ামের কণিকা থাকে। এগুলি প্রবল বেগে ছুটে আসে চাঁদের দিকে। CHACE 2 এর মাধ্যমে পর্যবেক্ষণে দেখা গিয়েছে যে, এর প্রভাবে চাঁদের বাতাসে গ্যাসের পরিমাণ হঠাৎ প্রায় দশগুণ বেড়ে গিয়েছে।
চাঁদের এক্সোস্ফিয়ার বলতে বোঝায় একেবারে পাতলা গ্যাসীয় আবরণ। সেটা একেবারেই পৃথিবীর মতো ঘন নয়। সূর্যের আলো, সোলার উইন্ড, কিংবা উল্কাপিণ্ডের ধাক্কায় চাঁদের মাটি থেকে গ্যাস নির্গত হয়। সেগুলিই মিলিয়ে এই এক্সোস্ফিয়ার তৈরি হয়। কিন্তু CME র প্রভাবে গ্যাসের পরিমাণ হঠাৎ বেড়ে যায়। সেটাই তুলে ধরেছে চন্দ্রযান ২।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, আর পাঁচটা মহাজাগতিক ঘটনার সঙ্গে একে গুলিয়ে ফেললে চলবে না। CME যে চাঁদের এক্সোস্ফিয়ারে এমন প্রভাব ফেলতে পারে তা সবাই জানত। কিন্তু বাস্তবে প্রথমবার চাক্ষুষ করা গেল।
ইসরো জানিয়েছে, সূর্যের এই মাস ইজেকশনের প্রভাবে চাঁদের মাটি থেকে আরও বেশি কণা ছিটকে বেরিয়ে আসে দেয়। সেই গ্যাস এসে জমে চাঁদের এই অংশে। আর তার ফলেই চাপ বৃদ্ধি পায়। সেটিই ধরা পড়েছে CHACE 2 এর সেন্সরে।
এই পর্যবেক্ষণ বিজ্ঞানীদের কাছে এক বড় সাফল্য। কারণ এতে চাঁদের উপর সূর্যের প্রভাব আরও গভীরে বিশ্লেষণ করা যাবে। লুনার স্পেস ওয়েদার, অর্থাৎ চাঁদের চারপাশের মহাকাশে সূর্যের কণা ও বিকিরণের প্রভাব নিয়ে যাঁরা গবেষণা করছেন, তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেবে এই পর্যবেক্ষণ।
ইসরো বলছে, ভবিষ্যতে চাঁদে মানুষ দীর্ঘ সময় থাকতে চাইলে, সেক্ষেত্রে এই ধরনের তথ্য খুব জরুরি। কারণ এমন CME ঘটলে চাঁদের বায়ুমণ্ডলের অবস্থা একেবারে পাল্টে যেতে পারে। যন্ত্রপাতি বা মানুষের থাকার জায়গায় এই নিয়ে সমস্যা তৈরি হতে পারে।
২০১৯ সালের ২২ জুলাই শ্রীহরিকোটা চন্দ্রযান ২ উৎক্ষেপণ হয়েছিল। ল্যান্ডার বিক্রম কানেকশন হারালেও, তার অরবিটার এখনও নিঃশব্দে চাঁদের কক্ষপথে কাজ করে চলেছে। চন্দ্রযান ২ জিন্দা হ্যায়। ভারতের জন্য সেটাই সবচেয়ে গর্বের খবর।